চীনে উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণ: চ্যালেঞ্জ ও চালিকাশক্তি
১৮ই ডিসেম্বর চীনা জনগণের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৭৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর, চীনা সরকার সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং চীনে তখন থেকে বড় পরিবর্তন শুরু হয়।
এর পর ৪৫ বছর হয়েছে। চীন আত্ম-উন্নয়নের জন্য বাইরের দুনিয়ার জন্য নিজের দরজা খুলে দেওয়ার পর, গভীরভাবে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একত্রিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বৃদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ "নতুন চালিকাশক্তি" হয়ে উঠেছে। আর, বিগত কয়েক বছর ধরে, চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ (বিআরআই) উদ্যোগের মাধ্যমে অন্যান্য দেশকে উন্নয়নের একই ধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের যাত্রা কিন্তু থেমে নেই, এগিয়ে চলেছে। উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে গভীরভাবে সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া চীনের জন্য একাধারে চ্যালেঞ্জ ও উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি।
"উন্নয়নের অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি বাড়ানোর জন্য আমাদের অবশ্যই সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করতে হবে, গভীর সংস্কার ও উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে, ক্রমাগত সামাজিক উত্পাদন-শক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে, এবং সামাজিক জীবনীশক্তিকে উদ্দীপিত ও উন্নত করতে হবে।" গত ১১ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলনে এ দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে: চীনে "উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ"-এর কাজ কোন কোন খাতে হচ্ছে?
প্রথমত, সম্মেলনে প্রথম বারের মতো "মধ্যবর্তী পণ্যবাণিজ্য" সম্প্রসারণের কথা উল্লেখ করা হয়, যা প্রকৃত কার্যক্রমের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ অংশটি অতীতে প্রায়শই উপেক্ষিত থাকতো। চীনে প্রযুক্তির উন্নতি এবং শিল্পে রূপান্তর ও অগ্রগতির সাথে সাথে, কিছু শিল্পের উত্পাদন-লিঙ্কগুলো ধীরে ধীরে অন্যান্য দেশে স্থানান্তরিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু চূড়ান্ত পণ্যের অংশ ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা যেতে পারে এবং এর মাধ্যমে শ্রমের একটি বৈশ্বিক বিভাজন হতে পারে। এতে আমদানি ও রপ্তানি আরও প্রসারিত হবে এবং আরও বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যাবে। কিছু কিছু শিল্প বা শিল্পের অংশ অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করাও যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পোশাক ও বস্ত্র শিল্প বাংলাদেশ, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করা যেতে পারে। এতে একদিকে, শ্রমব্যয় সাশ্রয় করা যাবে এবং অন্যদিকে ইউরোপে ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে শুল্ক-সুবিধা পাওয়া যাবে।
দ্বিতীয়ত, সম্মেলনে "পরিষেবা বাণিজ্য, ডিজিটাল বাণিজ্য, এবং আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স রপ্তানি" সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স রপ্তানি দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। গত পাঁচ বছরে তা ১৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স বিকাশের প্রবণতা ভালো এবং এর যথেষ্ট সম্ভাবনাও রয়েছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, চীনের আমদানি ও রপ্তানির পণ্যবাণিজ্যে আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্সের অনুপাত ২০১৫ সালে ১% থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৫% হয়। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে, আন্তঃসীমা ই-কমার্স আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১.৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের তুলনায় ১৪.৪% বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ৫ বছরে চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।
তৃতীয়ত, "উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ"-এ টেলি-যোগাযোগ ও চিকিত্সাসেবার মতো পরিষেবা শিল্পের বাজারে প্রবেশ সহজ করার ওপর জোর দিতে হবে। চীনের নিয়মকে অবশ্যই উচ্চ-মানের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিয়মের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে হবে এবং আন্তঃসীমান্ত উপাত্ত প্রবাহ ও সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণের মতো সমস্যাগুলো আন্তরিকতার সাথে সমাধান করতে হবে। চীনকে অবশ্যই একটি বাজার-ভিত্তিক, আইনি, ও আন্তর্জাতিক প্রথম-শ্রেণীর ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
চীনে বিগত ৪৫ বছর ধরে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কার্যক্রমের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে এবং চীনের অর্থনীতি শ্রমব্যবস্থার আন্তর্জাতিক শিল্প-চেইনের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত হয়েছে। উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে সংস্কার ও উন্নয়নের প্রচার করা চীনের আধুনিকায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণ শুধুমাত্র চীনকে একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সফল দেশগুলোর মধ্যে একটি করে তুলবে না, বরং উচ্চ-মানের উন্নয়নের জন্য একটি বিশাল চালিকাশক্তিও সরবরাহ করবে।