মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য বিশ্ব মতামতের প্রতিফলন: চীন
জুন ১৯: সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা র্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞাকে ভয় পায় না। যেসব দেশ বাংলাদেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাদের কাছ থেকে কোন কিছু না কিনতেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েন বিন সম্প্রতি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের জনগণের শক্তিশালী অবস্থানই নয়, বরং তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের বড় অংশের মনের কথা বলেছেন।
বাস্তবতা হলো যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, নামিবিয়ার প্রেসিডেন্ট হাগে গেইনগব এবং কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো প্যারিলাসহ বেশ কয়েকটি দেশের শীর্ষনেতারা প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও আধিপত্যবাদের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
সারা বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞার কারণে অগণিত মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে ২০ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটেছে। তবে শান্তিপূর্ণ পুনর্বাসনের সন্ধিক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র নিজের দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শতাধিক কোটি মার্কিন ডলারের রাষ্ট্রীয় সম্পদ জব্দ করেছে, যা কোটি কোটি আফগান জনগণকে দুর্ভোগে ফেলেছে।
১৯৯০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরাকের তেলের আয়ের পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে ইরাকের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ আজও ১৯৯০ সালের সমান হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে, যার ফলে দেশটিতে গুরুতর গণজীবিকার সংকট তৈরি হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মারাত্মক ভূমিকম্প ঘটার পর নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারী সরঞ্জাম ও উদ্ধার যন্ত্রের অভাবে অনেক উদ্ধারকারী কেবল হাত দিয়ে ধ্বংসাবশেষ খনন করেছেন। মহামারি চলাকালে ২০২০ সালে ইরান তিনবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী ভেকসিন ক্রয় করতে চেয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞার কারণে তা পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র কিউবার কাছে ভেন্টিলেটর বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কারণে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ায় অক্ষম হয়েছে কিউবা ।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়া কথিত সন্ত্রাস-দমন ও মানবাধিকার রক্ষাসহ নানা অজুহাতে একতরফা অন্য দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে আসছে। তা সেসব দেশের জনগণের বেচে থাকা এবং উন্নয়নের অধিকার গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে।
মার্কিন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ কাফ দৌলাহ ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের দ্যা ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেন, একতরফা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের হিসেবে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে দেশটি ২০টি দেশের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। এর মধ্যে অধিকাংশই দরিদ্র দেশ। নিষেধাজ্ঞার কারণে সে সব দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাত বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক দেশ এমনকি তার নাগরিকদেরকে খাদ্য ও ওষুধ প্রদান করতে পারছে না। অধিকাংশ নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত লক্ষ্য অর্জন করেনি কিন্তু টার্গেটকৃত দেশের মানুষের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।