বাংলা

সানফ্রান্সিসকোয় শুরু হওয়া অ্যাপেক সম্মেলনকে আগের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া উচিত্

CMGPublished: 2023-11-14 15:50:05
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

নভেম্বর ১৪: এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা বা অ্যাপেকের ৩০তম শীর্ষসম্মেলন ১১ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে শুরু হয়েছে। অ্যাপেক নেতৃবৃন্দের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি, ঊর্ধ্বতন আর্থিক কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীদের বৈঠক এবং অ্যাপকের সিইও’র শীর্ষসম্মেলনও এ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে। ২০ হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারীরা এই সপ্তাহে নানা বৈঠকে বা সভায় উপস্থিত হচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ১২ বছর পর আবারও অ্যাপেকের আয়োজন করলো। এ বছর অ্যাপেকের ৩০তম বার্ষিকী। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৩ সালে প্রথমবার অ্যাপকের সভা আয়োজন করেছিল এবং অ্যাপেক বৈঠককে দ্বৈত মন্ত্রীদের বৈঠকের ব্যবস্থা থেকে একটি অনানুষ্ঠানিক নেতাদের বৈঠকের স্তরে উন্নীত করেছিল। আয়োজক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের ভূমিকা পালন করবে? অ্যাপেকের ভবিষ্যত উন্নয়নে কী প্রভাব পড়বে? আসলে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি পরীক্ষাও বটে।

জানা গেছে, সানফ্রান্সিসকো এবারের অ্যাপেক বৈঠকের আয়োজনকে অনেক গুরুত্ব দেয়, ১৯৪৫ সালে এখানে জাতিসংঘের সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর একে “মহাকাব্যিক ঘটনা” বলে অভিহিত করা হয়। এই সম্মেলন শুধুমাত্র বাণিজ্য, পর্যটন ও বিনিয়োগের মাধ্যমে সানফ্রান্সিসকোতে ৫ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা আনবে না, বরং অনেক মানুষ এখানে বিশ্ব অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং আন্তঃসংযোগ প্রচারে তাদের প্রত্যাশা ও উচ্চ সমর্থনও ব্যক্ত করেছেন। যাই হোক, সান ফ্রান্সিসকোতে উত্সাহ খুব বেশি হলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বায়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উদারীকরণ এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বিষয়ে মার্কিন মনোভাবের প্রেক্ষিতে এই বৈঠক সফল হবে কিনা, তা যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হবে।

অ্যাপেক-এর পূর্ণাঙ্গ রূপ- এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন বা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা। এটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগিতা ফোরাম, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণকে উন্নীত করার একটি অনানুষ্ঠানিক সংলাপ ফোরাম এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সর্বোচ্চ স্তরের আন্তঃসরকারি অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা।

১৯৮৯ সালের ৫ থেকে ৭ নভেম্বর এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ক্যানবেরায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতীক।

১৯৯৩ সালের জুন মাসে এর নাম পরিবর্তন করা হয় এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা। একই বছরের নভেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে তৃতীয় মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং “সিউল ঘোষণাপত্র” গৃহীত হয়। এতে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপেকের উদ্দেশ্য, কাজের আওতা, অপারেশন পদ্ধতি, অংশগ্রহণের ফর্ম, সাংগঠনিক কাঠামো এবং এর সম্ভাবনাসহ নানা বিষয় নির্ধারণ করা হয়।

সংস্থাটি বলেছে যে, এটি বাধ্যতামূলক কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, খোলা সংলাপ এবং সব অংশগ্রহণকারীদের মতামতের ওপর সম্মানের ভিত্তিতে কাজ করে। তাদের সিদ্ধান্তগুলো ঐকমত্য ও সংলাপের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবী ভিত্তিতে পৌঁছানো হয়।

দেখা যাচ্ছে, বাধ্যতামূলক নয়, খোলা সংলাপ, সম্মান, স্বেচ্ছাসেবী মনোভাব- এসবই অ্যাপেকের সফলতার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সব সদস্যদের বৈচিত্র্যকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করা এবং বৈচিত্র্য ও সম্প্রীতির ভিত্তিতে সহযোগিতা সম্প্রসারণ ও গভীরতর করা হয়। অ্যাপকের ২১টি সদস্য প্রশান্ত মহাসাগরের উভয় পাশে এশিয়া, ওশেনিয়া, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপজুড়ে বিস্তৃত। তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থা, উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায় এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। যেহেতু অ্যাপেক বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দেয়, নমনীয়তা মেনে চলে, সমতা, পারস্পরিক সুবিধা, ঐক্যমত্য এবং স্বায়ত্তশাসনের নীতি অনুসরণ করে, ফলে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্রমশ অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে।

অ্যাপেক সদস্যদের বৈচিত্র্যের কারণে সংস্থাটিকে সর্বদা পার্থক্য ও দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হয়ে থাকে। কীভাবে এসব সমস্যা সমাধান করা যায় এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখা যায়- তা সর্বদা সব পক্ষের জন্য পরীক্ষা।

অ্যাপেক সবসময়ই অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই বড় লক্ষ্যের দিকে মনোনিবেশ করে এবং অন্যান্য বিষয় থেকে হস্তক্ষেপ এড়ানোর চেষ্টা করে। ফলে সদস্যদের প্রকৃত পরিস্থিতি এবং অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে বের করা সম্ভব হয়।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn