বাংলা

চীনে প্রতি পদক্ষেপে আছে নতুন শিক্ষা: মালদ্বীপের তরুণ নায়েফ

CMG2024-02-15 15:56:29

আশা পুরণে তারা চীনে এসেছেন আর স্বপ্ন পুরণে এখানে থাকা বেছে নিয়েছেন। চীনে আসার পর বিদেশিদের মধ্যে কী কী ঘটনা ঘটেছে?

সম্প্রতি মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু চীন সফর করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন ও মালদ্বীপের বাস্তবসম্মত সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং দু’দেশের ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী গভীরতর হয়েছে। “সবাইকে অভিবাদন, আমি নায়েফ। আমার চীনা নাম ফু চিনই। আমার বয়স ২৫ বছর এবং এখন সিছুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ডক্টরেট পর্যায়ের গবেষণা করছি।”

২০২৩ সালের বসন্তকালে ১০ ঘন্টারও বেশি সময়ের বিমানযাত্রায় ৩ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ অতিক্রম করে নায়েফ মালদ্বীপ থেকে তার স্বপ্নের দেশ চীনে পৌঁছান। যদিও তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য দূরশিক্ষণ মাধ্যমে অধ্যয়ন করছিলেন এবং মনে মনে অসংখ্যবার চীন কেমন হবে তা কল্পনা করছিলেন, তবে বিমানটি অবতরণ করার মুহুর্তে নায়েফ বলেছিলেন যে, তিনি খুব উত্তেজিত ও নার্ভাস বোধ করেন। তার হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছিল। তিনি বলেন,

“আমি যখন প্রথমবার সত্যিকার চীনের ভূমিতে এসে দাঁড়াই, তখন আমার জন্য সবকিছু ছিল নতুন। কারণ প্রতিটি জায়গা আমার দেশের তুলনায় ভিন্ন রকম।”

মালদ্বীপ হলো ভারত মহাসাগরে অবস্থিত সমুদ্রবেষ্টিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। খাদ্য, সংস্কৃতি ও এমনকি জীবনের সকল দিক সমুদ্রের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। সিছুয়ান প্রদেশের ছেংতু শহর চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত এবং এটি নায়েফের প্রথম গন্তব্যবস্থান। এখানকার জলবায়ু, খাবার ও সংস্কৃতি তার জন্মস্থানের চেয়ে অনেক আলাদা।

“খাবারে অনেক পার্থক্য আছে। মালদ্বীপে আমরা প্রায় প্রতিদিন মাছ খাই, বিশেষ করে টুনা। ছেংতু শহরে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন।”

কিন্তু তিনি যা আশা করেননি তা হলো তিনি খুব গিগগির এ শহরে বাস করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন।

“চীনা জনগণ খুব বন্ধুত্ববৎসল। আমি চীনে যাওয়ার যাত্রায় সেটি অনুভব করেছি। এখানকার মানুষ, সংস্কৃতি ও তাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছি। গ্রীষ্মের ছুটিতে এক বন্ধু আমাকে তার শহরে বেড়াতে এবং তার পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে আমন্ত্রণ জানান। তাদের পরিবার অত্যন্ত দয়ালু, উষ্ণ ও অতিথিপরায়ণ।’

নায়েফের চোখে ‘বন্ধুত্ব’ হলো চীনা জনগণের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। আর চীন সম্পর্কে তার চোখে মূল শব্দ হলো ‘নিরাপত্তা’।

“এখন পর্যন্ত আমি চীনের ব্যাপারে বিশেষভাবে যা পছন্দ করি তা হলো এখানটা খুব নিরাপদ। আমি অনেক দেশে গিয়েছি এবং আমি মনে করি, চীন সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ। আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বলি, ভোর তিনটা বা চারটার সময়ও চীনের রাস্তায় হাঁটা খুব নিরাপদ।”

লেখাপড়ার অবসরে নায়েফ সহপাঠীদের সঙ্গে ছেংতু’র রাস্তায় ঘুরে বেড়ান, দুধ-চা পান করেন এবং হটপট খান। এই শহরের খোলামেলা ও অন্তর্ভুক্ত সংস্কৃতি এবং রোমান্টিক ও উষ্ণ মেজাজ অনুভব করেন তারা। নায়েফ বলেন,

“আমি সত্যিই এই শহর পছন্দ করি, বিশেষ করে এর আরামদায়ক পরিবেশ। এখানে আসার আগে আমি বইয়ে পড়েছিলাম যে, ছেংতু চীনের সবচেয়ে আরামদায়ক শহরগুলোর অন্যতম। এখানকার খাবার খুবই সুস্বাদু। আমি এখানকার খাবার পছন্দ করি, বিশেষ করে হটপট, যা খুবই অনন্য। এখানকার বাসিন্দারাও খুব বন্ধুত্ববৎসল এবং এখানকার বিল্ডিং ও অবকাঠামো খুব ভালভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়...”

সিছুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর থাকার পর নায়েফ মনে করেন, চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শুধুমাত্র উচ্চ শিক্ষার মানই নয়, বরং সুন্দর ক্যাম্পাসের পরিবেশও রয়েছে৷ তিনি প্রতিদিন এখানে অধ্যয়ন করেন এবং নতুন কিছু অর্জন করেন।

তিনি বলেন,

“মালদ্বীপ একটি ছোট দেশ, তাই সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তুলনামূলকভাবে ছোট। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সত্যিই বড় এবং ভালো সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এখানে অধ্যয়ন করলে আমি চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানিতে পারি এবং চীনা সহপাঠীদের জীবনধারা উপলব্ধি করতে পারি।”

কিছুদিন আগে নায়েফ তার চীনা বন্ধুদের সঙ্গে একটি চীনা বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কুয়াতোং প্রদেশে যান এবং অনন্য ক্যান্টোনিজ সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা লাভ করেন। তিনি বলেন,

“এই চীনা বিয়ের অনুষ্ঠানটি দুর্দান্ত ও উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। বিয়ের অনুষ্ঠানে আমিই একমাত্র বিদেশি ছিলাম এবং বিয়েটি কুয়াংচৌ শহরের কাছে চিয়াংমেন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আমি সেখানে নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী চীনা খাবারে স্বাদ গ্রহণ করেছি এবং সবচেয়ে খাঁটি শুনদ্য ক্যান্টনিজ সকালের চা খেয়েছি।”

নায়েফ বলেন,

যতবার তিনি নিজের দেশের কথা উল্লেখ করনে, ততবার তার উত্সাহী চীনা বন্ধুরা বলেন, মালদ্বীপ একটি খুব সুন্দর দর্শনীয় গন্তব্য, যা তাকে খুব গর্বিত করে। পর্যটন-দেশ থেকে আসা এই যুবকও চীনজুড়ে ভ্রমণ এবং চীনের বিভিন্ন সৌন্দর্য অন্বেষণের জন্য উন্মুখ। তিনি বলেন,

“আমি চীনে ভ্রমণ করতে পছন্দ করি, কারণ এখানকার প্রতিটি শহরেই অন্বেষণ করার মতো অনেক কিছু আছে। চীনে, অন্বেষণ করার মতো অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে, তা সংস্কৃতি, খাবার বা যেকোন কিছুই হোক না কেন। যখনিই আপনি এক ধাপ আগাবেন, নতুন কিছু না কিছু লাভ করবেনই।”

লিলি/রহমান

Close
Messenger Pinterest LinkedIn