১০ কোটি শরণার্থীর দুর্বিষহ জীবনের দায় কার?
জুন ২৭: ‘কেপার নাউম’ চলচ্চিত্রে দেখা যায়, সিরিয়া থেকে লেবাননে আশ্রয় নেয়া জেইন আল রাফিয়া বলছেন: “আমি বালিশে ঘুমাতে পারবো বলে আশা করি”। আমরা যারা শান্তিপূর্ণ দেশ ও অঞ্চলে বাস করি, তারা রাফিয়ার এই প্রত্যাশার পিছনে কত ব্যাকুলতা লুকিয়ে আছে, তা হয়তো বুঝতে পারবো না। কিন্তু এ সহজ প্রত্যাশাটিই শরণার্থীদের জন্য অনেক কিছু। আরও দুঃখের কথা যে, গত সপ্তাহের ২২তম বিশ্ব শরণার্থী দিবসে রাফিয়ার মতো শরণার্থীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। কেন এত মানুষ গৃহহীন হয়েছে? কোনো উপায় থাকলে, কেউই শরণার্থী হতে চায় না।
“আমার আটবছর বয়সে, যুক্তরাষ্ট্র আমার জন্মস্থলে এসেছে। তারা যাদের হত্যা করেছে, এখনো তাদের আমার মনে আছে। মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং বাড়িঘর ধ্বংস করেছে। আমি কখনো সে দৃশ্য ভুলবো না,” এ কথাগুলো বলেছেন আফগানিস্তানের শরণার্থী নাজিবুলাহ।
“মার্কিনীদের আসার পর আমাদের সকলের খাদ্য ফুরিয়ে যায়, পেট্রল শেষ হয়ে যায়। খুব মন্দায় জীবন-যাপন শুরু করি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ,” কথাগুলো বলছিলেন সিরিয়ার শরণার্থী বশির।
আর যুক্তরাষ্ট্রে হাইতির অভিবাসী আদ্রিয়ানবলছিলেন, “আমরা চোর নই। মার্কিন অভিবাসন কর্মীরা কেন হাতকড়া পড়িয়ে আমাদের আটকে রাখে এবং আমাদের আঘাত করে,”
তাদের অভিযোগ প্রমাণ করে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তারা গৃহহীন হননি। মানুষের কারণে তাদের বর্তমান অবস্থা তৈরি হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শরণার্থী সমস্যার জন্য দায়ী।
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, কুখ্যাত ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত যুদ্ধগুলো ৪ কোটি ৯০ লাখ থেকে ৬ কোটির মতো লোককে শরণার্থী বানিয়েছে। এর মধ্যে কেবল আফগানিস্তানে শরণার্থী হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। ২০০১ সালের বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালনের কয়েক মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে আফগানিস্তানে হামলা এবং ২০০৩ সালে ইরাকে মারাত্মক অস্ত্র থাকার অজুহাতে ইরাকে যুদ্ধ শুরু করেছিল। পরে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেছে এবং ব্যাপক পরিমাণে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবারই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অজুহাতে যুদ্ধ চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয়দের দুরাবস্থায় রেখে চলে যায়। স্থানীয়রা জর্জরিত হয় সীমাহীন গৃহহীনতা, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক মন্দায়। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, কুখ্যাত ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত যুদ্ধগুলো ৪ কোটি ৯০ লাখ থেকে ৬ কোটির মতো লোককে শরণার্থী বানিয়েছে। এর মধ্যে কেবল আফগানিস্তানে শরণার্থী হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।