চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজ নিজ সাফল্য পরস্পরের জন্য সুযোগও
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজ একটি ব্যাপারের উপর বিশেষ দৃষ্টি রাখছে - চীন ও যুক্তরাষ্ট্র নেতাদের বৈঠক। স্থানীয় সময় ১৫ নভেম্বর (বুধবার) চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর ফিলোলি গার্ডেনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দুদেশের রাষ্ট্রপ্রধান চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের কৌশলগত, সামগ্রিক ও দিকনির্দেশক বিষয়গুলো এবং বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন। এটি হলো ৬ বছর পর প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং গত বছরের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের বৈঠকের পর দুই প্রেসিডেন্টের প্রথম মুখোমুখি বৈঠক।
বিশ্বের বৃহৎ দুটি দেশ হিসেবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষিক সম্পর্ক। পাশাপাশি এটি সবচেয়ে জটিল, সংবেদনশীল ও চ্যালেঞ্জিং সম্পর্কও বটে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক শুধু দুই দেশের মানুষের সঙ্গে নয় বরং বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একবার বলেছিলেন, ভালো চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কেবল দুদেশ ও দুদেশের জনগণের জন্য নয়, বিশ্বের জন্যও কল্যাণকর হবে। চীনা-মার্কিন সম্পর্ক ভালো করার ১০ হাজার কারণ আছে, তবে খারাপ করার কোনও কারণ নেই।
বিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কও এর থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে বিবেচনা করতে হবে। বর্তমান বিশ্ব গত এক শতাব্দীতে দেখা যায়নি এমন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এবার বৈঠকের শুরুতে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দ্বিোক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের যে পথনির্দেশ দিয়েছেন, তার মূল হলো যোগাযোগ ও সহযোগিতা। সংঘাত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বর্তমানে দুদেশের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় নয় এবং দু দেশের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণও নয়। এই পৃথিবীর প্রয়োজন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজ নিজ সাফল্য পরস্পরের জন্য সুযোগও। বালি দ্বীপের বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট সি আবার জোর দিয়ে বলেছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মূল বিষয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়; বরং মূল বিষয় হলো দায়িত্বশীল দুটি বৃহৎ দেশ হিসেবে একসাথে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস, সংস্কৃতি, সামাজিক অবস্থা, উন্নয়নের পর্যায় এবং জাতীয় স্বার্থে রয়েছে নানা পার্থক্য। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে তবে অবশেষে সামনে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। কারণ মতভেদের পাশাপাশি দুদেশের মধ্যেও রয়েছে অভিন্ন স্বার্থ ও মূল্যবোধ। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখে আরও বেশি মানুষ উপলব্ধি করেছেন, নানা ক্ষেত্রে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা দুদেশের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং বিশ্বের জন্য সেটা কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
চীনা ও মার্কিন জাতি দুটোই বাস্তববাদী জাতি। চীনারা বিশ্বাস করে কাজ কত কঠিন হোক না কেন, হাত দিলে সফল হওয়া যায় এবং মার্কিনিরা মনে করে কথার চেয়ে কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বালি দ্বীপ থেকে সান ফ্রান্সিসকো পর্যন্ত - দু নেতার বৈঠকে যেসব মতৈক্য হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুষ্ঠু উন্নয়নের সঠিক পথে ফিরে আসবে।