বাংলা

জি-৭ হিরোশিমা শীর্ষসম্মেলন: বিশ্বকে বিভক্ত করা ছাড়া, নতুন আর কী আছে?

CMGPublished: 2023-05-23 14:47:47
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

১৯ মে, দুটি বিশ্ব-মানের শীর্ষসম্মেলন একযোগে শুরু হয়। চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষসম্মেলন চীনের সি’আন শহরে এবং জি-৭ শীর্ষসম্মেলন জাপানের হিরোশিমায় শুরু হয়।

জি-৭ শীর্ষসম্মেলন চলাকালে, জাপানি জনগণ "জি-৭ চাই না", "যুদ্ধ চাই না", "ছলনা ও অহংকারপূর্ণ জি-৭ চাই না”, ইত্যাদি শ্লোগানলেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে হিরোশিমা সম্মেলনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে টোকিওর জনাকীর্ণ শিনজুকু স্টেশনের কাছে একটি বিক্ষোভসমাবেশ করে। সমাবেশের আয়োজক তোশিমারু ওগুরা বলেন, জি-৭ হিরোশিমা শীর্ষসম্মেলন শান্তি আনবে না, বরং আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়াবে। একদিকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা, অন্যদিকে বিশ্বকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা, বিশ্বকে অশান্তির দিকেই ঠেলে দেবে।

প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর জি-৭ শীর্ষসম্মেলনের তুলনায়, চলতি বছরের জি-৭ শীর্ষসম্মেলনে নতুন কিছু নেই। গত বছরের মতোই এবারও সম্মেলনে চীন ও রাশিয়াকে মোকাবিলা করার কথাই বিশেষভাবে বলা হয়েছে। তারা "একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার" কথা বলে, কিন্তু তারা যা করছে তা আন্তর্জাতিক শান্তিকে বাধাগ্রস্ত করছে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষুন্ন করছে, এবং অন্যান্য দেশের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তারা একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষকে উষ্কে দিচ্ছে কিয়েভে সামরিক সহায়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে; অন্যদিকে চীনকে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বলছে। তারা চীনের পারমাণবিক শক্তির স্বাভাবিক বিকাশের সমালোচনা করে, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে, এবং "তাইওয়ান প্রণালীর স্থিতাবস্থায় একতরফা পরিবর্তনের বিরোধিতা করার" কথা বলে। প্রকৃতপক্ষে, জি-৭ নিজেকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে, কিন্তু "তাইওয়ানের স্বাধীনতার" বিরোধিতা করে না। এর অর্থ "তাইওয়ানের স্বাধীনতা"-কে উত্সাহিত করা এবং তাইওয়ান প্রণালীর পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলা। পাঁচটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রের মধ্যে চীনই একমাত্র দেশ যে প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না-করার অঙ্গীকার করেছে। চীনের পারমাণবিক অস্ত্রের স্কেল চীনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম স্তরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। চীনের পারমাণবিক অস্ত্রসংক্রান্ত নীতিমালা পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। জি-৭-এর অভিযোগ চীনকে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়ার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।

একদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের স্বাভাবিক পারমাণবিক উন্নয়নের সমালোচনা করে, অন্যদিকে জাপানের পারমাণবিক পয়ঃনিষ্কাশনকে সমর্থন করে এবং জাপানকে "পাঁচ বছরের মধ্যে একটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হতে" অনুমতি দেয়। হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে, ব্লুমবার্গের মতে, ফুমিও কিশিদা পারমাণবিক বর্জ্যপানি অপসারণ নিয়ে আলোচনা করতে জি-৭ শীর্ষসম্মেলনের স্থান হিসাবে হিরোশিমাকে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু আসল চিত্র হল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় আরও পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে এবং "অভিন্ন শত্রু" ঠেকাতে মার্কিন "পারমাণবিক ছাতা" প্রসারিত করার অপচেষ্টা করেছে।

আর, একই সময়ে অনুষ্ঠিত প্রথম চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে ৮২টি সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব চুক্তির লক্ষ্য, জ্বালানি ও অবকাঠামোর মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন-মধ্য এশিয়া বাস্তব সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা এবং ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সংযোগ বাস্তবায়ন করা। জি-৭-এর দ্বন্দ্ব এবং বিরোধের বাড়াবাড়ির সাথে তুলনা করলে, চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষসম্মেলন বাস্তব সহযোগিতার ফলাফলের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে প্রদর্শন করেছে যে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কেমন হওয়া উচিত।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিস ২০ মে বলেছিলেন, জি-৭-এর উচিত প্রধান দেশগুলোর সাথে জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্নয়ন ইস্যুতে "সক্রিয় সংলাপ এবং সহযোগিতা" করা। তিনি জি-৭-কে বিশ্বকে বিভক্ত না-করার আহ্বান জানান।

জি-৭ যত বেশি গোষ্ঠী-সংঘাতকে কাজে লাগায়, ততই সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে; যত বেশি নিষেধাজ্ঞা নির্বিচারে ব্যবহার করে, অন্যান্য দেশগুলো তত বেশি জি-৭ থেকে দূরে থাকার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবে। চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তনে পরিপূর্ণ এই যুগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সংঘাত ও হস্তক্ষেপের চাইতে স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতা বেশি জরুরি। চীন সর্বদা শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের ধারণাকে সমর্থন করে, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলে, এবং মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন কল্যাণের সমাজ এবং নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn