বাংলা

কেন চীনা বাবা-মারা বাচ্চাদের ওপর রাগ করেন?

CMG2024-04-29 15:00:36

শিশুদের যথাযথভাবে বেড়ে ওঠার সাথে পারিবারিক শিক্ষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তবে, ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের অবস্থাও ভিন্ন ভিন্ন। বাবা-মায়ের সঙ্গে বাচ্চাদের সম্পর্ক কেমন হবে, তা পরিবারের অবস্থারও ওপরও নির্ভর করে। বিষয়টি নিয়ে চীনা সমাজে ব্যাপক আলোচনা হয়। অনেক পরিবারে বাচ্চাদের দুষ্টুমি বা ভুল আচরণের কারণে বাবা-মা দ্রুত রেগে যান এবং মাথা ঠাণ্ডা হবার পর অনুতপ্ত হন। এটা নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা বাচ্চাদের সঙ্গে পিতামাতার সুসম্পর্ক রাখার ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দেবো; আলোচনা করবো।

বস্তুত, যখন কোনো পরিবারে একটি বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে, তখন সবাই খুশী হন। বাচ্চা যখন ছোট থাকে, তখন বাবা-মাকে শুধু তার খাওয়া, থাকা আর স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। তবে, যখন বাচ্চা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, তখন বাবা-মার চিন্তা ও কাজ বাড়ে। স্কুলে যাওয়া শুরু হলে, বাচ্চার হোমওয়ার্ক আর দুষ্টুমি বাবা-মার মাথা ব্যথার কারণ হয় অনেক সময়ই। এ সময় বাবা-মা অনেক সময় মেজাজ ঠিক রাখতে পারেন না। মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, সাধারণভাবে মানুষ বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনার জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করে না, আবার করেও। এটা নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। উদাহরণস্বরূপ, বাবা-মা যখন ব্যস্ত, তখন তাদের শিশু-সন্তানটি হয়তো টেবিল থেকে গ্লাস নিতে গিয়ে তা মাটিতে ফেলে ভেঙ্গে দিল। অনেক বাবা-মা এতে রাগ দেখাবেন। আবার কোনো কোনো বাবা-মা এই ভেবে রাগ করা থেকে বিরত থাকবেন যে, বাচ্চাকে তাঁরাই ঠিকমতো গ্লাস ধরা শেখাননি।

বাবা-মাকে মনে রাখতে হবে যে, নিজেদের মেজার নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। বাচ্চারা ভুল করতে করতে শেখে। তাদের সময় দিতে হবে। তা ছাড়া, শেখানোর দায়িত্বটাও বর্তায় বাবা-মার ওপর। আর, বাচ্চাদেরকে বাচ্চাদের মতোই ট্রিট করতে হবে। বড়দের সঙ্গে তাদের তুলনা করা চলবে না। তাদেরকে ভুল করতে দিতে হবে। তারা ভুল থেকে শিখবে।

বাচ্চারা রাগ করার মতো কাজ করলেও, মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। যদি দেখেন, বাচ্চার কোনো কাজ আপনার পছন্দ হচ্ছে না, তখন আগে মেজার নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। রাগের মাথায় বাচ্চাকে কিছু বলে বসবেন না বা বাচ্চার গায়ে হাত তুলবেন না। আগে নিজের মাথা ঠাণ্ডা করুন, তারপর সময় নিয়ে বাচ্চার সঙ্গে কথা বলুন; বাচ্চাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দিন। বাচ্চাদের অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য বকাঝকা তেমন একটা কাজ করে না, নিয়মিত কথা বললে বরং তা কাজে দেয়। বাচ্চাকে বলুন, কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়। কেন উচিত নয়, তা-ও ব্যাখ্যা করতে হবে। কারণ, আপনি যেটা এতোবছরের শিখেছেন, তা ওই বাচ্চা চট করে শিখে ফেলবে না। তার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। সে প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দিতে হবে।

মেজাজ নিয়ন্ত্রণে না-থাকলে আমরা সাধারণত সামান্য অপরাধকেও অনেক সময় বড় করে দেখি। তখন বাচ্চাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগটাও দিতে চাই না। আবার অনেকে বলেন, একটা শিশু আবার কী বলবে? এটা ঠিক না। শিশুদেরকে অবজ্ঞা করা বা তাদের বুদ্ধিকে হেয় করার কোনো কারণ নেই।

যদি আপনি কথায় কথায় বাচ্চার ওপর রাগ করেন, তখন এক পর্যায়ে গিয়ে আপনার রাগকে আর পাত্তা দিবে না সে। একসময় দেখবেন মুখে মুখে তর্ক জুড়ে দিচ্ছে। এতে, সন্তানের সাথে আপনার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকবে, যা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাবা-মার উচিত সন্তানকে শান্ত মাথায় বোঝানো এবং এমন শব্দ ব্যবহার করা যা সে সহজে বুঝবে। বড়দের বোঝানোর জন্য যেসব শব্দ আমরা ব্যবহার করি, বাচ্চাদের জন্য তা কার্যকর নাও হতে পারে। যুক্তি দিন যা বাচ্চা বুঝতে পারবে। ধরুন আপনার বাচ্চা প্রতিদিন দেরিতে হোমওয়ার্ক করে। তো, তাকে বলুন, দেরিতে হোমওয়ার্ক করা মানে তোমার দেরিতে বিছানায় যাওয়া, যা তোমার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এভাবে বললে বাচ্চা বুঝবে। বাচ্চা পরীক্ষায় খারাপ করেছে? মেজার ঠিক রাখুন। শান্ত গলায় বলুন, পরীক্ষা খারাপ হলো কেন? কী মনে হয় তোমার? দেখবেন, বাচ্চা নিজেই এর উত্তর দেবে। ‘তুমি অলস, লেখাপড়া করো না, তাই রেজাল্ট খারাপ হয়েছে’ বলে বসবেন না। এতে হিসে বিপরীত হতে পারে।

বাচ্চার সবকিছুতেই দোষ ধরতে যাবেন না। কিছু কিছু দোষত্রুটি উপেক্ষা করুন, যদি তা তেমন মারাত্মক না হয়। সবসময় বাচ্চার পিছনে লেগে থাকলে, তার দোষত্রুটি খুঁজে বের করলে, স্বাভাবিকভাবেই সে বিরক্ত হবে এবং আপনার সাথে স্বাভাবিক ও সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠবে না। আপনি যে তার ভালোর জন্যই বলছেন, তা তাকে বুঝতে দিন।

পরিবারে সবসময় শান্তিপূর্ণ ও আনন্দদায়ক পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব নয়। তবে, যত বেশি করে নিজের নেতিবাচক মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, ততই মঙ্গল। যদি কখনও রেগে যানও, পরে বাচ্চার সঙ্গে তার কারণ ব্যাখ্যা করুন, তাকে বুঝতে দিন যে আপনার এভাবে রেগে যাওয়া ঠিক হয়নি। মনে রাখবেন, বাচ্চাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ সবসময় ভালো ফল দেয়।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn