‘বেল্ট এন্ড রোড’ এর দশম বার্ষিকী: পর্যালোচনা ও নতুন যাত্রা
একটি উদ্যোগ ১০ বছরে একটি দেশের জন্য কী কী আনতে পারে? ১৭ ও ১৮ অক্টোবর চলমান তৃতীয় ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ ফোরামটি লোকেদের পর্যালোচনা ও ভবিষ্যতের আশা সৃষ্টির সুযোগ দিয়েছে।
১০ অক্টোবর বাংলাদেশে পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রথম অংশটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। তাতে ৮০ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ১.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেলটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পানির নিচের টানেল। সম্পূর্ণ হওয়ার পরে আগে ৪-ঘন্টার পথ এখন ২০ মিনিটে সম্পন্ন হবে। কিছুদিন আগে, ঢাকা বিমানবন্দর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) চালু হয়েছে। এতে চীনা কোম্পানিগুলি বিনিয়োগ, নির্মাণ এবং পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং দেশের সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অবকাঠামো প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি। পদ্মা পানি পরিশোধন কেন্দ্র ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে আরেকটি প্রকল্প। এই প্রকল্পটি ৪ মিলিয়ন মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারবে।
‘বেল্ট এন্ড রোড’ উদ্যোগ চালু হওয়ার পর থেকে গত দশ বছরে চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার অর্জনগুলি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করলে, এটি সত্যিই একটি চমকপ্রদ রিপোর্ট। তা শুধুমাত্র বাংলাদেশের অবকাঠামোকে সম্পূর্ণ নতুন চেহারা দেয় না, বরং আরও গুরুত্বপূর্ণ, এটি সত্যিকার অর্থে স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নত করতে পারে। পদ্মা নদী পার হয়ে যাতায়াতকারী কতজন মানুষ ট্রেনে নদী পার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন? ঢাকার শহুরে যান চলাচলের অবস্থার উন্নতি হবে বলে কতজন আশা করনে? কতজন মানুষ বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার কথা ভাবতেন?
"আপনি যদি ধনী হতে চান তবে আগে রাস্তা তৈরি করুন।" চীনা জনগণের মুখে মুখে চলে আসা এই সহজ কথাটি কেবল ধনী হওয়ার জন্য রাস্তা নির্মাণের অনুশীলনের সংক্ষিপ্তসার নয়, বরং একটি উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষাও বটে। শুধুমাত্র অবকাঠামো উন্নত হলেই- তার ভিত্তিতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং জনগণের জীবন-জীবিকার উন্নয়ন ও উন্নতি ঘটানো যায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নতুন গতি আসে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ বাস্তবায়নের পর থেকে শুধুমাত্র অবকাঠামো নির্মাণই বিশ্ব বাণিজ্যের ব্যয় ১.৮৪% কমেছে, অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য ২.৮% থেকে ৯.৭% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশ্ব বাণিজ্য ১.৭% থেকে ৬.২% বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক আয় ০.৭% থেকে ২.৯% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে, এটি প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার লাভ করবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং সহ-নির্মাণকারী দেশগুলির ৭.৬ মিলিয়ন মানুষকে চরমদারিদ্র্য থেকে মুক্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এসব ফলাফল একটি "স্বর্ণ নিয়ম" এর ভিত্তিতে আবর্তিত হচ্ছে। তা হলো “যৌথ আলোচনা, নির্মাণ ও উপভোগ করা”। এই ধারণার অধীনে, সব সহযোগিতা প্রকল্পগুলি সব পক্ষের পরামর্শ এবং যৌথ অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। যাতে সব পক্ষ উন্নয়নের সুযোগ এবং ফলাফলগুলি ভাগ করতে পারে। প্রতিটি দেশের নিজস্ব উন্নয়নের লক্ষ্য এবং অগ্রাধিকার রয়েছে এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা-সহ এর সম্ভাব্যতা অবশ্যই গবেষণা এবং বহু-দলীয় আলোচনার পর গৃহীত হতে হবে। বাংলাদেশের এ ধরনের অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং অবশ্যই বিভিন্ন অংশীদার দেশের উপর নির্ভর করে তার উন্নয়ন লক্ষ্য বা পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন হবে না।
চূড়ান্ত বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ হল সহ-নির্মাণকারী দেশগুলিকে তাদের আধুনিকীকরণ লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার একটি সুযোগ। উন্নয়নের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া থেকে শুরু করে যৌথভাবে মানবসম্পদ গড়ে তোলা, ক্রস-বর্ডার ই-কমার্স’সহ নতুন ব্যবসায়িক ফর্ম্যাট অন্বেষণ থেকে শুরু করে উন্নয়ন পরিকল্পনা সংযোগ করা পর্যন্ত, চীন তার নিজস্ব উন্নয়ন অভিজ্ঞতা দিয়ে বিশ্বের সামনে নতুন সুযোগ নিয়ে এসেছে এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সব দেশের সাথে চেষ্টা করছে।
চীনে প্রবাদে বলা হয়, "আপনি যদি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই অন্যদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে; আপনি যদি নিজেকে এগিয়ে নিতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই অন্যদেরকে সাহায্য করতে হবে।" এই পারস্পরিক উপকারের পদ্ধতি হল টেকসই উন্নয়ন পদ্ধতি। গত ১০ বছরে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ এর যৌথ নির্মাণ বিশ্বে গভীর পরিবর্তন এনেছে। এটা কিভাবে পরবর্তী পর্যায়ে বিকাশ হবে? তৃতীয় ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ সম্মেলনে পারিস্পরিক যোগাযোগ, সবুজ উন্নয়ন এবং ডিজিটাল অর্থনীতির মতো ক্ষেত্রগুলিতে ফোকাস করা হবে। প্রাসঙ্গিক দেশগুলি "অতীত পর্যালোচনা করবে এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকাবে", যৌথভাবে মানবজাতির ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্য পরামর্শ দেবে।