বাংলা

পুণ্য হল সুশাসন, আর সুশাসন নির্ভর করে জনগণের ওপর

CMG2024-08-02 21:10:53

ইতিহাসকে দর্পন হিসেবে নিলে আমরা কোনো জাতির উত্থান-পতন জানতে পারি। জনগণের সমর্থন দেশের রাজনৈতিক ও আইনগত শাসনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। শাসনের লক্ষ্য হল জনগণের সমর্থন বা আনুগত্য পাওয়া। কেবল পণ্য দিয়ে সুশাসনের মাধ্যমে জনগণের মন জয় করা যায় না। তাহলে, সুশাসন করতে চাইলে কী কী করতে হবে? ‘শাংশু’ এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজার পুণ্য হল সুশাসন পরিচালনা করা। সুশাসন বাস্তবায়নের চাবিকাঠি হল জনগণকে সঠিকভাবে লালন-পালন করা। শাসকের উচিত নিজের পুণ্য বা নৈতিকতা সঠিক রাখা, সুনীতি পরিচালিত করা এবং মন্দনীতি পরিবর্তন করা এবং জনসাধারণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও পোশাক-আশাক দেওয়া। এ তিনটি কাজ করতে পারলে রাজ্য সুশাসিত হবে। তিনি আরও বলেন, একটি দেশ পরিচালনা করতে হলে জনগণের ইচ্ছা এবং দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি উপলব্ধি করতে হবে। আমাদের রাজনীতিবিদদের উচিত জনগণকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসা ও মূল্যায়ন করা। জনগণের সামগ্রিক প্রশাসনে জনগণের উপকার করা মানে জনগণ শান্তিতে ও তৃপ্তিতে কাজ করতে পারে, এর অর্থ হল জনগণ সদাচারী।

‘কনফুসিয়াসের পারিবারিক উক্তি’ অনুসারে, লু-এর রাজা আইকুং কনফুসিয়াসকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কীভাবে সুশাসন করা উচিত?’ কুনফুসিয়াস বললেন, “দেশ সুশাসন চাইলে জনগণকে সমৃদ্ধ ও দীর্ঘায়ুর অধিকারী করতে হবে”। আইকং আরো জিজ্ঞাস করলেন, “তা কীভাবে করা যায়?” কনফুসিয়াস বললেন, “শ্রম এবং কর হ্রাস করুন। তাহলে জনগণ সমৃদ্ধ হবে। শিষ্টাচার শিখিয়ে দেন। তাহলে জনগণ অপরাধ ও রোগ থেকে দূরে থাকতে পারবে। নিরাপদ হলে দীর্ঘায়ু হবে।” আইকং বললেন, “আমি যদি সত্যি আপনার কথামতো, জনগণের শ্রম ও কর কমিয়ে দেই, তাহলে দেশ গরিব হয়ে যাবে না?" কনফুসিয়াস বললেন: “মহাকাব্যে লেখা আছে, উদারতা ও ভ্রাতৃত্বসুলভ গুণী রাজা যেন প্রজাদের পিতামাতার মত। আর পিতামাতা হলে, সন্তানরা ধনী হলে পিতামাতা কি গরিব হতে পারে?” কনফুসিয়াস ভাবলেন, রাজা এবং প্রজা অভিন্ন কল্যাণের একটি কমিউনিটি। যখন জনগণ শান্তি ও তৃপ্তিতে বাস করে কাজ করে এবং দেশ শান্তি ও স্থিতিশীল থাকতে পারে, তখন স্বভাবতই রাজার অভাব হবে না।

প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত, ইতিহাসের পরিবর্তনের পিছনে সর্বদা জনমতের ভূমিকা রয়েছে। তারাই জনগণের সমর্থন পান, যারা জনগণের কণ্ঠস্বর শুনেছেন এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষা করেছেন। তারাই ক্ষমতা থেকে বিচ্যুত হন, যারা জনগণের কণ্ঠস্বর উপেক্ষা করেছেন এবং জনগণের স্বার্থের বিরোধিতা করেছেন। শাসকের জন্য প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে জনগণকে মূল্য দেওয়া, মানুষকে ভালোবাসা, জনগণের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং জনগণের অনুভূতি বোঝা।

‘ইয়ানজি’ বইতে একটি গল্প লিপিবদ্ধ আছে। বসন্ত এবং শরতের সময়কালে, যখন রাজা ছি চিংকং সিংহাসনে ছিলেন, তখন এক বছরে টানা তিন দিন প্রচুর তুষারপাত হয়। ছি ছিংকং একটি বিরল মূল্যবান সাদা চামড়ার কোট পরে রাজপ্রাসাদে বসেছিলেন। যখন মন্ত্রী ইয়ানজি প্রবেশ করেন, তখন রাজা ছি চিংকং বললেন: “এটা সত্যিই অদ্ভুত, তিনদিন তুষার পড়লেও একটুও শীত লাগেনি।” এ কথা শুনে ইয়ানজি বললেন, “মহারাজ, আপনি সত্যি শীত অনুভব করেন নি? আমি শুনেছি, প্রাচীনকালের মহারাজারা, যখন নিজেরা সুখাদ্য খেতেন তখন মানুষের ক্ষুধার কথা ভুলে যেতেন না। নিজে গরম কাপড় পরার পরও মানুষের শীত লাগার কথা ভুলে যেতেন না। নিজে আরামে থাকার পরও মানুষের কষ্টের কথা ভুলে যেতেন না। এটা দুঃখের বিষয় যে আপনার এমন অনুভব হয়নি।” ইয়ানজি যা বললেন তা শোনার পর, ছি চিংকুং একমত হয়ে বললেন, “আমি আপনার শিক্ষা বুঝতে পেরেছি।” তারপর রাজা আদেশ দিলেন যে, রাজপ্রাসাদের মধ্যে মোটা কাপড় ও খাবার জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা হোক।

জনগণের হৃদয়, জনমত এবং ইচ্ছা দেশের শাসনের ভিত্তি। রাজপ্রাসাদে থাকা শাসক যদি সর্বদা জনগণের জন্য চিন্তা না করেন, তাহলে সত্যিকার অর্থে জনগণকে ভালবাসতে পারবেন না এবং তাদের উপকার করতে পারবেন না। যে শাসক মানুষের হৃদয়ের কথা অনুভব করতে পারেন, প্রকৃত চাহিদা মেটাতে পারেন, তখন সত্যিকার অর্থে তাঁর সুশাসন উপলব্ধি করার ক্ষমতা হবে।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn