বাংলা

প্রেসিডেন্ট সি’র তিন দেশ সফর: চীন-ইউরোপ সম্পর্কের টেকসই, স্থিতিশীল ও সুষ্ঠু বিকাশকে উন্নীত করবে

CMG2024-05-05 17:08:11

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ৫ থেকে ১০ মে, ইউরোপের তিনটি দেশ, ফ্রান্স, সার্বিয়া এবং হাঙ্গেরিতে রাষ্ট্রীয় সফর করছেন।

এটি গত প্রায় পাঁচ বছরে চীনের প্রেসিডেন্টের প্রথম ইউরোপ সফর। সি’র সফর তিনটি দেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতা বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০১৪ এবং ২০১‌৯ সালে পর প্রেসিডেন্ট সি’র এবারের ফ্রান্স সফর ইউরোপীয় দেশটিতে তার তৃতীয় রাষ্ট্রীয় সফর। এই সফরটি চীন-ফ্রান্স কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০তম বর্ষপূর্তিতে হচ্ছে, যা অতীতের অর্জনের উপর দাঁড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যত দিকনির্দেশনার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।

দুই রাষ্ট্রপ্রধানের নির্দেশনায় চীন ও ফ্রান্স তাদের দ্বিপাক্ষিক ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে স্থির উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। দুই দেশ বিশ্বের বহু-মেরুকরণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণের জন্যও বলিষ্ঠ সমর্থক হয়ে উঠেছে।

গত জানুয়ারিতে ৬০তম বার্ষিকীতে অভিনন্দন বার্তা বিনিময়ের সময় প্রেসিডেন্ট সি, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁকে বলেন, যেহেতু আজকের বিশ্ব আবারও একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে নিপতিত হয়েছে, তাই চীন ও ফ্রান্সের উচিত যৌথভাবে শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি এবং মানব উন্নয়নের জন্য অগ্রগতির পথ উন্মুক্ত করা।

চীন-ফ্রান্স সম্পর্কের মধ্যে অনেক ‘প্রথম’ রয়েছে: ফ্রান্স হল প্রথম প্রধান পশ্চিমা দেশ যারা ১৯৬৪ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়। বেইজিংয়ের সাথে একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব গঠনকারী প্রথম প্রধান পশ্চিমা দেশও ফ্রান্স। গত ছয় দশকে, এই গতিশীল সম্পর্ক অসংখ্য ঐতিহাসিক মাইলফলক এবং বাস্তব অর্জনের সাক্ষী হয়েছে।

ইউরোপীয় দেশটি পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে চীনের সাথে বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি সহযোগিতা পরিচালনাকারী প্রথম দেশও বটে।

বাণিজ্য চীন ও ফ্রান্সের গতিশীল সম্পর্কের একটি অনন্য উদাহরণ। দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ২০২৩ সাল নাগাদ তা ৮০০ গুণ বেড়ে ৭৮.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়৷ চীন এখন এশিয়ায় ফ্রান্সের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।

চীন ও ফ্রান্স যথাক্রমে পূর্ব ও পশ্চিমা সভ্যতার প্রতিনিধি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, উভয় পক্ষ ক্রমাগত তাদের সাংস্কৃতিক এবং জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানকে প্রসারিত করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, প্যারিসের নটরডেম ক্যাথেড্রাল এবং চীনের টেরাকোটা ওয়ারিয়র্সসহ উভয়পক্ষ তাদের নিজ নিজ আইকনিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার এবং সুরক্ষায় সহযোগিতা করেছে। উভয়পক্ষ একে অপরের দেশে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করেছে এবং ২০২৪ সালকে চীন-ফ্রান্স সংস্কৃতি ও পর্যটন বর্ষ হিসাবে মনোনীত করেছে। ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট সি’র এবারের সফর দুদেশের সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

‘আয়রনক্ল্যাড’ বা ‘লৌহদৃঢ়’ শব্দবন্ধটি প্রায়ই চীন এবং সার্বিয়ার মধ্যে সম্পর্ক বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়।

গত বছরের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে যোগ দিতে বেইজিংয়ে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুসিকের সাথে সাক্ষাতের সময় প্রেসিডেন্ট সি চীন-সার্বিয়া সম্পর্ককে ‘লৌহদৃঢ় বন্ধুত্ব’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

তিনি বলেন যে, চীন-সার্বিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক দৃশ্যপটের পরিবর্তনকে প্রতিরোধ করেছে এবং চীন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উদাহরণ হয়ে উঠেছে। জবাবে, ভুসিক বলেন, তার দেশ চীনের সাথে তার ‘লৌহদৃঢ়’ বন্ধুত্বের জন্য গর্বিত।

চীন ও সার্বিয়ার মধ্যে ফলপ্রসূ বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতা দু’দেশের বিশেষ সম্পর্কের প্রমাণ।

সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর নোভি সাদের সাথে সংযোগকারী উচ্চ-গতির ট্রেনটি বেলগ্রেড-বুদাপেস্ট রেলওয়ের একটি অংশ। এটি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে চীন এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার একটি মূল প্রকল্প।

প্রেসিডেন্ট সি’র এবারের সফরে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় সব দিক থেকে আরো জোরদার হবে বলে আশা করা যায়।

এদিকে, প্রেসিডেন্ট সি’র হাঙ্গেরি সফর চীনের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ইউরোপীয় দেশটিতে তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর।

কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর গত ৭৫ বছরে চীন ও হাঙ্গেরি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক বোঝাপড়া, পারস্পরিক সমর্থন এবং পারস্পরিক বিশ্বাস উপভোগ করেছে।

হাঙ্গেরি প্রথম ইউরোপীয় দেশ যে চীনের সাথে বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার দলিল স্বাক্ষর করেছে। ২০১৭ সালে, দুই দেশ একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।

উভয় দেশের নেতাদের যত্ন ও কৌশলগত দিকনির্দেশনার মাধ্যমে, চীন-হাঙ্গেরি সংযোগ গভীরতর হচ্ছে, বাস্তবসম্মত সহযোগিতার বিকাশ ঘটছে।

চীনের প্রেসিডেন্টের সফর ইউরোপীয় দেশ তিনটির সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। পাশাপাশি চীনের প্রেসিডেন্টের চলমান ইউরোপ সফর চীন-ইউরোপ সম্পর্কের টেকসই, স্থিতিশীল ও সুষ্ঠু বিকাশকে উন্নীত করবে, একটি অশান্ত বিশ্বের জন্য আরও স্থিতিশীলতা এবং নিশ্চয়তা প্রদানে সহায়তা করবে এবং বৈশ্বিক উন্নয়নকে আরও উত্সাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মাহমুদ হাশিম

সিএমজি বাংলা, বেইজিং।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn