চীন-মধ্য এশিয়া সহযোগিতায় দ্রুত উন্নয়ন প্রসঙ্গ
মে ২১: সম্প্রতি চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন সফলভাবে আয়োজিত হয়। শীর্ষ সম্মেলনের সময় চীন মধ্য-এশিয়ার পাঁচটি দেশের সঙ্গে ‘চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের সিআন ঘোষণা’ ও ‘চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের সাফল্যতালিকা’সহ সাতটি বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং শতাধিক বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতাচুক্তি স্বাক্ষর করে। আসলে, চীন ও মধ্য-এশিয়ার বন্ধুত্ব হাজার বছরের। বর্তমানে দু’পক্ষের সহযোগিতা দ্রুত উন্নত হচ্ছে। প্রথম চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন হলো একটি নতুন ঐতিহাসিক মাইলফলক।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবারের শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর মূল ভাষণে কী ধরনের মধ্য-এশিয়া গড়ে তোলা হবে, সে বিষয়ে ‘চার দফা প্রস্তাব’ পেশ করেছেন; কীভাবে চীন-মধ্য এশিয়া অভিন্ন কল্যঅণের সমাজ গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়ে ‘চার দফা প্রস্তাব’ পেশ করেছেন; এবং চীন ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে কীভাবে সহযোগিতা উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে ‘আট দফা প্রস্তাব’ পেশ করেছেন।
নতুন যুগে, এবারই চীনের শীর্ষ নেতা প্রথম বারের মতো আন্তর্জাতিক সমাজের সামনে মধ্য-এশিয়ার ব্যাপারে চীনের নীতি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করেছেন। এতে আবারও বলা হয়েছে যে, একে অপরের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, ভূখন্ডের অখণ্ডতা এবং জাতীয় মর্যাদাকে অত্যন্ত সম্মান করার ভিত্তিতে, ঐক্য ও সংগ্রামের মাধ্যমে, অভিন্ন উন্নয়ন, অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভাষণ মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোর কাছে প্রশংসিতও হয়েছে।
এবারের শীর্ষ সম্মেলন হলো জয়-জয় সম্মেলন। ‘অভিন্ন কল্যঅণের সমাজ’ হলো এবারের শীর্ষ সম্মেলনের সবচেয়ে শক্তিশালী অনুরণন। ‘সিআন ঘোষণা’ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘চীন-মধ্য এশিয়ার অভিন্ন কল্যঅণের সমাজ’ গঠনের জন্য একটি সাধারণ নথির আকারে লেখা হয়েছিল। চীন পৃথক পৃথকভাবে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে মধ্য-এশিয়ার পাঁচটি দেশের সঙ্গে অভিন্ন কল্যঅণের সমাজ গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়। এটি হলো মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের ধারণার বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় বাস্তবায়ন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীন ও মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোর সহযোগিতা হলো পারস্পরিক কল্যাণের আঞ্চলিক ও জয়-জয় সহযোগিতা; এটা কোনো জিরো-সাম-গেইম নয়। আর তাই এই সম্মেলন ফলপ্রসূ হয়েছে। মধ্য-এশিয়া দীর্ঘকাল ধরে বিদেশী হস্তক্ষেপে ভুগছে, সেজন্য পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা এগিয়ে নিতে অংশীদারদের প্রয়োজন। চীন আঞ্চলিক দেশগুলোর প্রভাবশালী অবস্থান এবং স্বাধীন একীকরণ প্রক্রিয়াকে আন্তরিকভাবে সম্মান করে। সি চিন পিং তাঁর ভাষণে বলেন, বিশ্ব একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ, সম্প্রীতিময় ও ইন্টারঅপারেবল মধ্য-এশিয়া চায়। চীন এ ধরণের মধ্য-এশিয়া গড়ে তোলার দৃঢ় সমর্থক।
মধ্য-এশিয়ার দেশগুলো স্থলবেষ্টিত ও সমুদ্রে তাদের প্রবেশাধিকার নেই, যা মূলত এসব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অন্যতম বড় বাধা। কিন্তু চীনের সহযোগিতায় ইউরোপ ও পূর্ব-এশিয়া সংযুক্ত হতে পারে; অসুবিধাগুলো পরিণত হতে পারে সুবিধায়।
কোনো দেশের সঙ্গে চীনের সহযোগিতা একচেটিয়া নয়। চীন-মধ্য এশিয়া ব্যবস্থার মাধ্যমে শুধুমাত্র স্থানীয় সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন হবে না, বরং উন্নয়নের ধারা প্রতিবেশী দেশগুলোতেও অনুভূত হবে। আসলে দুটি বড় দেশ হিসাবে চীন ও রাশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্য-এশিয়ার সাথে আরও বেশি করে সহযোগিতা করছে, যা একটি প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি ‘চীন ও রাশিয়া প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে’ মর্মে পশ্চিমা দেশগুলোর বিদ্বেষপূর্ণ প্ররোচনাকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে।
বস্তুত, যেকোনো আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য সহায়ক-ব্যবস্থা জরুর। চীন এই অঞ্চলের সাধারণ সমৃদ্ধির জন্য সহায়ক-পদক্ষেপের সমর্থক। মধ্য-এশিয়া ছাড়াও, বিশ্বের সব অঞ্চলের জন্য চীনের নীতি একই। সাধারণ বৈশ্বিক উন্নয়ন কীভাবে অর্জন করা যায়, ‘চীন-মধ্য এশিয়া অভিন্ন কল্যাণের সমাজ’-এর অভিজ্ঞতা সমগ্র বিশ্বকে তা দেখিয়েছে।