বাংলা

সিনচিয়াংয়ের ‘চিয়াও মা’ মুরগি

CMG2024-05-10 16:04:57

এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও সিচাং-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর সিচাং সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিনচিয়াং নিয়ে কথা বলব।

‘চিয়াও মা’ তথা পিপারকর্ন চিকেন হল চীনের সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের হুই জাতির এক ঐতিহ্যবাহী খাবার। এ খাবার সবাই পছন্দ করেন। কেন করেন? বলা মুশকিল। চমত্কার স্বাদ ও ঝালের জন্য সম্ভবত। আপনি যখন এই খাঁটি পিপারকর্ন চিকেন খাবেন, তখন মুখে অসাড় অনুভূতি টের পাবেন। আর প্রচণ্ড ঝালের কারণে আপনার মাথা ঘামতে থাকবে। ঝাল হলেও, সুস্বাদু এই খাবারের লোভ সামলানো মুশকিল। ঠিক এ কারণেই এটি এখনও জনপ্রিয়। স্বতন্ত্রতার কারণেই লোকেরা খাওয়াটা বন্ধ করতে পারে না।

পিপারকর্ন চিকেনের ইতিহাস সম্পর্কে আমরা ছোটবেলা থেকেই বড়দের কাছ থেকে শুনে আসছি। পিপারকর্ন চিকেনের উত্পত্তি ১০০ বছর আগে। হুই জাতির একজন সুং সাহেব এই খাবার প্রথম প্রস্তুত করেন। পরে পিপার চিকেন সাধারণ মানুষের বাড়ির একটি সাধারণ উপাদেয় খাবার হয়ে ওঠে। হুই জাতির গৃহিণীদের তৈরি পিপারকর্ন চিকেনের বিভিন্ন স্বাদ রয়েছে।

পিপার চিকেন সিনচিয়াংয়ে শত বছর ধরেই জনপ্রিয়। ‘বিখ্যাত চায়নিজ স্ন্যাক’ নামেও এটি সুপরিচিত। সিনচিয়াংয়ে সবচেয়ে খাঁটি পিপারকর্ন চিকেন কোথায় পাবেন? তা কেউ জানেন না। পিপারকর্ন চিকেন কখন সিনচিয়াংয়ের বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে? তাও কেউ জানে না। তবে এটি সত্যিই অত্যন্ত জনপ্রিয়।

পাবলিক ডাইনিং টেবিলে পিপারকর্ন চিকেনের ইতিহাস আসলে এতো দীর্ঘ নয়। এ প্রসঙ্গে আসবে হুই জাতির ‘চিন’ পরিবারের পিতা ও পুত্রের কথা। ১৯৯৫ সালের গ্রীষ্মকালে দিনের বেলায় বিশ্রাম নিতেন লোকেরা। দুই-তিনজন করে রাতের বাজারে যেতেন। খাবারের দোকানগুলো দ্রুত ব্যস্ত হয়ে পড়তো। এ অবস্থা এখনও অনেকের কাছে অবিস্মরণীয়। ‘চিন’ পরিবারের পিতা ও পুত্র দু’জনই তাদের ৫ বছরের গবেষণার মাধ্যমে পিপারকর্ন চিকেন নিয়ে সকলের সামনে হাজির হন। এই নাইট বাজারে পা দেওয়ার প্রথম বছরে, তাদের ব্যবসা প্রতিদিনই খারাপ ছিল। কখনও কখনও তারা স্টল বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কেবল একটি মুরগির পা বা ডানা বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু পাশের মশলাদার চিকেন স্টলে লম্বা লাইনের দিকে তাঁরা প্রায়ই আকুলভাবে তাকিয়ে থাকতেন। পরের বছর, তাঁরা তাদের কৌশল পরিবর্তন করেন। শুরুর দিকে গ্রাহকদের বিনামূল্যে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এই কৌশল খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়। কিছুদিন পর দেখা গেল লোকজন পয়সা দিয়েই খাবারটি কিনে খাচ্ছেন। এমনকি, তাঁরা শুধু নিজেই দোকানে এসেছেন, তা নয়, বরং নিজেদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদেরকে নিয়ে এসেছেন। এভাবেই এক থেকে দশ, দশ থেকে শতাধিক মানুষের মধ্যে তাদের দোকানের ও খাবারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

শুরুর দিকে, বাপ-ছেলেও চিন্তা করেননি যে, একদিন তাদের ব্যবসা এমন চাঙ্গা হয়ে উঠবে এবং তাদের দোকানের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে। বর্তমানের ‘ফাং লাও হান’ তথা ‘ফ্যাট ওল্ড ম্যান’ দোকানটির প্রোটোটাইপ তাদের হাতেই গড়া। জ্বি, এই দোকানের ‘ফ্যাট ওল্ড হ্যান পিপার চিকেন’ তাজা স্বাদ ও যুক্তিসঙ্গত দামের কারণে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০০১ সালে, ‘ফ্যাট ওল্ড ম্যান পিপার চিকেন’ চীনের হ্যনান প্রদেশে তার প্রথম বিশেষ স্টোর চালু করে। পরে সাফল্যের সঙ্গে ট্রেডমার্ক ‘ফ্যাট ওল্ড ম্যান’ নিবন্ধন করা হয়। তারপর থেকে, ‘চিন’ পরিবারের দুই প্রজন্মের অবিচল ও আস্থা কাজে লাগিয়ে ‘ফ্যাট ওল্ড ম্যান পিপার চিকেন’ ইতোমধ্যেই সুস্বাদু খাবারে অনুরাগীদের পছন্দের একটি স্থানীয় খাবার ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।

২০০৮ সালে, ‘ফ্যাট ওল্ড ম্যান পিপার চিকেন’ আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম পরিবর্তন করে। তখন নাম দাঁড়ায় ‘ফ্যাট ওল্ড ম্যান হালাল রেস্তোঁরা চেইন’। ‘ফ্যাট ওল্ড ম্যান’ সর্বোত্তম রান্নার কাঁচামাল এবং উপাদান নির্বাচনের উপর জোর দেয়। হুই জাতির ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি কঠোরভাবে মেনে চলে। বিখ্যাত শেফ রান্না করেন মন দিয়ে। হুই জাতির বিশেষ নুডলস তৈরীর ওপর জোর দেয় এই দোকান। ‘ফ্যাট ওল্ড ম্যান’ চীনাদের কাছে এখন একটি প্রিয় নাম।

প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে সিচাং’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও সিচাংয়ের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা: https://bengali.cri.cn/ সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn