বাংলা

কৃষি উন্নয়নের পথে এভাবেই চলতে চায় চীন

CMGPublished: 2022-12-27 15:43:53
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের কেন্দ্রীয় কৃষি ও গ্রামীণ কর্মসম্মেলন গত ২৩ থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। চীনের সর্বোচ্চ স্তরের কৃষি-সম্পর্কিত সম্মেলন হিসাবে, এতে চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন "শক্তিশালী কৃষিদেশ" নির্মাণের লক্ষ‍্যকে সামনে রেখে, আগামী বছরের জন্য কৃষি, গ্রামাঞ্চল ও কৃষক উন্নয়নের "রোড ম্যাপ" তৈরি করা হয়।

খাদ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্যের স্থিতিশীল ও নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করা এই বছরের কৃষি উন্নয়নের একটি মূল লক্ষ‍্য, এবং এটি কেন্দ্রীয় গ্রামীণ কর্মসম্মেলনের মূল বিষয়বস্তুও

নতুন যুগে চীনে খাদ্যের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করা, সর্বদা চীনা জনগণের প্লেটে খাবারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, এবং দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীন আত্মবিশ্বাসী। এই প্রেক্ষাপটে, "নতুন দফা ৫০ বিলিয়ন কিলোগ্রাম শস্য উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ" প্রস্তাব করা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

কিভাবে খাদ্য উৎপাদন-ক্ষমতা বাড়ানো যায়? জমির মাধ‍্যমে শস্য বাড়ানো এবং প্রযুক্তির মাধ‍্যমে শস্য বাড়ানো হচ্ছে মূল বিষয়। চলতি বছরের শেষ নাগাদ, চীনে ৬.৭ কোটি হেক্টরের উচ্চ-মানের খামারভূমি প্রস্তুত হবে এবং ২০২৫ ও ২০৩০ সালের মধ্যে, যথাক্রমে ৭.১৬ কোটি হেক্টর এবং ৮ কোটি হেক্টর উচ্চ-মানের খামারজমি প্রস্তুত হবে। উচ্চ-মানসম্পন্ন খামারের জমি প্রস্তুত হলে, প্রতি ০.০৬৭ হেক্টরে শস্যের উৎপাদন-ক্ষমতা ১০%-২০% বৃদ্ধি পাবে এবং গড় খরচ ৫০০ ইউয়ান কমবে।

বীজ হল কৃষির "চিপস"। প্রধান খাদ্যশস্যের কথা বিবেচনা করলে, চীনের ধান ও গম হল স্ব-নির্বাচিত জাত।

চীনে প্রতি ০.০৬৭ হেক্টর জমিতে ধানের ফলন বিশ্বের গড় পরিমান থেকে ৭০% বেশি হয়, এবং প্রতি ০.০৬৭ হেক্টর জমিতে গমের ফলন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া ইত্যাদি গম রপ্তানিকারক দেশগুলির ১.৭ গুণ। তবে, স্বাধীন মেধাস্বত্ব অধিকারসহ, উন্নত জাতের ভুট্টা ও সয়াবিনের ফলনে এখনও উন্নত দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে চীন। অতএব, চীনে বীজ শিল্পে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকেও প্রচার করতে হবে, এবং দৃঢ়ভাবে নিজেদের হাতে শীর্ষস্থানীয় শস্যের জাতগুলিকে ধরে রাখতে হবে।

নতুন যুগে একটি শক্তিশালী কৃষিপ্রধান দেশ গড়ার জন্য গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনকে এগিয়ে নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, জনশক্তি বরাদ্দ, সম্পদ বরাদ্দ, এবং আর্থিক সম্পদ বরাদ্দে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিল্প-সহায়ক নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে এবং "স্থানীয় বৈশিষ্ট‍্যময় পণ্য" উন্নয়ন করতে হবে।

গ্রামীণ এলাকায় বৈশিষ্ট্যযুক্ত শিল্পের বিকাশ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রস্তাবিত একটি লক্ষ‍্য। যদি খাদ্য উৎপাদন খাতে উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্যের নিরাপদ ও স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করা জাতীয় নিরাপত্তার জন‍্য প্রয়োজন, তাহলে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিল্পের বিকাশ বিভিন্ন স্থানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। কৃষকদের আয়, সেইসাথে আমাদের দারিদ্র্যবিমোচনের অর্জনগুলিকে আরও একীভূত ও প্রসারিত করাও প্রয়োজন।

নতুন যুগে একটি শক্তিশালী কৃষিপ্রধান দেশ গড়ার জন্য গ্রামীণ আধুনিকীকরণ একটি অন্তর্নিহিত প্রয়োজনীয়তা।

একটি শক্তিশালী কৃষিপ্রধান দেশ গড়ার প্রক্রিয়ায়, আমাদের কেবল কৃষির সমস্যা সমাধান এবং একটি শক্তিশালী কৃষি গড়ে তুললে হবে না, গ্রামীণ সমস্যা এবং কৃষকদের সমস্যাও সমাধান করতে হবে। কৃষিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলকে সুন্দর ও কৃষকদের সমৃদ্ধ করতে হবে।

এই তিনটি লক্ষ্য অর্জন নির্ভর করে প্রযুক্তি ও সংস্কারের ওপর। এক্ষেত্রে চাই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং গভীরতর সংস্কার।

বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মূল বিষয় হল বিদ্যমান বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সংস্থানগুলিকে একীভূত করার জন্য নিজস্ব শক্তির উপর নির্ভর করা, বিশেষ করে সরকারী খাতের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সংস্থানগুলিকে একীভূত করা। গভীরতর সংস্কারের জন্য অবশ্যই গ্রামীণ সম্পদ, বিশেষ করে ভূমি সম্পদের ওপর জোর দিতে হবে। একদিকে, ভূমি ব্যবস্থার সংস্কারকে আরও গভীর করা প্রয়োজন। প্রথমত, এটি অবশ্যই স্থিতিশীল হতে হবে। দ্বিতীয় দফা ভূমি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, আরো ৩০ বছরের জন্য অপরিবর্তিত থাকবে; দ্বিতীয়ত, গ্রামীণ জমির যৌথ মালিকানা পরিবর্তন করা যাবে না। আরেকটি দিক হল ভূমি সম্পদ পুনরুজ্জীবিত করা এবং সর্বোত্তম বরাদ্দ নিশ্চিত করা। কৃষকদের সংস্কারের কল‍্যাণ উপভোগ করতে দিতে হবে।

চীনের কৃষি উন্নয়নের পথকে ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং কঠিন ঐতিহাসিক কাজ। এই প্রক্রিয়ায়, আমাদের নিজেদেরকে চীনের জাতীয় অবস্থার উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, অধিক লোক ও কম জমির বাস্তবতা মেনে নিতে হবে, কৃষি সভ্যতার ঐতিহাসিক পটভূমিতে এবং মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সুরেলা সহাবস্থানের ভিত্তিতে চীনের জন্য উপযোগী আধুনিক কৃষির পথে যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn