বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই ৯৭

CMG2024-11-21 14:17:23

১ চুহাই এয়ার শো মাতালেন নারী পাইলটরা

২. বাংলাদেশে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন

৩. অদম্য জীবন

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন।

আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর সাফল্য, সমস্যা, সম্ভাবনা ও এগিয়ে যাওয়ার পথ চলা নিয়ে। আজকের অনুষ্ঠানে রয়েছে সাম্প্রতিক এয়ার শো চায়নায় বিমানবাহিনীর নারী পাইলটদের কথা। রয়েছে বাংলাদেশে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠনের প্রসঙ্গে একটি বিশেষ প্রতিবেদন। আরও রয়েছে এমন একজন নারীর কথা যিনি শারিরীক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে এগিয়ে যাচ্ছেন জীবনের পথে।

চুহাই এয়ার শো মাতালেন নারী পাইলটরা

চীনের নারীরা জীবনের সব ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছেন দক্ষতার সঙ্গে। বিমান চালনার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই তারা। সদ্য সমাপ্ত এয়ার শো চায়নায় প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে সবাইকে চমকে দেন চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি এবং এয়ার ফোর্সের নারী পাইলটরা। শুনবো এই সাহসী নারীদের আকাশ ছোঁয়ার গল্প।

সদ্য সমাপ্ত ১৫তম চায়না ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস এক্সিবিশনে দর্শকদের বিস্মিত করেছেন নারী পাইলটরা। এয়ারশো চায়না নামের এই বিমান প্রদর্শনীতে এ বছর প্রথমবারের মতো চাইনিজ আর্মি, নেভি এবং এয়ার ফোর্সের নারী পাইলটরা তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করেন। তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হন অনেক তরুণী।

পিএলএ নেভির এই নারী পাইলটদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন ট্রেইনি নারী পাইলটরাও। নেভির ইনডোর এক্সিবিশন হলে নেভাল রিক্রুটমেন্টের জন্য সেটআপ স্থাপন করা হয়। সেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন পিএলএ নেভির প্রথম ফিমেল বেজড এয়ারক্রাফট পাইলট ট্রেইনি হান মং এবং ওয়াং মংতি নামের দুজন উজ্জ্বল তরুণী।

হান মং বলেন, "এটাই আমার প্রথমবারের মতো এয়ারশো চায়নাতে যোগদান করা, এবং আমি এখানে এসে খুব রোমাঞ্চিত এবং গর্বিত। পিএলএ নৌবাহিনীকে অনেক নতুন সরঞ্জামের পাশাপাশি অত্যাধুনিক বিমান উন্মোচন করতে দেখে দারুণ ভালো লাগছে। নৌবাহিনীর একজন পাইলট প্রশিক্ষাণার্থী হিসেবে আমি আশা করি আমার দেশের জলসীমার সুরক্ষার জন্য একদিন নিজেও এই বিমানগুলো ওড়ানোর সুযোগ পাবো। ”

এই প্রথমবারের মতো এয়ার শো চায়নাতে চাইনিজ আর্মি, নেভি এবং এয়ার ফোর্সের নারী পাইলটরা অংশ নিচ্ছেন।

পিএলএ নৌবাহিনীর প্রথম নারী পাইলট প্রশিক্ষণার্থীরা ২০২৩ সালে নথিভুক্ত হযন। তাদের সকলেই সামরিক ও বেসামরিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্প্রতিক স্নাতক। তারা ২০০০ এর দশকে জন্ম নেয়া নতুন প্রজন্মের নারী।

ওয়াং বলেন "নৌবাহিনীর পাইলট হওয়ার অর্থ হল আমাদের অবশ্যই বিমানবাহী রণতরীতে অবতরণ করতে হবে। আমরা জলে বাস করি এবং ক্যারিয়ার প্লে চালানোর কাজ করি, এবং তাই আমরা প্রথমে নাবিক, তারপর পাইলট এবং অবশেষে যোদ্ধা।”

তরুণ প্রজন্মের এই নারী পাইলটরা আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন ভবিষ্যতের দিকে।

বাংলাদেশে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন

নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী শিরীন পারভিন হককে প্রধান করে ১০ সদস্যের নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে। দেশের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে এ কমিশন গঠন করা হয়েছে। জাতীয়ভাবে নারীদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এ কমিশন গঠনের বিস্তারিত রয়েছে আফরিন মিমের প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশে সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভিন হককে কমিশনের প্রধান করা হয়েছে। এছাড়া এ কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- মাহীন সুলতান, সিনিয়র ফেলো, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সারা হোসেন, অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, কল্পনা আক্তার, সভাপতি, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, হালিদা হানুম আক্তার, নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুমাইয়া ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র, নিরুপা দেওয়ান, সাবেক সদস্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ফেরদৌসী সুলতানা, সাবেক সিনিয়র সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক, নিশিতা জামান নিহা, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।

কমিশনের কার্যপ্রক্রিয়াতে বলা হয়েছে কমিশন অবিলম্বে কার্যক্রম শুরু করবে এবং সংশ্লিষ্ট সব মতামত বিবেচনা করে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করবে।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ছাড়াও অন্যান্য সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য খাত, শ্রমিক অধিকার এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠনের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

অদম্য জীবন

মানুষের জীবনে অনেক প্রতিবদ্ধকতা আছে। রয়েছে বাধা বিপত্তি। কিন্তু অদম্য জীবনী শক্তি দিয়ে যারা সব বাধা জয় করে এগিয়ে চলেন তারাই তো জীবন যুদ্ধের সাহসী সৈনিক। এমনি একজন অদম্য যোদ্ধা নারী চাং ছিহুই। শুনবো তার গল্প। বলবেন হোসনে মোবারক সৌরভ

চাং ছিহুই। ২৯ বছর বয়সী এই তরুণী জীবন যুদ্ধের এক লড়াকু সৈনিক। চীনের হুবেই প্রদেশের চিংমেন সিটিতে তার জন্ম।

চাং এর বয়স যখন মাত্র তিন বছর তখন এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় তাকে দেহের নিচের অংশ হারাতে হয়। ফলে তিনি পরিণত হন অর্ধ শরীরের এক মানুষে। কিন্তু এরপরও দমে যাননি শিশু চাং। তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যান।

ছোটবেলা থেকেই বাঁশি বাজানো এবং খেলাধুলার প্রতি তার ছিল প্রবল আগ্রহ। তিনি মিনজু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাম্বু ফ্লুট বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। শুধু তাই নয়, প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য জাতীয় পর্যায়ে শিল্প কর্ম পরিবেশনার প্রতিযোগিতায় যন্ত্রসংগীত বিভাগে সেরা শিল্পীর পুরস্কার জয় করেন তিনি। একবার নয়, পরপর তিনবার এ পুরস্কার ঘরে তোলেন চাং।

এখানেই থেমে থাকেননি এ অদম্য প্রতিভাময়ী নারী। খেলাধুলাতেও সমানভাবে নিজের পারদর্শিতা প্রদর্শন করে চলেছেন।

পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের ত্যছিং কাউন্টির মোকানশান ইন্টারন্যাশনাল টুরিস্ট রিসোর্টে সম্প্রতি আয়োজিত হয় স্পার্টান রেস কম্পিটিশন নামে এক দৌড় প্রতিযোগিতা।

এই দৌড় প্রতিযোগিতায় অনেকগুলো বাধা পার হতে হয় যা অত্যন্ত কঠিন । চাং ছিহুই এখানেও কৃতিত্বের পরিচয় দেন। তিনি ৬.৬ কিলোমিটার দূরত্ব এবং ২৩ অবস্ট্রাকল স্প্রিন্ট রেস মাত্র ৩ ঘন্টা ১৩ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে অতিক্রম করেন।

চাং ছিহুই প্রমাণ করেছেন গুরুতর শারিরীক প্রতিবন্ধিতা অতিক্রম করেও একজন মানুষ কিভাবে অদম্য প্রাণশক্তিতে এগিয়ে যেতে পারে জীবন যুদ্ধে জয়ের অভিমুখে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: আফরিন মিম

আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠান শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। আগামি অনুষ্ঠানে শোনার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Close
Messenger Pinterest LinkedIn