লুও দাদা এবং তাঁর চিড়িয়াখানা
‘বিলিবিলি’ নামে ভিডিও ওয়েবসাইট চীনের তরুণ তরুণীদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। সম্প্রতি ‘লুও দাদা’র চিড়িয়াখানা’ নামে ওয়েবসাইটের একটি অ্যাকাউন্ট হঠাত্ করে গোটা সমাজের ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
এই অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা ভিডিওতে রূপালি চুলের একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি এবং তার পরিচালিত চিড়িয়াখানাটি রেকর্ড করা হয়।
এই রূপালী চুলের বৃদ্ধের নাম লুও ইং চিউ। তিনি এখন ৮১ বছর বয়স। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি একা একা চিড়িয়াখানার বাগান পরিষ্কার করেন, খাবার কিনেন এবং মৃত পশুদের কবর দিয়েছেন।
চিড়িয়াখানায় থাকা বেশিরভাগ প্রাণীকে খাবার টেবিল এবং বন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে আছে হাত কাটা কালো ভাল্লুক, অন্ধ বানর, লেজ হারানো ময়ূর ইত্যাদি।
মিডিয়া এটিকে ‘চীনের নিঃসঙ্গ চিড়িয়াখানা’ বলে অভিহিত করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে এই চিড়িয়াখানায় বৃদ্ধ, দুর্বল, অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী পশুপাখির বাস। খুব কম পর্যটক এখানে পরিদর্শন করেন।
আগে পরিবারের সদস্যরা অনেকবার লুও ইংচিউকে নিরুৎসাহিত করেছিল এবং তাকে চিড়িয়াখানা ছেড়ে দিতে বলেছিল। কিন্তু, তিনি কঠোরভাবে অস্বীকার করে বলেছিলেন, ‘যদি তোমরা আমাকে এই কাজ করতে না দাও- তাহলে তোমরা আমার মৃত মুখ দেখবে।’
গত জানুয়ারি মাসে লুও দাদা’র নাতনী ‘বিলিবিলি’ ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং মাত্র তিন মাসের মধ্যে প্রায় তিন লাখেরও বেশি ভক্ত এবং প্রায় এক কোটি ভিউ হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টের বেশিরভাগ ভিডিও ছোট প্রাণীদের সাথে লুও দাদা’র দৈনন্দিন জীবনের কর্মকাণ্ড। নাতনীর উদ্যোগে শট করা এবং আপলোড করা হয়। ভিডিওয়ের দৈর্ঘ্য দশ সেকেন্ড থেকে দশ মিনিট পর্যন্ত।
১৭ লাখ ভিউ অর্জনের একটি ভিডিওতে আমরা দেখতে পাই যে, ৮১ বছর বয়সী লুও দাদা হুবেই প্রদেশের আঞ্চলিক ভাষা দিয়ে দর্শকদের কাছে একটি বানরকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এটি একটি বৃদ্ধ বানর, যা প্রায় ২৯ বছর ধরে চিড়িয়াখানায় বাস করেছে। ক্যামেরার আলো জ্বলে উঠার পর চোখ বিশেষভাবে প্রভাবিত হয় এবং সে আর দেখতে পারছে না।
লুও দাদা’র ‘ফোংহুয়াং শান বা ফিনিক্স মাউন্টেন চিড়িয়াখানায়’ এই বানরের মতো অনেক অসহায় প্রাণী রয়েছে। তাদের মালিকদের পরিত্যক্ত শিয়াল, পশু ফাঁদে শিকার হওয়া সজারু এবং ডজনেরও বেশি বেওয়ারিশ কুকুর।
লুও দাদা’র এখনও স্পষ্ট মনে আছে যে, তিনি সবজি বাজার থেকে প্রথম দফার পশু কিনেছিলেন। সেই সময় অবৈধ ব্যবসায়ীরা বন্য প্রাণী বিক্রি করত। পাশ দিয়ে যাওয়া লুও দাদা এসব প্রাণী উদ্ধার করেন।
পরবর্তী ৩০ বছর ধরে লুও দাদা বন্য শুয়োর, মুন্টজ্যাক এবং সিভেট বিড়ালসহ নানা প্রাণী সংগ্রহ করতে থাকেন। অর্থের বিষয়ে চিন্তা করতেন না। এসব প্রাণী মূল্যবান কি না, তা ভেবেও দেখতেন না।
মাঝেমাঝে লুও দাদা কিছু হিংস্র জন্তু গ্রহণ করেন।
২০০৩ সালে লুও দাদা একটি সাইবেরিয়ান বাঘ দত্তক নেন। ছোটবেলায় সেই বাঘের লেজে কামড় পড়েছিল।
২০০৪ সালে, একটি রেস্টুরেন্ট গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করার বিনিময়ে একটি কালো ভাল্লুক উদ্ধার করেছিলেন। লুও দাদা তার পকেটে থাকা তিন হাজার ইউয়ান দিয়ে রেস্টুরেন্টের মালিকের কাছ থেকে কালো ভালুকটি কিনে নেন এবং এর নাম রাখেন ‘কুয়েকুয়ে’, এর অর্থ হলো ‘ডিয়ার’।
যখন এসব প্রাণী প্রথম দত্তক নেওয়া হয়েছিল, তখনও চিড়িয়াখানাটি গড়ে ওঠেনি। সেই সময়ে লুও দাদা একটি সিনেমার থিয়েটারে কাজ করতেন এবং যতবার তিনি একটি পশু দত্তক নিতেন, তিনি এটিকে তার কুঁড়েঘরে রাখতেন।
পরে কুঁড়েঘরে তিতির, থ্রাশ ও অন্যান্য প্রাণীর ভিড় ছিল এবং লুও দাদা বাচ্চাদের নিয়ে করিডোরে শুয়ে থাকতেন।
১৯৮৯ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার লুও দাদাকে ২০ হাজার ইউয়ান ভর্তুকি দিয়ে একটি চিড়িয়াখানা তৈরি করে দেয় এবং এভাবে সরকারি সহায়তায় একটি বেসরকারি চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
চিড়িয়াখানাটি হুবেই প্রদেশের এনশি’র ফোংহুয়াং পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত।
খুব খাড়া সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে গেলে আপনি একটি বড় লোহার গেট দেখতে পাবেন, যার পিছনে একটি টেবিল রয়েছে, যা চিড়িয়াখানার টিকিট অফিস। চিড়িয়াখানাটি খুব বড় নয়। প্রায় পাঁচশ’ বর্গমিটার মাত্র। চিরিয়াখানায় কালো ভাল্লুক, শেয়াল, বানর, ময়ূর এবং ২০ টিরও বেশি কুকুরসহ ৩০টিরও বেশি প্রাণী রয়েছে।
লুও দাদা চিড়িয়াখানার পরিচালক, সেইসাথে একজন ব্রিডার, কন্ডাক্টর, ক্লিনার, পশুচিকিত্সক এবং শোক পালনকারী।
প্রতিদিন সকালে তিনি তার সাইকেল নিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে সবজির বাজারে পশুর জন্য খাবার কিনতে যান। প্রাণীরা প্রধানত নিরামিষ, তবে কিছু মাংসাশী প্রাণীদের অবশ্যই মাংস খেতে দিতে হবে। তাই তাকে কিছু লিভার, হার্ট ও মাছ কিনতে হয়।
বাজারের লোকেরা যারা তার সাথে পুরানো বন্ধু, তারা দাদার কাছে সস্তা দামে খাবার বিক্রি করেন এবং তাকে অবাঞ্ছিত সবজির পাতা দেন। তারপরও তাঁকে প্রতিদিন কমপক্ষে চার/পাঁচশ ইউয়ান খাবার কিনতে হয়।
চিড়িয়াখানার অপারেশন নিশ্চিত করার জন্য লুও দাদা খুব কঠোর জীবনযাপন করে থাকেন। তার মাসিক পেনশনের ৬৫ শতাংশেরও বেশি পশুদের পেছনে ব্যয় করতে হয়।
চিড়িয়াখানা হলো লুও দাদা’র জীবনের প্রিয় কাজ।
প্রতিদিন ভোর চার-পাঁচটার মধ্যে উঠে তিনি মাটিতে পড়ে থাকা পাতাগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করেন, তারপর খাঁচা পরিষ্কার করেন। সকাল ছয়টা বা সাতটার দিকে খাবার কিনতে বের হন। চিড়িয়াখানাটি সকাল দশটায় খোলে এবং রাতের অন্ধকার হলে বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার পর তিনি পশুদের খাওয়াতে শুরু করেন এবং বাগান পরিষ্কার করেন। রাত ১২টার পর তিনি ঘুমান। এভাবে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়ম মেনে চলছেন তিনি।
একবার লুও দাদা তার চুল কাটলেন এবং দেখলেন যে, চিড়িয়াখানার বানররা তাকে এড়িয়ে চলছে। তারপর থেকে তিনি তার চুল ছোট করা বন্ধ করে দেন, কারণ প্রাণীদের সঙ্গে তার মানসিক দূরত্ব তিনি সহ্য করতে পারছেন না।
তার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান এবং তার নাতির পূর্ণিমা অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেন নি, কারণ তাকে চিড়িয়াখানার সবকিছুর যত্ন নিতে হয়েছিলো। এমনকি তিনি তার ভাইয়ের মৃত্যুর অনুষ্ঠানেও যান নি। তবে চিরিয়াখানার পশু-পাখির ছোট-বড় কোনো বিষয়ে তিনি কখনোই অনুপস্থিত থাকেন না।
একবার কেউ একজন অসুস্থ সিভেটকে চিড়িয়াখানায় পাঠিয়েছিল। লুও দাদা দেখতে পেলেন যে, এটি পর্যাপ্ত খাবার খেতে পারছে না, তাই পরের দিন সকালে তাকে খাওয়ানোর জন্য কেঁচো খনন করতে তিনি পাহাড়ে ওঠেন। ‘যতক্ষণ আমি এখানে আছি, আমি তাদের সেই নির্যাতন ও ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না।’
শেষ পর্যন্ত, সিভেট টিকে থাকতে পারেনি এবং লুও দাদা তাকে কবর দেওয়ার জন্য ফিনিক্স পর্বতে যান।
৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বাঘ, সিংহ, কুমির এবং আরও অনেক কিছুসহ ৪০টিরও বেশি মৃত প্রাণীকে কবর দিয়েছেন।
নাতনীর দৃষ্টিকোণ থেকে এই অক্ষম ও অসুস্থ প্রাণীদের প্রতি লুও দাদা’র ভালবাসা সম্ভবত তার মেয়ে লুও চেনের সঙ্গে কিছু সম্পর্ক থাকতে পারে।
লুও চেন জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত এবং খুব তাড়াতাড়ি স্কুল ছেড়ে দেন। তিনি চিড়িয়াখানায় টিকিট বিক্রি করতে সাহায্য করতেন। রোগ দিন দিন ভয়াবহ হয়ে ওঠে এবং ২০০৮ সালে মারা যান।
লুও চেন মারা যাওয়ার আগে বাবাকে বললেন, ‘আমি আর আপনাকে সঙ্গ দিতে পারব না, বাবা, চিড়িয়াখানা ভালোভাবে পরিচালনা করুন।’
লুও চেনের মৃত্যুর আট বছর পর লুও দাদা’র চিড়িয়াখানাটি দেউলিয়া হওয়ার পথে চলে যায়।
আসলে প্রতিষ্ঠার প্রথম কয়েক বছরে হুবেই প্রদেশের এনশিতে প্রথম চিড়িয়াখানা হিসেবে লুও দাদা’র চিড়িয়াখানা একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল।
সেই সময়ে টিকিটের মূল্য ছিল মাত্র ৫০ সেন্ট এবং বার্ষিক আয় দশ হাজার ইউয়ানের কিছু বেশি। ‘ফোংহুয়াং শান বা ফিনিক্স মাউন্টেন চিড়িয়াখানা’ বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় তা ‘পিপলস ডেইলি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে এনশির উন্নত পরিবেশসহ আরও আধুনিক চিড়িয়াখানা দেখা দেয় এবং সেখানে কিছু প্রাণীর পারফরম্যান্সও আছে। বিপরীতে, লুও দাদা’র চিড়িয়াখানাটি কিছুটা পুরানো দেখায়।
একদিকে পর্যাপ্ত প্রজাতির প্রাণী নেই, অন্যদিকে আধুনিক মল নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় চিড়িয়াখানাটি অন্য আধুনিক চিড়িয়াখানার চেয়ে একটু দুর্গন্ধযুক্ত হয়। কখনও কখনও পর্যটকরা লুও দাদা’র সামনে চিড়িয়াখানার সমালোচনা করত বা এমনকি তাকে অপমান করত, কিন্তু লুও দাদা শুধু হাসতেন।
পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য ২০১৬ সালে লুও দাদা চিড়িয়াখানার টিকিট ২০ ইউয়ান থেকে কমিয়ে ১০ ইউয়ান করেন, কিন্তু অনেক সময় তিনি দিনে একটি টিকিটও বিক্রি করতে পারতেন না।
তিনি পশুদের অভিনয় করতে দিতে রাজি হন নি। তার কাছে পশুরা অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার নয়। এটি হল তার বটম লাইন এবং এই সিদ্ধান্তে তিনি অটল আছেন।
পর্যটক থাকুক বা না-থাকুক,প্রাণীদের প্রতিদিন খেতে দিতে হয়। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিড়িয়াখানাটিতে শুধুমাত্র খাদ্যের জন্য ৪০ লাখেরও বেশি ইউয়ান ব্যয় করা হয়েছে। শীতকালে যেসব প্রাণী ঠান্ডায় ভয় পায়, তাদের লাইট দিয়ে গরম রাখতে হয়, বিদ্যুৎ খরচও অনেক বেশি হয়।
লুও দাদা’র মাসিক পেনশন হল ৫ হাজার ইউয়ান, কিন্তু এই অর্থ দিয়ে চিড়িয়াখানা পরিচালনা করা যায় না। লুও দাদা ক্রমাগত আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার করেন এবং এমনকি কিছু স্ক্র্যাপ সংগ্রহ করে বিক্রি করা শুরু করেন।
২০২০ সালে মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর লুও দাদা’র অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
লুও দাদা’র ছেলে লুও বিন একাধিক বার বাবাকে বলেন যে, চিড়িয়াখানা তিনি আর পরিচালনা করবেন না এবং ভালোভাবে অবসর জীবন উপভোগ করুন। ছেলের প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন লুও দাদা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লুও দাদা’র চিড়িয়াখানাটি মিডিয়ার উদ্যোগে ক্রমাগত রিপোর্ট করেছে এবং কিছু ব্যক্তিগত অনুদানও আকৃষ্ট করেছে। তবে, চিড়িয়াখানার সামগ্রিক কার্যক্রম এখনও আশাব্যঞ্জক নয়।
এই বছরের জানুয়ারিতে, লুও দাদা’র নাতনি লুও ওয়েই দাদার জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন।
লুও ওয়েইয়ের এখন ২২ বছর বয়স। জন্মের পর থেকে চিড়িয়াখানার পিছনের বাড়িতে তার পরিবারের সাথে বাস করে আসছিল। তার কাছে চিড়িয়াখানাও তার বাড়ি।
লুও ওয়েই শৈশব থেকেই তার পরিবারে কালো ভাল্লুক, বাঘ এবং অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর সাথে থাকতে অভ্যস্ত হয়েছে। সে যখন তাদের নাম ধরে ডাকে, তখন তারা সাড়া দেয়।
চিড়িয়াখানায় একটি ছোট কালো কুকুরও ছিলো। লুও ওয়েইয়ের মনে পড়ে যে, সে যখন প্রতিদিন সকালে স্কুলে যেত, তখন সেটি তাকে অনুসরণ করত। বিকেলে স্কুল শেষে ছোট্ট কালো কুকুরটি আগে থেকেই স্কুলের গেটে তার জন্য অপেক্ষা করত, বৃষ্টিতে বা সূর্যের আলোয়। কয়েক বছর পর ছোট্ট কালো কুকুরটি মারা যায় এবং লুও ওয়েই দীর্ঘ সময় গভীর দুঃখে পড়ে।
উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার পর লুও ওয়েই চিড়িয়াখানায় কম সময় দিতো। কিন্তু যখনই সে ছুটি কাটাতে বাড়ি আসত, চিড়িয়াখানার বিড়াল ও কুকুররা লেজ দুলিয়ে তাকে বাড়িতে স্বাগত জানাতো এবং খাঁচায় থাকা প্রাণীরাও তাকে চিনত।
এই ছোট্ট চিড়িয়াখানায় লুও ওয়েই এবং তার দাদা একসঙ্গে অসংখ্য দিন-রাত কাটিয়েছে।
