বাংলা

আগামী ৫০ বছরে চীন-ব্রাজিল ‘সোনালী অংশীদার’-এর গল্প আরও আকর্ষণীয় হবে

CMG2024-11-22 18:30:00

২২ নভেম্বর: “এটি চীন-ব্রাজিল সম্পর্কের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত”, “দুই পক্ষ ৩০টিরও বেশি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে”, “দুই দেশের সম্পর্ক আগামী ‘সুবর্ণ ৫০ বছর শুরু করেছে”.... ২০ নভেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ব্রাজিলে রাষ্ট্রীয় সফর প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক মহল খুব মনোযোগ দিয়েছিল। পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের দুটি প্রধান উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে, চীন এবং ব্রাজিল এ বছর কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগের সূচনা করে।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা প্রেসিডেন্ট সি’র জন্য সর্বোচ্চ সৌজন্যে একটি স্বাগত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ব্রাজিলিয়ান শিল্পীর গাওয়া একটি চীনা গান ‘আমার মাতৃভূমি’ চীন এবং ব্রাজিলের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বকে প্রকাশ করে। ২০ তারিখে আলোচনার সময়, দুই রাষ্ট্রপ্রধান চীন-ব্রাজিল সম্পর্কের ভবিষ্যত উন্নয়নের বিষয়ে একটি নতুন কৌশলগত ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তারা যৌথভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবস্থানকে একটি আরও ন্যায্য বিশ্ব ও টেকসই গ্রহ গড়ে তোলা অভিন্ন কল্যাণের চীন-ব্রাজিল কমিউনিটিতে উন্নীত করার এবং একই সাথে ব্রাজিলের উন্নয়ন কৌশলের সাথে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের যৌথ নির্মাণকে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবস্থানের এই উন্নতিকে চীন-ব্রাজিল সম্পর্কের একটি নতুন মাইলফলক বলা যেতে পারে। এটি দেখায় যে উভয়পক্ষ ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ, মানবজাতির ভবিষ্যত এবং অভিন্ন কল্যাণের কমিউনিটি গড়ে তোলার দায়িত্বকে মূর্ত করে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের বৈশ্বিক, কৌশলগত এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রকৃতিকে তুলে ধরে।

বর্তমানে, বিশ্ব কাঠামো দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে, একের পর এক নতুন চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তন আসছে এবং ‘গ্লোবাল সাউথ’ সম্মিলিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দুটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে চীন ও ব্রাজিল উভয়েই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং জনগণের মঙ্গলকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নত অবস্থানকে একটি নতুন সূচনা হিসাবে গ্রহণ করে, চীন এবং ব্রাজিল কীভাবে পরবর্তী ‘সুবর্ণ ৫০ বছর’ শুরু করতে পারে?

‘অভিন্ন লক্ষ্য’, ‘অভিন্ন উন্নয়ন’, ‘অভিন্ন দায়িত্ব’ এবং ‘অভিন্ন সুখ-দুঃখ’— প্রেসিডেন্ট সি চীন-ব্রাজিল সম্পর্কের ভবিষ্যত উন্নয়নের বিষয়ে চারটি পরামর্শ পেশ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাস গভীর করা, উন্নয়ন কৌশল সংযোগ, বিশ্ব শান্তি ও ন্যায়বিচার রক্ষা করা এবং মানবজাতির অভিন্ন কল্যণের কমিউনিটি গড়ে তোলা ইত্যাদি, যা চীন ও ব্রাজিলের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে দিকনির্দেশনা প্রদান করে এবং নতুন যুগে দু’দেশের সম্পর্ককে সমৃদ্ধ করে। প্রেসিডেন্ট লুলা বিশ্বাস করেন যে, প্রেসিডেন্ট সির সফর ব্রাজিল-চীন সম্পর্কের নতুন ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

উন্নয়ন হল সমস্ত সমস্যা সমাধানের মূল চাবিকাঠি, এবং এটাও উন্নয়নশীল দেশগুলোর আকাঙ্ক্ষা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ব্রাজিলের হাজার হাজার পরিবারকে সবুজ বিদ্যুতে আলোকিত করা থেকে শুরু করে, নতুন ধারণা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্রাজিলের কৃষিকে ক্ষমতায়িত করে। উদীয়মান ক্ষেত্রে সহযোগিতায় চীন এবং ব্রাজিল উন্নয়ন কৌশলগুলোর সংযুক্ত প্রচার করে চলেছে, স্থানীয় জনগণের জন্য বিশাল অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বিনিয়োগ সুযোগ-সুবিধা এনে দিয়েছে।

এই সফরের সময়, দুই রাষ্ট্রপ্রধান চীন ও ব্রাজিলের মধ্যে বাস্তবিক সহযোগিতাকে কীভাবে উন্নীত করা যায় সে বিষয়ে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, উন্নয়ন পরিকল্পনা সংযুক্ত করার মাধ্যমে চীন অর্থনীতি ও বাণিজ্য, অবকাঠামো, অর্থ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতাকে আরও গভীর করার এবং মহাকাশ, কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিচ্ছন্ন শক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার প্রস্তাব করেছে। ব্রাজিল পক্ষ চীনকে ‘ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসাবে প্রশংসা করেছে এবং জোর দিয়েছে যে উভয় পক্ষের উচিত আলোচনা জোরদার করা এবং অবকাঠামো, অর্থ, শিল্প চেইন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিবেশ সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রচার করা। চীনা কোম্পানিগুলো ব্রাজিলে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা করার জন্য চীনের সাথে সংযোগ ও সরবরাহের মাত্রার উন্নতির জন্য উন্মুখ ব্রাজিল।

প্রধান উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধি হিসেবে চীন-ব্রাজিল সম্পর্ক বিশ্ব শাসনের উন্নতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। ইউক্রেন সঙ্কটের রাজনৈতিক মীমাংসার প্রচারে যৌথভাবে ‘ছয় দফা ঐকমত্য জারি করা থেকে শুরু করে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলকে যৌথভাবে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানানো এবং ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা, চীন ও ব্রাজিল সত্যিকার বহুপাক্ষিকতা অনুশীলন করেছেন এবং সত্য কথা বলার জন্য জোর দিয়েছে। এবার চীন ও ব্রাজিল সর্বসম্মতিক্রমে বলেছে যে তারা ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, আঞ্চলিক সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি প্রথাগত ও অপ্রচলিত ক্ষেত্রে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোকে যৌথভাবে মোকাবেলা করতে জাতিসংঘ, জি২০ এবং ব্রিক্স-এর মতো বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবে।

একটি ব্রাজিলীয় প্রবাদ আছে, ‘বন্ধুত্ব হল ওয়াইনের মতো, যত বেশি দিন স্থায়ী হয়, তত ভাল হয়।‘ ৫০ বছর পর, চীন-ব্রাজিল সম্পর্ক একটি নতুন সূচনা বিন্দুতে দাঁড়িয়েছে, পূর্ব এবং পশ্চিম গোলার্ধের ‘সোনালী অংশীদার’ একটি অভিন্ন কল্যাণ ও লক্ষ্যের পৃথিবী গঠনে একসাথে কাজ করবে। প্রেসিডেন্ট সি ব্রাজিলের ফুটবল কিংবদন্তি পেলেকে উদ্ধৃত করে বলেছেন: “সবচেয়ে চমত্কার গোল হল পরেরটি”। চীন-ব্রাজিল সম্পর্কের আরও চমত্কার অধ্যায় ভবিষ্যতে উন্মোচিত হবে।"

Close
Messenger Pinterest LinkedIn