বাংলা

মার্কিন ‘অভিনন্দনে’র পিছনে অসৎ অভিপ্রায়

CMG2024-05-26 15:48:53

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গত সোমবার তাইওয়ান অঞ্চলে নব অভিষিক্ত নেতা লাই ছিং ত্য’কে ‘তথাকথিত’ অভিনন্দন জানিয়েছে। এর আগে কিছু সাবেক উর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা তাইওয়ান অঞ্চল পরিদর্শন করেন, যা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করেছিল।

বরাবরের মতোই, তথাকথিত অভিনন্দনের পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। আর তা হলো চীনকে চাপে রাখতে তাইওয়ানের ‘স্বাধীনতাকামী’ বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে সমর্থন করা।

যুক্তরাষ্ট্রের এহেন আচরণ, এক-চীন নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ব্যাপক হস্তক্ষেপের শামিল। কিছু মার্কিন রাজনীতিবিদের ভুল কথা ও কাজ আন্তঃপ্রণালী স্থিতিশীলতা এবং চীন-মার্কিন সম্পর্ককে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্র মুখে চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের কথা বললেও তাইওয়ান প্রশ্নে তারা বরাবরই উল্টো কাজ করে আসছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এক-চীন নীতি মেনে চলা, তাইওয়ান-সম্পর্কিত সমস্যাগুলো বিচক্ষণতার সাথে এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করা, তাইওয়ানের সাথে সমস্ত ধরণের আনুষ্ঠানিক বিনিময় বন্ধ করা এবং ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামী’ তথা বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে কোনও ভুল সংকেত পাঠানো বন্ধ করা।

এক-চীন নীতি হল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐকমত্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনার একটি মৌলিক নিয়ম। মার্কিন পক্ষের ভুল কথা এবং কাজ আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়মকে উপেক্ষা এবং পদদলিত করেছে।

বিশ্বে শুধুমাত্র একটি চীন আছে এবং তাইওয়ান চীনের ভূখণ্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ; গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সরকার হল একমাত্র বৈধ সরকার যা চীনের প্রতিনিধিত্ব করে এবং যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্বারা স্বীকৃত সর্বসত্য।

গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী প্রথম দেশ থেকে শুরু করে ১৮৩তম দেশ নাউরু পর্যন্ত, সবাই এক-চীন নীতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে,

যা দেখায় যে এক-চীন নীতি সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত এবং জনমত এবং বিশ্বব্যাপী প্রবণতার প্রতিনিধিত্ব করে।

যুক্তরাষ্ট্রের এক-চীন নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘনের বিশ্বব্যাপী বিরোধিতার অসংখ্য নজির রয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ২০২২ সালে তাইওয়ান সফর করার পরে, ১৭০টিরও বেশি দেশ এবং অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা চীনের পক্ষে কথা বলেছে, এক-চীন নীতির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় চীনের ভূমিকার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে।

তাইওয়ান প্রশ্নটি চীনের একটি কেন্দ্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, যা চীন-যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি। এটি দু’দেশের সম্পর্কের প্রথম লাল রেখা, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতিক্রম করা উচিত নয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে ওয়াশিংটন ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’, ‘দুই চীন’ বা ‘এক চীন, এক তাইওয়ান’ সমর্থন করে না এবং চীনকে চাপে রাখতে তাইওয়ানকে একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে চায় না। কিন্তু ওয়াশিংটন কি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে?

বাস্তবতা হল, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ওয়াশিংটন তার প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটছে, তাইওয়ান অঞ্চলের সাথে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় না রাখার প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তাইওয়ানের সাথে তার যোগাযোগের স্তরকে উন্নত করছে এবং তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতির জন্য ওয়াশিংটনকে তার মৌখিক প্রতিশ্রুতি কঠোরভাবে পালন করতে হবে।

‘চীনকে রুখতে তাইওয়ানকে ব্যবহার করা’র ভুল কৌশল নিয়ে কিছু মার্কিন রাজনীতিবিদ চীনের দৃঢ় সংকল্প এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার দৃঢ় ইচ্ছাকে অবমূল্যায়ন করেছেন।

তাইওয়ান সমস্যার সমাধান করা এবং সম্পূর্ণ জাতীয় পুনঃএকত্রীকরণ অর্জন চীনা জনগণের যৌথ আকাঙ্খা এবং দৃঢ় ইচ্ছা এবং এতে কোনো আপস করার সুযোগ নেই। জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য চীনা জনগণের বিপুল ক্ষমতা রয়েছে।

একটি শক্তিশালী চীনের ঐতিহাসিক প্রবণতা, জাতীয় পুনরুজ্জীবন এবং পুনর্মিলন বন্ধ করা যাবে না এবং ওয়াশিংটনে কিছু চীন বিরোধী রাজনীতিবিদের দ্বারা সমস্ত অপ্রচার সত্ত্বেও ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’ প্রয়াস ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে। তাই তাইওয়ান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভুল নীতি আশু পরিত্যাগই করাই সমীচীন।

মাহমুদ হাশিম

সিএমজি বাংলা, বেইজিং।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn