ফুকুশিমার সিফুড খাওয়ার অভিনয় করলে, পারমাণবিক দূষিত পানির অপরাধ কি মুছে যাবে?
সেপ্টেম্বর ৪: ফুকুশিমার পামাণবিক দূষিত পানি অব্যাহতভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে ঢেলে ফেলার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সমাজ জাপান সরকারের সমালোচনা করেছে। জাপানের আচরণ ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং প্রাকৃতিক ও সামুদ্রিক পরিবেশের ওপর দীর্ঘ প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে।
প্রথমত, পরমাণু দূষিত পানি সমুদ্রে ফেলা হলে সামুদ্রিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যবস্থায় সৃষ্ট সম্ভাব্য হুমকি উপেক্ষা করা যায় না
‘সাগর হচ্ছে পৃথিবীর জীবন-শৃঙ্খলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, প্রচুর পরিমাণ পরমাণু দূষিত পানি সমুদ্রে ফেলা সরাসরি সামুদ্রিক জীবের স্বাস্থ্য ও প্রাণীজগতের পরিবেশকে প্রভাবিত করে। এ ধরনের আচরণে ব্যাপক সামুদ্রিক প্রজাতির মৃত্যু ঘটার আশঙ্কা আছে এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য তা মারাত্মক ক্ষতিকর। সেই সঙ্গে, মত্স্য শিল্প ও আশেপাশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে।’
দ্বিতীয়ত, জাপান সরকারের এই সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক সমাজ ব্যাপক উদ্বেগ জানিয়েছে ও বিরোধিতা করেছে।
‘আন্তর্জাতিক সমাজের সদস্য হিসাবে, জাপানের উচিত বিশ্বের পরিবেশ এবং অন্যান্য দেশের স্বার্থ সঠিকভাবে বিবেচনা করা, যাতে আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে সহযোগিতা করে যৌথভাবে আরও সুষ্ঠুভাবে পরিবেশ রক্ষা করার একটি সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়। খোলা ও স্বচ্ছ যোগাযোগ চালানো এবং তথ্য ভাগাভাগি করাও এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র শর্ত। পারমাণবিক দূষিত পানি সমুদ্রে ফেলার চূড়ান্ত প্রস্তাব সম্পর্কে জাপান সরকারের উচিত আরও সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক সমাজকে সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ঝুঁকি পর্যালোচনার ফলাফল দেওয়া এবং বিভিন্ন পক্ষের পেশাগত মতামত ও প্রস্তাব গ্রহণ করা। খোলা ও স্বচ্ছ তথ্য ভাগাভাগি করলেই কেবল জনসাধারণের আস্থা ও বোঝাপড়া বাড়বে।’
তবে, এই পটভূমিতে জাপানি প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুকুশিমার সিফুড খাওয়ার অভিনয় করেছেন। এ থেকে স্পষ্ট যে, পারমাণবিক দূষিত পানি থেকে সৃষ্ট সমস্যা ও দায়িত্ব ছোট করে দেখানোর অপচেষ্টা করেছে জাপান। এ ধরণের আচরণ শুধু পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুতর প্রভাব ফেলবে না; বরং এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজের বিরোধিতার মনোভাবে কোনো গুরুত্ব দেয় নি জাপান সরকার।
‘প্রধানমন্ত্রী কিশিদার এই আচরণ স্পষ্টতই জনসাধারণের গুরুত্বারোপ ও উদ্বেগের অবমাননা। পারমাণবিক দূষিতপানি সমুদ্রে ফেলা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও জটিল সমস্যা, যা আন্তর্জাতিক সমাজের স্বার্থ ও ভবিষ্যত্ পরিবেশের সঙ্গে জড়িত। জাপান সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক সমাজের সমালোচনা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা। শুধুমাত্র খাওয়ার অভিনয় করে বাস্তবতা গোপন করা উচিত নয়। নিঃসন্দেহে ফুকুশিমার সিফুডে পারমাণমিক দূষিত পানির প্রভাব রয়েছে, তাই খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি উপেক্ষা করা যাবে না। সিফুড পরীক্ষা করে স্থানীয় মত্স্যশিল্প এবং ভোক্তাদের পরমাণু দূষিত পানির দীর্ঘকালীন প্রভাব নাকচ করা যাবে না, আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্বেগ ও বিরোধিতাও পরিবর্তন করা যাবে না। একটি দেশের নেতা হিসেবে কিশিদার উচিত তাঁর দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব প্রদর্শন করা। তাঁর আচরণ শুধু হতাশাজনকই নয়, বরং পারমাণবিক দুর্যোগের পর ফুকুশিমা বাসিন্দাদের বাড়িঘর পুনর্গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর আরও এক ধরণের আঘাতও বটে’।
বৈশ্বিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যবস্থার সুস্থতা রক্ষা করার জন্য দেশটির পারমাণবিক দূষিত পানি নিঃসরণের পরিকল্পনা পুনরায় পর্যালোচনা করতে জাপান সরকারকে আহ্বান জানাই আমরা। সেই সঙ্গে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও পরামর্শের মাধ্যমে যৌথভাবে সবচেয়ে উপযুক্ত সমাধানের প্রস্তাব খুঁজে বের করতে হবে, যাতে মানবজাতি ও পরিবেশের দীর্ঘকালীন স্বার্থ নিশ্চিত করা যায়।