বাংলা

লুবান ওয়ার্কশপ: চীন-মিসর বৃত্তিমূলক শিক্ষাসহযোগিতার দৃষ্টান্ত

CMG2024-05-31 22:18:13

মিসরের রাজধানী কায়রোর আইন শামস ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা লুবান ওয়ার্কশপের কথা উঠলেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন।

"লুবান কর্মশালায় আমরা প্রকৃত ইঞ্জিন ও ব্রেকিং সিস্টেমগুলোকে বিচ্ছিন্ন, মেরামত, ও একত্রিত করার মাধ্যমে, যে তাত্ত্বিক জ্ঞান শিখেছি, তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারি।" করিম মোহাম্মদ ওয়ার্কশপে গাড়ির ইঞ্জিন মেরামতের কাজ করার সময় এ কথা বলেন।

করিম মোহাম্মদ আইন শামস বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিভাগের একজন ছাত্র। তিনি অনুশীলনের জন্য লুবান ওয়ার্কশপে আসা পছন্দ করেন। কারণ, এখানে "উচ্চ-দক্ষতা শেখা ও উচ্চ-স্তরের প্রশিক্ষণ" পাওয়া যায়। এ কারণে, ক্যাম্পাসের বাইরের প্রশিক্ষণ-কার্যক্রমে তিনি অন্যদের তুলনায় ভালো পারফর্ম করতে পারেন। ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান বাজারে নিজের অবস্থান নিয়ে তিনি যথেষ্ট আশাবাদী।

২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে, চীন মিসরীয় যুবক-যুবতীদের বৃত্তিমূলক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য, লুবান ওয়ার্কশপ স্থাপনের প্রস্তাব করে। পরবর্তী কালে, থিয়ানচিন লাইট ইন্ডাস্ট্রি ভোকেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল কলেজ এবং থিয়ানচিন কমিউনিকেশনস ভোকেশনাল কলেজের মতো প্রতিষ্ঠান, মিসরে দুটি লুবান কর্মশালা তৈরির কাজ শুরু করে। এর মধ্যে, একটি কর্মশালা আইন শামস বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে, চীনের একটি দল কর্মশালার সরঞ্জাম ইনস্টলেশন ও কমিশনিং সম্পূর্ণ করতে মিসরে যায় এবং কর্মশালা প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক, মধ্যবর্তী ও উন্নত প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রম রচনা করতে মিসরীয় শিক্ষকদের সাথে আলোচনায় বসে।

আইন শামস ইউনিভার্সিটির লুবান ওয়ার্কশপটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর চালু হয়। প্রায় ১২০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে এ কর্মশালাটিতে নিউমেরিকল নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম প্রয়োগ ও রক্ষণাবেক্ষণ, নতুন শক্তি প্রয়োগ প্রযুক্তি, এবং অটোমোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রযুক্তির জন্য তিনটি আলাদা প্রশিক্ষণকক্ষ রয়েছে। এগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সর্বশেষ প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত।

আইন শামস ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ও লুবান কর্মশালার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অ্যাডেল সাব্বাগে বলেন, ‘প্রশিক্ষণার্থীদের প্রয়োজনীয় অপারেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সরঞ্জাম ও সিস্টেমের সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বাড়াতে, প্রশিক্ষণকক্ষে বিশেষভাবে ডিজাইন করা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়।”

সাব্বাগ বলেন, কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আইন শামস ইউনিভার্সিটি ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা আছেন। তার দৃষ্টিতে, চর্চার সাথে তাত্ত্বিক জ্ঞানকে সমন্বিত করা খুবই জরুরি, বিশেষ করে, এনার্জি, মেশিনারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং-সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের জন্য। কর্মশালা তাদের দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করতে এবং তাদেরকে কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তুত করতে পারে। এ ছাড়াও, লুবান ওয়ার্কশপ প্রতিষ্ঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ল্যাবরেটরির ঘাটতি দূর করেছে, শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের জন্য যা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ।

সাব্বাগ বিশ্বাস করেন যে, কর্মশালার সাফল্য শুধুমাত্র চীনের প্রদত্ত আধুনিক সরঞ্জাম থেকে উপকৃত হওয়া নয়, বরং কর্মশালার প্রশিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা চীনের প্রণীত উচ্চ-মানের প্রশিক্ষণ-পরিকল্পনা থেকেও উপকৃত হচ্ছেন। কর্মশালায় বর্তমানে যেসব প্রশিক্ষক আছেন, তাদের সবাই মিসরীয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ। “তারা শিক্ষাদানের কাজ শুরু করার আগে, চীনে পাঁচ সপ্তাহব্যাপী নিবিড় প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা উচ্চ-স্তরের দৈনিক কোর্স ও গ্রীষ্মকালীন প্রশিক্ষণের জন্য দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং লুবান ওয়ার্কশপের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছেন।”

থিয়ানচিন লাইট ইন্ডাস্ট্রি ভোকেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল কলেজের ডিন লি ইউন মেই এক বাক্যে লুবান ওয়ার্কশপ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য তুলে ধরেন: "মানুষকে মাছ দেওয়ার চেয়ে, মাছ ধরতে শেখানো ভালো।" তাঁরা মডেল প্রতিষ্ঠা, মান প্রণয়ন, সম্পদ উন্নয়ন, ও শিক্ষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, মিসরের স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য, প্রয়োজনীয় প্রতিভা সৃষ্টি করে।

চীনা ও মিসরীয় অংশীদাররা পারস্পরিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে এবং কর্মশালার টেকসই উন্নয়ন ও গুণগত মান উন্নত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। "বর্তমানে আমরা একটি সরঞ্জাম আপগ্রেড প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছি; বিশেষ করে, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপের সরঞ্জাম, যেখানে তেলচালিত গাড়িকে বৈদ্যুতিক গাড়িতে রূপান্তর করা হবে। উপরন্তু, কর্মশালাটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতাও প্রসারিত করবে, যাতে চীন থেকে আসা উচ্চ-মানের প্রকল্পগুলো আরও বেশি শিক্ষার্থীর উপকার করতে পারে।" কর্মশালার ভবিষ্যত প্রসঙ্গে এ কথা বললেন সাব্বাগ।

লি ইউন মেই বলেন, চীন ও মিসর দু’দেশের বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সংযোগ উন্নত করার উপায় অন্বেষণ করছে এবং চীনের ‘শিল্প-শিক্ষা একীকরণ’ এবং ‘স্কুল-এন্টারপ্রাইজ সহযোগিতার মডেল’ মিসরে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।

বস্তুত, "লুবান ওয়ার্কশপ 'বেল্ট অ্যান্ড রোড' উদ্যোগের আওতায় প্রতিষ্ঠিত একটি প্রযুক্তিকেন্দ্র এবং চীন-মিসর বৃত্তিমূলক শিক্ষাসহযোগিতার একটি সুন্দর মডেল ও উদাহরণ।"

Close
Messenger Pinterest LinkedIn