বাংলা

আজকের টপিক: সুখী জীবন চীনাদের সবচেয়ে বড় মানবাধিকার

মানবাধিকারPublished: 2022-06-21 18:30:11
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

যখন মানবাধিকারের কথা আসে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কথা ভাবি। এই কারণে নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র সর্বোত্তম মানবাধিকার সুরক্ষার দেশ, বরং সে সবসময় অন্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে "চিন্তা" করার "ভান" করে এবং কোনো কোনো দেশকে শাস্তি দিতে মানবাধিকারকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক সমাজে মানবাধিকারের বিষয়বস্তু ও শ্রেণীবিভাগ নিয়ে বিভেদ আছে। মানবাধিকার সম্পর্কে জানাশোনা ও মানবাধিকারের চর্চাও সব দেশে এক নয়। তবে, মানবাধিকারের কিছু মৌলিক বিষয় মোটামুটি একই। এর মধ্যে রয়েছে মানুষের জীবন, স্বাধীনতা, সম্পত্তি, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের অধিকার। যাই হোক, কোন মানবাধিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা দেশ এবং সংস্কৃতি অনুসারে পরিবর্তিত হয়। কারণ, বিভিন্ন দেশের মানুষ বিভিন্ন পরিবেশে বাস করে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে বিকশিত হয়। তাই মানবাধিকারের নির্দিষ্ট উপলব্ধিও ভিন্ন ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্যেরও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

উদাহরণস্বরূপ, মহামারীর সময়ে, মুখোশ পরতে হবে কি না এবং মানুষকে মুখোশ পরতে বাধ্য করা উচিত কি না, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজে অনেক বিতর্ক হয়েছে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে: কেন চীনারা এতো সচেতনভাবে মুখোশ পরে? প্রাচীনকাল থেকেই চীনারা মনে করে যে, একটি সুস্থ শরীর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনাদের খাদ্যাভ্যাস তাই অন্য অনেকে দেশের চেয়ে আলাদা। অনেক বিদেশী একে "অদ্ভুত"-ও মনে করে থাকেন।

অতএব, চীনা জনগণের মূল্যবোধ অনুযায়ী, মাস্ক পরলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম। এতে নিজেকে রক্ষা করা সহজ। এতে অন্যদের রক্ষা করাও সহজ। তাহলে কেন পরবো না? এই কারণেই প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের "মানুষের জীবন সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যকে প্রথমে রাখার" বক্তব্য চীনা জনগণ সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে। কারণ, এটি চীনা সভ্যতার নৈতিক ধারণার মূর্ত প্রতীক। চীনারা মনে করে, মানুষের জীবন আকাশের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি জীবনের প্রতি চীনাদের শ্রদ্ধা ও মানবতাবাদী চেতনার শ্রেষ্ঠ প্রমাণ। আর চীনা কমিউনিস্ট পার্টি শুধু এ কথা মুখেই বলেনি, করেও দেখিয়েছে।

তাই চীনা জনগণের জন্য স্বাস্থ্যকরভাবে বেঁচে থাকার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাদের নিজেদের উন্নয়ন। তাই চীন তার নিজস্ব কাজ করে চলেছে, তার নিজস্ব ক্ষমতার বিকাশ ও উন্নতি করছে। এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কেন চীন এতো দ্রুত উন্নয়ন করতে পেরেছে। চীনারা নিরাপদ ও সুখী জীবনযাপন করতে চায়। চীনাদের জন্য, সুখী জীবন সবচেয়ে বড় মানবাধিকার।

সিনচিয়াং-এর লোকেরাও নিরাপদ এবং সুখী জীবনযাপন করতে চায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে নির্মাণ ও উন্নয়নের পর, সিনচিয়াং বেশ উন্নত হয়েছে। ঘন ঘন সন্ত্রাসী হামলা এবং সামাজিক শৃঙ্খলার প্রায় পতনের দ্বারপ্রান্ত থেকে আজকের শান্তি ও সুখে ফিরে আসা সিনচিয়াংয়ের পক্ষে সহজ ছিল না। সিনচিয়াংয়ের তুলা এখন বিশ্বের মোট উত্পাদনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দখল করে আছে। পলিসিলিকনের জন্য সিনচিয়াং বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্পাদনভিত্তি। ফটোভোলটাইক শিল্পের মৌলিক উপাদান এবং এর সৌর-গ্রেড পলিসিলিকন বিশ্বব্যাপী উত্পাদনের প্রায় ৪৫% সিনচিয়াংয়ে হয়। যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত "উইঘুর জোরপূর্বক শ্রম প্রতিরোধ অ্যাক্ট" ব্যবহার করে সিনচিয়াং থেকে পণ্য আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি আমেরিকান কোম্পানির সরবরাহকারীদেরও সিনচিয়াংয়ের পণ্য ও কাঁচামাল কেনার অনুমতি দিতে দেশটি রাজি নয়। এটি সিনচিয়াংয়ের শিল্পকে দমন করা এবং চীনকে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন এবং শিল্পচেইন থেকে বাদ দেওয়ার জন্যই করছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি সিনচিয়াং-এর মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে সত্যিই চিন্তিত হতো, তবে কি সিনচিয়াংয়ের মানুষের জীবিকার উত্স বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিত? সিনচিয়াংয়ের জনগণকে তাদের সুখী জীবনের স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত করতে পারতো?

আমরা যদি সারা বিশ্বের প্রতিনিধিদের মানবাধিকার বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাই, তাহলে আমরা মানবাধিকারের বিভিন্ন উপলব্ধি, মানবাধিকার আদায়ের বিভিন্ন পথ এবং মানবাধিকারের বিভিন্ন মূল্যবোধ দেখতে পাব। আমরা হয়তো বড় পার্থক্য অনুভব করতে পারি, এবং আমরা গঠনমূলক আলোচনা ও বিনিময় করব, কারণ আমাদের সহানুভূতি রয়েছে এবং আশা করি যে অন্যান্য দেশে মানবাধিকার আরও উন্নত হবে। কিন্তু আমরা যা করব না এবং সবচেয়ে বেশি অবজ্ঞা করব তা হল আমাদের নিজস্ব মান দিয়ে অন্যান্য দেশের মানবাধিকারকে বিচার করা। মানবাধিকারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা তো দূরের কথা। কারণ, এভাবে মানবাধিকারের আসল মূল্য সবচেয়ে কম প্রতিফলিত হয়।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn