বাংলা

চীনের নতুন পেশা কৃষি ডিজিটাল প্রযুক্তিবিদ

CMG2024-08-12 17:00:58

গত সপ্তাহে আমরা চীনের নতুন পেশা নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরেছি। বস্তুত, সমাজের বিভিন্ন খাতের দ্রুত উন্নয়নের পাশাপাশি, এখন বিভিন্ন ধরনের নতুন পেশার আবির্ভাব ঘটছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তেমনি একটি নতুন পেশা নিয়ে আলোচনা করবো।

চীনের ছংছিং মহানগরের লিয়াংপি এলাকায় মাছ ও শাকসবজির কারখানা কার্যালয়ে কৃষিবিজ্ঞান একাডেমির কৃষি ডিজিটাল প্রযুক্তিবিদ লি মাই একাই কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন। দূরবর্তী পর্যবেক্ষণ ও রিমোট ব্যবস্থায়, এ কারখানার বিভিন্ন পরিসংখ্যান, কম্পিউটারে দেখা যায়। নিজের কাজ সম্পর্কে লি বলেন, “আমার মূল কাজ প্রকৌশলী ও জেলের মতো। অতীতকালে মাছ চাষের সময় ব্যক্তিকে নিয়মিত মাছকে খাওয়াতে হতো। তবে, বর্তমানে এআই প্রযুক্তি মাছকে খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করছে।” কারখানার নিচ তলায় মাছ লালনপালন করা হয় এবং উপর তলায় শাকসবজি চাষাবাদ করা হয়। মাছ ও শাকসবজি একসাথে বেড়ে ওঠে। লিয়াংপি এলাকার এ ছোট কারখানায় বেশ উন্নত প্রযুক্তি দেখা যায়। যেমন, মাছকে পুকুরে স্থাপিত এআই প্রযুক্তি খাওয়ায় এবং সেন্সরের মাধ্যমে পুকুরের পানির তাপমাত্রা, উষ্ণতা ও অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যে পুকুরে মাছ চাষ হয়, সে পুকুরের পানি শাকসবজির গ্রিনহাউসের জন্য সার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে শাকসবজির ক্ষেতে এ পানি স্থানান্তর করা হয়।

কৃষিকাজের আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল প্রযুক্তি অবিভাজ্য। ২০২২ সালের জুন মাসে চীন সরকার ১৮টি নতুন পেশার ধরণ প্রকাশ করে। তালিকায় কৃষি ডিজিটাল প্রযুক্তিবিদও রয়েছে। তখন থেকেই লি মাই প্রকৌশলী থেকে প্রযুক্তিনির্ভর জেলেতে রূপান্তরিত হন।

লি মাইয়ের এই যাত্রা সহজ ছিল না। চীনের একটি প্রবাদে বলা হয়েছে, মাছ লালনপালন করতে চাইলে পানির মান নিশ্চিত করা জরুরি। অতীতকালে পুকুরের পানির মান দক্ষ ও সিনিয়র কর্মীদের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে ঠিক করা হতো। তবে, আজকাল কারখানায় মাছ লালনপালনের ক্ষেত্রে সেন্সরের মাধ্যমে পানির মান পর্যবেক্ষণ করা হয়। অতীতের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা স্মরণ করে লি মাই বলেন, “আগে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকদের মতামত মাঝে মাঝে ভুল প্রমাণিত হতো। পুকুরে পানির মান তখন খারাপ হতো এবং অনেক মাছ মারা যেতো।” এরপর ছংছিং মহানগরের কৃষি বিজ্ঞান একাডেমি জলজ কৃষি বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিশেষ কর্মদল গঠন করে। মাছের পুকুরের পানির মান পর্যবেক্ষণে আরও নির্ভুল সেন্সর স্থাপন করা হয় এবং পানির মানের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে এআই মডেল, পানির মান নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় সরঞ্জামের সাহায্যে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করা হয়। এতে পুকুরের পানির মানের পরিবর্তন দ্রুত পর্যবেক্ষণ ও উন্নত করা যায়।

পুকুরের পানির মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি, কিভাবে নির্ভুল পদ্ধতিতে মাছকে খাওয়ানো যায়? কম খাওয়ানো হলে মাছের সাইজ তুলনামূলকভাবে ছোট হবে। আবার বেশি খাওয়ানো হলে পুকুরের পানিতে দূষণ দেখা দেবে এবং মাছগুলো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে। তাই, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মাছগুলোকে খাওয়ানো জরুরি। প্রকৌশলী লি মাইয়ের মাছ চাষের অভিজ্ঞতা তেমন সমৃদ্ধ ছিল না। তিনি স্থানীয় গ্রামের জেলেদের কাছ থেকে মাছ চাষ শিখেছেন। সেই শিক্ষাই তিনি কাজে লাগানো চেষ্টা করেন মাছ চাষের ক্ষেত্রে। পরে মাছ প্রজনন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে, লি মাই এবং তার সহকর্মীরা, মাছকে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেন। এতে মাছের উত্পাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি ব্যয়ও কমেছে।

নির্দিষ্ট ও নির্ভুলভাবে মাছ খাওয়ানোর পদ্ধতিতে উত্পন্ন মাছের স্বাদ বেশ ভালো। যখন মাছের ওজন ৫০০ গ্রামে পৌঁছে, তখন পুকুর থেকে তুলে নিয়ে বাজারে বিক্রি করা যায়। অতীতকালে মাছের ওজন মাপ করার জন্য পুকুর থেকে মাছগুলো তুলে নিতে হতো। যেগুলো নির্দিষ্ট মাপের না, সেগুলোকে আবার পুকুরে ছেড়ে দিতে হতো। বারবার পুকুর থেকে মাছ তোলায় সেগুলো সহজে রোগে আক্রান্ত হতো। এ সমস্যা মোকাবিলায় লি মাই এবং তার সহকর্মীরা পানির নিচেই মাছগুলোর স্টেরিওস্কোপিক মনিটরিং ব্যবস্থা স্থাপনে চেষ্টা করেন। তারা সর্বপ্রথমে বিভিন্ন সাইজের মাছ ধরে ছবি তোলেন এবং এআই ব্যবস্থায় বিভিন্ন সাইজের মাছের ওজনের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালান। তারপর বিভিন্ন মানের অস্বচ্ছ পানিতে প্রতিসরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পানির নিচেই মাছের সঠিক সাইজ পরিমাপের ব্যবস্থা নেন। এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মাছ লালনপালন করা যায় এবং পরিসংখ্যান অনুসারে কৃষিক্ষেতের শাকসবজির সঠিক পরিমাণের সার ও পানি দেওয়া সম্ভব হয়। এ সম্পর্কে লি মাই বলেন, লিয়াংপি এলাকার মাছ ও শাকসবজি ডিজিটাল কারখানায় মাছ বড় হওয়ার সময় ঐতিহ্যিক পদ্ধতির চেয়ে প্রায় অর্ধেক পর্যায় সঞ্চয় করা হয় এবং ম্যাশ ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। একই সাইজের মাছ পুকুরে মাছ লালনপালনের সংখ্যা ঐতিহ্যিক পুকুরের চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি এবং উপর তলায় শাকসবজি উত্পাদন পরিমাণও সাধারণ কৃষিক্ষেতের চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি। এখন এআই লালনপালন ব্যবস্থা যেন অভিজ্ঞ ও দক্ষ কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতো। তবে, মাছ ও শাকসবজির কারখানায় সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামের মেরামতকারী দরকার। ছংছিং মহানগরের কৃষি বিজ্ঞান একাডেমি এ উপলক্ষ্যে এআই কারখানার ডিজিটাল অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার চেষ্টা করে, যাতে মাছ ও শাকসবজি লালনপালন সরঞ্জামের অনলাইন চেকআপ, স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ, উত্পাদন রেকর্ড এবং বুদ্ধিমান প্রাথমিক সতর্কতা জারি করা সম্ভব হয়। চীনের বিভিন্ন এলাকার কৃষি বিশেষজ্ঞ ও সহকর্মীরা লি মাই’র ডিজিটাল কারখানা পরিদর্শন করতে আসেন। তারাও আরও বেশি জায়গায় এআই কারখানা স্থাপন করতে চান। ভবিষ্যতে এ কাজের ব্যাপক উন্নয়ন নিয়ে বেশ আশাবাদী লি।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn