বাংলা

জিভে জল আনা ‘বেইজিং রোস্ট ডাক’

CMG2023-06-15 14:54:47

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের সুস্বাদু খাবারের কথা উল্লেখ করতে গেলে বেইজিং ডাকের কথা বলতে হয় সবার আগে। ছুয়েনচুদ্য ব্র্যান্ড হচ্ছে বেইজিং ডাকের প্রতিনিধিত্বকারী। আজকের অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে চীনের জাতীয় অবৈষয়িক কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃত ছুয়েনচুদ্য হ্যাঙ্গিং ওভেন রোস্ট ডাক শিল্পের ষষ্ঠ প্রজন্মের উত্তরাধিকারী উ ইয়ু বো’র সঙ্গে আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেবো।

উ ইয়ু বো’র বয়স এখন ৬৮ বছর। ১৯৭৫ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি ছুয়েনচুদে রোস্ট ডাক রেস্টুরেন্টে যোগ দিয়েছিলেন। গ্রীষ্মকালে রোস্ট ডাকের চুলা যে রুমে ছিল –তা তখন অত্যন্ত গরম থাকতো। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোস্ট ডাকের রান্না আয়ত্ত করতে তিনি প্রতিদিন সবার অনেক আগে রেস্টুরেন্টে আসতেন। তিনি প্রবীণ একজন পাচকের পিছনে বিনীতভাবে রান্না শিখতেন।

তিনি মনোযোগ দিয়ে রান্নার প্রত্যেক পদক্ষেপ চিন্তা করতেন এবং আস্তে আস্তে অনেক গোপন তথ্য সংগ্রহ করতেন। রোস্ট ডাকের গায়ের রং, ডাক কাটার চিত্রকোণ, নানা দিক তিনি গভীরভাবে বিবেচনা করতেন।

উ ইয়ু বো’র মনে পড়ে যে ২০০০ সালের আগে বেইজিংয়ে মাত্র এক হাজারেরও কিছু বেশি রোস্ট ডাক রেস্টুরেন্ট ছিলো। ২০০৮ সালে অফলাইনে একটি দোকানে দিনে তিন হাজারেরও বেশি ডাক বিক্রি হতো এবং বছরে এ সংখ্যা ছিলো তিন লাখেরও বেশি। তবে নতুন ব্র্যান্ডের অনেক রেস্টুরেন্ট খোলার কারণে রোস্ট ডাক রেস্টুরেন্টের বেচা-কেনা আগের চেয়ে কমে যায়।

এখন ৪০ বছর পার হয়েছে। উ ইয়ু বো উদ্বিগ্ন যে রোস্ট ডাক তৈরিতে সংস্কার না আনলে এ শিল্পকে পিছিয়ে পড়তে হবে। যখন উদীয়মান ক্যাটারিং ব্র্যান্ডগুলো বাজারে দৃঢ়ভাবে প্রবেশ করে, তখন তিনি চিন্তিত হন যে লোকেরা রোস্ট ডাক ত্যাগ করবেন। তাই তরুণদের সমাদর আবারও অর্জন করতে উ ইয়ু বো অনেক নতুন চেষ্টা শুরু করেন।

তিনি আবিষ্কার করেন যে বর্তমানে তরুণ-তরুণীরা খাবারের চেহারার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাই তিনি এবং তার সহকর্মীরা প্লেটে ডাক মাংস পিওনি, গোলাপি এবং খরগোশের মতো সাজিয়ে দেন। তিনি গ্রাহকদের খাবারের অভ্যাস অনুযায়ী বেকিংয়ের সময় সুবিন্যস্ত করেছেন। আগে একটি হাঁসকে রোস্ট করতে গড়ে ৪৫ মিনিট সময় লাগতো। হাঁসের চামড়া ঝলমলে এবং তৈলাক্ত থাকতো। চর্বি থেকে সুগন্ধ আসতো। এখন লোকেরা একটি স্বাস্থ্যকর জীবনের ধারণা অনুসরণ করছে। তাই উ ইয়ুবো এবং তার সহকর্মীরা রোস্টিং সময়কে ৬০ মিনিটে বাড়িয়েছেন এবং হাঁসের চামড়া আরও শুষ্ক এবং শক্ত করেন।

চীনের ছিং রাজবংশ থেকে বিকাশের পর এখন পর্যন্ত ছুয়েনচুদ্য এই শতাব্দী-প্রাচীন ব্র্যান্ডটির বেশ কয়েকবার সংস্কার করেছে এবং তা দীর্ঘকাল ধরে টিকে আছে। এখন এটি অন্য মোড়কে এসেছে। তবে তারুণ্য ও ডিজিটাইজেশন নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে ছুয়েনচুদ্য সৃজনশীলতার জন্য তৌইন বা টিকটক প্লাটফর্মে যোগ দেয়। স্বল্প ভিডিও প্লাটফর্মের মাধ্যমে তরুণদের সঙ্গে পুরোনো ব্র্যান্ডের সংলাপের সুযোগ খুঁজে পাওয়ার আশা পোষণ করে তারা।

আরও বেশি লোক ভিডিওয়ের মাধ্যমে রোস্ট ডাক মাস্টারের রান্নার নৈপুণ্য দেখতে পাচ্ছেন। তারা গভীর আগ্রহের সঙ্গে রোস্ট ডাক খাওয়ার নতুন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন।

রোস্ট ডাক তৈরি করার ক্ষেত্রে অপরিচিত থেকে ধীরে ধীরে সুদক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি। তার প্রচেষ্টায় রোস্ট ডাক জাতিসংঘের টেবিলে পৌঁছে যায়। উ ইয়ু বো’র মনে করেন, পরিবেশের পরিবর্তন হলেও রোস্ট ডাকের চার শ’ বছরের বেশি সময়ের সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটানো উচিৎ নয়।

বয়স বাড়ার কারণে উ ইয়ু বো এখন আর প্রথম লাইনে কাজ করেন না। তবে মাঝেমাঝে তিনি রেস্টুরেন্টে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করেন। তার কাছে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো রোস্ট ডাক প্রসঙ্গে ক্রেতাদের কোনো দ্বিমত নেই।

উল্লেখ্য, গত এক বছরে ছুয়েনচুদ্য তৌইনে প্রায় তিন শ’ ঘণ্টার সরাসরি সম্প্রচার চালু করেছে এবং ১৭ লাখেরও বেশি লোক ইন্টারনেটে একটি রোস্ট ডাকের পিছনের সংস্কৃতি ও গল্প জেনেছে। ফলে মাত্র বেইজিং অঞ্চলেই ছুয়েনচুদ্য ৬০ লাখ ইউয়ানের বেশি বিক্রি করতে পারছে। এখন ছুয়েনচুদ্য ১৫৮ বছর অতিক্রম করেছে। শত বছরের পুরোনো এই ব্র্যান্ড অব্যাহতভাবে মজার এবং আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে আরও বেশি তরুণের কাছে রোস্ট ডাকের সংস্কৃতি পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

উ ইয়ু বো আশা করেন, এই অবৈষয়িক কালচারাল হেরিটেজ উদ্ভাবন এবং অধ্যবসায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকে থাকবে।

লিলি/এনাম

Close
Messenger Pinterest LinkedIn