লুও ওয়েই প্রায়শই তার দাদা ও প্রাণীদের মধ্যে সম্পর্ক দেখে অবাক হয়ে যায়।
একদিন দাদা- যে অজগরটিকে কবর দিয়েছিলেন- সেটি প্রথমে ছোট সাপ ছিল। একদিন, লুও ওয়েই দেখতে পেল যে, সে দাদা’র কথা বুঝতে পারে। যখন দাদা ডাকলেন, তখন সেই সাপ একটি বাধ্য কুকুরছানার মতো দাদার দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যায়।
মাঝেমাঝে লুও ওয়েই দাদা’র জন্য কিছু ছোট প্রাণীর যত্ন নিতেন, বাসা তৈরি করতেন এবং তাদের খাওয়াতে সাহায্য করতেন। দাদা তাকে বিভিন্ন প্রাণীর অভ্যাস এবং কীভাবে আঘাত মোকাবিলা করতে হয়- তা শিখিয়েছিলেন।
ছোটবেলায় দাদার সাথে লুও ওয়েই’র স্মৃতিগুলোর কারণে দাদা কী করেছিলেন তা গভীরভাবে বুঝতে পারতেন।
এটি শুধুমাত্র একটি চিড়িয়াখানা নয়, এটি এমন একটি জায়গা যেখানে প্রাণীরা আরও ভালভাবে বসবাস করতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্ক হলেও লুও ওয়েই কখনও অন্য চিড়িয়াখানায় যায়নি। একবার তিনি অ্যাকোয়ারিয়ামে গিয়েছিলেন, তিনি পশুদের পারফরমেন্সের আগে বের হয়ে যান। তিনি বলেন, এটি দেখার সাহস আমার নেই, পারফরমেন্স প্রাণীদের জন্য খুব কষ্টকর।
পরে, যখন চিড়িয়াখানাটি অর্থকষ্টে পড়ে এবং যখন পরিবারের সবাই দাদাকে এই কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে, তখন শুধু লুও ওয়েই তার দাদাকে বুঝতে পারে। লুও ওয়েই বলেন, তিনিই খুবই দয়ালু ব্যক্তি।
বছরের পর বছর ধরে এই অবস্থা দেখে পরিবারের সদস্যরা তাদের মন পরিবর্তন করেন এবং দাদার কাজে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। লুও ওয়েইয়ের কাছে একমাত্র দুঃখজনক বিষয় হলো- ইন্টারনেটে দাদার সমালোচনা।
কিছু লোক বুঝতে পারে না, কেন প্রাণীদের লক করে রাখা হয়েছে। তারা জানতেন না যে, এগুলো আহত প্রাণী এবং যদি তাদের বনে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তারা ভালভাবে বাঁচতে পারবে না।
এসব লোকের জবাব দিতে এই বছরের জানুয়ারিতে লুও ওয়েই চিড়িয়াখানার নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন, যাতে আরো বেশি লোক চিড়িয়াখানাটি আরও ভালোভাবে দেখতে পারে এবং দাদা’র গল্প জানতে পারে। এই অ্যাকাউন্টের নাম হলো ‘লুও দাদা’র চিড়িয়াখানা’।
অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা ভিডিওগুলো দেখার পরে অনেক তরুণ নেটিজেন বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে চিড়িয়াখানাকে সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
কিছু লোক অনলাইনে কিছু কুকুর ও বিড়ালের খাবার কিনে লুও দাদাকে পাঠায়, আর কিছু লোক সমর্থন দেওয়ার জন্য অন্য জায়গা থেকে এসে লুও দাদা’র চিড়িয়াখানায় ঘুরে বেড়ান।
যাই হোক, যখন কিছু নেটিজেন চিড়িয়াখানায় অনুদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে, তখন লুও দাদা এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ তিনি মনে করেন, মহামারীর সময় সবার জন্য কঠিন, আগে নিজের যত্ন নিতে হবে।
বন্ধুরা, কখনও সুযোগ পেলে হুবেই প্রদেশের এনশি শহরে গেলে অবশ্যই লুও দাদা’র চিড়িয়াখানায় যাবেন।
লিলি/তৌহিদ/শুয়ে