বাংলা

সিনচিয়াংয়ের মরুভূমিতে বাড়ছে চাষাবাদ

CMG2024-04-27 18:25:34

বর্তমান সিনচিয়াংয়ে চলছে শীতকাল। ঘরের বাইরে ঠান্ডা, বরফ ও তুষারে ভরপুর। তবে বিভিন্ন গ্রামের গ্রীনহাউসে দেখা মিলছে বিভিন্ন সবজি, ফল ও ফসলের।

তারবাগাতাই এলাকার উসু শহরে কৃষকরা সবজির চারা রোপনের কাজ করছেন। মাটি লোড করা, প্লেট সাজানো ও সুশৃঙ্খলভাবে বীজ বপনের কাজ করেন তাঁরা। গ্রীনহাউসে লেটুস, মরিচ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করা হয়। তাঁরা কেবল সবজি নয়, বরং তাদের আশা চাষ করেন।

তারবাগাতাই এলাকার উসু শহরের চুরাশিটি থানার বাহাই গ্রামের বাসিন্দা লিয়াং ছেং শান বলেন,

“আমার ৩,৩৩৩ বর্গমিটার সবজির মাঠ আছে। আমি আগামি মাসে সবজি চাষ করবো। মে মাসের প্রথম দিকে ফসল হবে। প্রতি ৬৬৬ বর্গমিটার জমিতে উত্পাদিত সবজির দাম প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার ইউয়ান”।

আকসু এলাকার উশি জেলায় গ্রীনহাউসের টমেটো বড় হয়েছে। জেলাটি আগে মরুভূমি ছিল। সবজি শিল্পের প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার পর বর্তমানে জেলাটিতে পাঁচ শতাধিক আধুনিক সৌর গ্রীনহাউস নির্মিত হয়েছে। তাতে এক হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্ট হয়েছে। জেলাটির বার্ষিক মাথাপিছু আয় এখন ২৪ হাজার ইউয়ান।

বর্তমানে দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ে সবজি চাষের আয়তন পুরো সিনচিয়াংয়ের ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ফলে দক্ষিণ সিনচিয়াং হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবজি উত্পাদন এলাকা।

সিনচিয়াংয়ের আকসু মরুভূমি-শাসনের গল্প

সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আকসু এলাকা চীনের বৃহত্তম মরুভূমি তাকলামাকানের উত্তর দিকে অবস্থিত। ‘এক বাটি চালের আধা অংশ বালি’—এই ছিল গত শতাব্দীর আশির দশকের আগের এখানকার স্থানীয় মানুষের মাঝে প্রচলিত একটি কথা। ৩০ বছর পরে, আগের অনুর্বর মরুভূমি গোবিতে গড়ে উঠেছে মরুদ্যান। মরুভূমিকে বনে এবং গোবিকে বাগানে পরিণত করার এক অলৌকিক ঘটনা এটি।

গত শতাব্দীর আশির দশকে আকসুতে প্রতিবছরের প্রায় এক শ দিন বালি ও ধুলো থাকতো। আরও খারাপ বিষয় ছিল, নগর মরুভূমির মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল এবং প্রতিবছর এই দূরত্ব গড়ে ৫ মিটার করে কমছিল।

১৯৮৫ সালে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের পর, কেকেয়া এলাকায় বাতাস নিয়ন্ত্রণ ও বালি প্রতিরোধের জন্য বড় আকারের কৃত্রিম বন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৮৬ সালের বসন্তকালে স্থানীয় বাসিন্দারা সরঞ্জামাদি ও খাবারদাবার সাথে নিয়ে কেকেয়ায় যান এবং স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে সেখানে বৃক্ষরোপণের কাজ শুরু করেন।

গাছপালা রোপণ করা কঠিন, কিন্তু সেগুলোকে টিকিয়ে রাখা আরও কঠিন। একবার বালিঝড় আঘাত হানলে রোপণকৃত চারাগুলো মারা যায় বা বালিতে ঢাকা পড়ে। তখন স্থানীয় বাসিন্দারা যে যার মতো করে কেকেয়ায় গাছ রোপণ করার চেষ্টা করেন।

১৯৮৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কেকেয়ার মরুভূমির ৮০.২ হাজার হেক্টর ভূমিতে কৃত্রিম বন সৃষ্টি হয়। ‘মুত্যুর সমুদ্র’ নামে পরিচিত তাকলামাকান মরুভূমির উত্তর দিকে একটি ‘সবুজ গ্রেটওয়াল’ গড়ে ওঠে।

বর্তমানে আকসু এলাকার মরুদ্যানে বিভিন্ন ফল চাষ করা হয়। ফসল স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে আয় বাড়িয়েছে। এলাকায় বার্ষিক ফল উত্পাদন হয় কয়েক ডজন বিলিয়ান ইউয়ান মূল্যের।

লক্ষ লক্ষ স্থানীয় বাসিন্দা বনে ফল চাষ করেন। চাষ, উত্পাদন থেকে বিক্রয় পর্যন্ত, আকসু ফল শিল্প চেইন একটি বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং গ্রামীণ উন্নয়নে অবিচ্ছিন্ন জীবনীশক্তি এনে দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁরা গোটা চীনের জনগণের সঙ্গে গ্রাম পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছেন।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn