বাংলা

প্রসঙ্গ: চীন-হন্ডুরাস সম্পর্ক ও বেইজিংয়ের বন্ধুর সংখ্যা বৃদ্ধি

CMGPublished: 2023-06-12 14:03:38
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

জুন ১১: সম্প্রতি হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট আইরিস জিওমারা কাস্ত্রো সারমিয়েন্টো (Iris Xiomara Castro Sarmiento) চীন সফরে আসেন। এটি কেবল প্রেসিডেন্ট কাস্ত্রোর চীনে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর নয়, হন্ডুরাসের যে-কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম চীন সফর।

সম্প্রতি চীনের সাথে হন্ডুরাসের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে হন্ডুরাসের তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণে। প্রায় তিন মাস আগে, চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে হন্ডুরাস। আর জুন মাসের শুরুর দিকে হন্ডুরাসে চীনা দূতাবাস খোলা হয়েছে। হন্ডুরাসও চীনে তার দূতাবাস খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

হন্ডুরাসের এডুয়ার্ডো এনরিকে রেইনা সম্প্রতি বলেন, দু’দেশ শীঘ্রই বাণিজ্যিক আলোচনা শুরু করবে। তিনি বলেন,

“এটি হন্ডুরাসের জন্য একটি খুব ইতিবাচক সম্পর্কের সূচনা। কারণ, আমি মনে করি, হন্ডুরাসের জনগণ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে অবগত। সম্প্রতিক বছরগুলোয় ল্যাটিন আমেরিকায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কাস্ত্রো সরকার হন্ডুরাসের সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সম্মান দেখানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, এটি হন্ডুরাসকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাবে।”

গত দশ বছরে, দশটি দেশ তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে তথাকথিত ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক’ ছিন্ন করেছে এবং চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন বা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। ল্যাটিন আমেরিকায়, হন্ডুরাস ছাড়াও, এ তালিকায় নিকারাগুয়া, এলসালভাদর, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ও পানামা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু একটি দেশ এতে খুশি নয়। আর সে দেশটির নাম যুক্তরাষ্ট্র।

ঠিক যখন চীন ও হন্ডুরাস কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন ‘তাইওয়ানে মার্কিন সমিতি’ এক-চীন নীতির সমর্থনের বিনিময়ে অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য চীনকে অভিযুক্ত করে। ২০১৮ সালে, প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও পানামাকে চীনের সাথে ব্যবসা না-করার জন্য সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তাঁর হুঁশিয়ারি পানামা কানে তোলেনি।

‘মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ’ ধারণার প্রবক্তা হিসাবে, চীন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ দফা নীতির ভিত্তিতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে; সমতা, উন্মুক্ততা ও সহযোগিতার বৈশ্বিক অংশীদারিত্বকে গভীরতর ও প্রসারিত করছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের মাধ্যমে চীন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতায চালিয়ে যাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে এ থেকে সুফল পাওয়া গেছে; অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। যেমন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীন দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের অষ্টম সর্বাধিক জনবহুল দেশ বাংলাদেশের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়েছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাংলাদেশের ‘সোনার বাংলা’ উন্নয়ন-কৌশলের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

গত বছর বাংলাদেশ-চীন অষ্টম মৈত্রী সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়। চীনের সহায়তায় নির্মিত পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সারা দেশে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। গত বছরের জুন মাসে প্রায় ৮ বছর ধরে নির্মাণকাজ চলার পর, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। চীন রেলওয়ে ব্রিজ ব্যুরো সেতুটি নির্মাণ করেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ সরাসরি এই সেতুর সুবিধা পাবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, পদ্মা সেতু আঞ্চলিক অর্থনীতির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।

চীন স্পষ্ট করে বলে আসছে যে, তাইওয়ান চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং চীনে সকল অংশকে অবশ্যই একত্রিত হতে হবে। চীনের সাথে সম্পর্ক গড়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে ‘এক-চীননীতি’ মেনে চলা। এই পূর্বশর্ত মেনে বেইজিংয়ের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা সর্বশেষ দেশ হচ্ছে হন্ডুরাস। বিশ্বে এখনও গুটিকতক দেশ রয়ে গেছে, যারা এই নীতির বিরুদ্ধে। অদূর ভবিষ্যতে তারাও হন্ডুরাসের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, এমন আশা করা যায়।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn