বাংলা

‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা স্থানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত

CMG2022-08-14 19:24:57

চীনের মানবাধিকার একাডেমী হতে গত মঙ্গলবার ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা স্থানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে মধ্যপ্রাচ্য ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইনের বিপরীতে যুদ্ধ, মানবজাতির বিরুদ্ধে হুমকি, ইচ্ছামতো বন্দী রাখা, নির্যাতন, একতরফা-ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানা অপরাধ করেছে, যা মানবাধিকারের সংকট তৈরি করেছে এবং সুদূরপ্রসারী কুপ্রভাব ফেলেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চালায়, বেসামরিক মানুষ হত্যা করে এবং অস্তিত্বের অধিকার লঙ্ঘন করে। প্রতিষ্ঠা থেকে দেশটি মাত্র ২০ বছর যুদ্ধ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের ‘যুদ্ধবাজ’ সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচয় লাভ করেছে।

মার্কিন স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউশন জার্নালের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকে সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে চালানো যুদ্ধ ও সামরিক অভিযান পৃথিবীর ৪০ শতাংশ দেশ ছাড়িয়েছে। মিত্র দেশগুলোকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় যুদ্ধ, আফগান যুদ্ধ ও ইরাক যুদ্ধ পরিচালনা করেছে। পাশাপাশি, লিবিয়া যুদ্ধ ও সিরিয়া যুদ্ধে গভীরভাবে জড়িত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সে সব দেশে যুক্তরাষ্ট্র বিরল মানবিক দুর্যোগ তৈরি করেছে।

মার্কিন ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যুদ্ধের মূল্য’ শীর্ষক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ১ লাখ ৭৪ হাজার মানুষ সরাসরি আফগান যুদ্ধে নিহত হয়। তাদের মধ্যে ৪৭ হাজার বেসামরিক মানুষ। পর

বিশ্বের পরিসংখ্যান ডাটাবেস সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৯০ হাজার ইরাকি বেসামরিক মানুষের যুদ্ধ ও সহিংস সংঘাতে প্রাণহানি হয়েছে। আর ৯২ লাখ ইরাকি শরণার্থী গৃহহীন হয়েছে। সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে অন্তত ৩.৫ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। আরও ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি গৃহহীন এবং ১ কোটি ৪০ লাখ বেসামরিক মানুষকে জরুরি মানবিক সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা স্থানে যুদ্ধ ও সহিংস সংঘাত তৈরি করে এবং তার পক্ষে না দাঁড়ানো দেশ ও সংস্থাকে দমন করে। যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সামরিক-অর্থনীতি ও চেতনা’র আধিপত্যবাদ রক্ষা করা। মার্কিন আচরণ মধ্যপ্রাচ্যসহ সংশ্লিষ্ট নানা দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্থানীয়দের উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য অধিকার গুরুতর লঙ্ঘন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র একতরফা-ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যাকে বিশ্বের একমাত্র ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগকারী দেশ’ হিসেবে গণ্য করা যায়। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘২০২১ সালের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা মূল্যায়ন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২১ অর্থ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকরী শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পরিমাণ ৯ হাজার চারশ’র বেশি। ইরানি প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি ক্ষমতাসীন থাকার সময় তৎকালীন ট্রাম্প সরকারের অবরোধে ইরানের কমপক্ষে ২০,০০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর ইরাকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র একতরফা-ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ফলে এ পর্যন্ত ইরাকে মাথাপিছু আয় ১৯৯০ সালের পর্যায়ে পৌঁছেনি। ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপে করে। এমন কি আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১০০ কোটিরও বেশি মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জব্দ করেছে, যা আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে পতনের মুখে ঠেলে দেয়।

মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ অগণিত। তা প্রমাণ করে যে, দেশটি বিশ্ব মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘনকারী। মধ্যপ্রাচ্য ও তার পার্শ্ববর্তী দেশ ও অঞ্চলের দুর্যোগে কথিত মার্কিন গণতন্ত্র ও মার্কিন মানবাধিকারের কপটতা খণ্ডিত হয়েছে। এক দিন তাদের সব অপরাধের দায় পরিশোধ করতে হবেই বলে আশা করা যায়।

রুবি/এনাম

Close
Messenger Pinterest LinkedIn