আকাশ ছুঁতে চাই ৫৩
১. ফুল সাজানোর শিল্পী
২.শাহেনা বেগমের শীতের পিঠা
৩. ইংরেজি বলায় দক্ষ সিয়ে হোংইং
নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।
ফুল সাজানোর শিল্পী
চীনের ইয়ুননান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং শহরের দোওনান ফুলবাজার এশিয়ার সবচেয়ে বড় তাজা ফুলের মার্কেট। গেল একদশক ধরে এখানে ফুল সাজানোর শিল্পী হিসেবে কাজ করছেন ফ্লোরিস্ট ইয়াং ছিয়াওইয়ান। শুনবো তার গল্প।
কুনমিংকে বলা হয় ফুলের শহর ও চিরবসন্তের শহর। বর্তমানে কুনমিংয়ের দোওনান ফ্লাওয়ার মার্কেট হলো এশিয়ার বৃহত্তম তাজা ফুলের বাজার। এখানে তাজা ফুল, তাজা ফুলের সাজানো নানা রকম তোড়া, ফুলের কারুশিল্প, শুকনো ফুলের নানা রকম নকশা ইত্যাদি পাওয়া যায়। ফুল সাজানোর কাজ করেন ফ্লোরিস্টরা।
এমনি একজন ফ্লোরিস্ট ইয়াং ছিয়াওইয়ান। এই শিল্পী নারী এক দশক ধরে ফুল শিল্পে কাজ করছেন। তিনি তার গ্রাহকদের নানা রকম পরামর্শও দিয়ে থাকেন। কিভাবে উচ্চমানের ফুল নির্বাচন করতে হয়, ফুল সাজানোর জন্য একটি দলের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হয় এবং ফুল সাজানোর আরও নানা খুঁটিনাটি।
ইয়াং বলেন, ‘ফ্লোরিস্টের কাজ মোটেই সহজ নয়। ফুলগুলো প্রসেস করার যন্ত্রপাতিতে প্রায়ই হাত কেটে যায়। কিন্তু যখন ফুলের শিল্পকর্ম সম্পূর্ণ হয় তখন দারুণ এক পরিতৃপ্তি পাওয়া যায়।’
ইয়াং ব্যাখ্যা করেন যে ফুল শিল্পের একজন কর্মী ও শিল্পী হিসেবে তিনি নিবেদিত। তিনি ফ্লোরাল আর্ট বা ফুল সাজানোর শিল্পকে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে দিতে চান।
তিনি নিজে এটাকে শিল্পে পরিণত করেছেন এবং তার ইচ্ছা ফুল সাজানোর এই শিল্পকে আরও নিখুঁত করে তোলার।
আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে দোওনান স্ট্রিটে মাত্র কয়েকটি ফুলের দোকান ছিল।
এখন এখানে বিশাল সব মার্কেট গড়ে উঠেছে। গড়ে উঠেছে ফ্লোরিস্টের মতো পেশা যেখানে সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছেন ইয়াং ছিয়াওইয়ানের মতো দক্ষ কারুশিল্পীরা।
প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া
শাহেনা বেগমের শীতের পিঠা
বাংলাদেশের শীত মৌসুমে অনেক দরিদ্র মানুষ রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করে জীবিকা অর্জন করেন। সাধারণত নারীরাই এই পেশায় অগ্রণী। কারণ গ্রামীণ জনপদগুলোতে নারীরাই পিঠা তৈরিতে বেশি দক্ষ। গ্রামজীবন থেকে শহরে এসে ছিন্নমূল মানুষরা নিজের পিঠা তৈরির দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে খুঁজে নিতে চান জীবিকার পথ।
এমনি একজন দরিদ্র নারী শাহেনা বেগম। শীতের পিঠা বিক্রি করে তিনি নিজের জীবন চালাচ্ছেন। শাহেনা বেগমের জীবন সংগ্রামের কথা জানবো এখন।
ঢাকার পথচলতি মানুষ শীতকালে একটু উষ্ণতার আশায় গরম গরম পিঠা খেতে ভালোবাসেন। এই পিঠা বিক্রি করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করছেন দরিদ্র নারী শাহেনা বেগম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারাম পুর গ্রামে জন্ম নেয়া শাহেনা বেগম ঢাকায় আসেন ছিন্নমূল হয়ে।
১০ বছর ধরে ঢাকারবাড্ডা এলাকার একশ ফিট ফ্যামিলি বাজার রোডে পিঠা তৈরি ও বিক্রি করছেন। এই পিঠা বিক্রি করেই চলছে তার সংসার। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার।
এলাকার প্রায় সব শ্রেণী-পেশার মানুষই শাহেনার পিঠার গ্রাহক, তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের নিত্য সকাল-বিকালের নাস্তায় শাহেনার পিঠাই ভরসা। সকাল থেকে দশটা এগারোটা পর্যন্ত আবার বিকেল বেলা পিঠা তৈরি করেন তিনি। এর ফাঁকে নিজের ঘর সংসারের কাজও করতে হয় তাকে।
সারা বছর পিঠা তৈরি করলেও শাহেনা সিএমজি বাংলাকে জানান শীতের সময় তার পিঠা বেশী বিক্রি হয়।
শাহেনা সাধারণত তিন ধরনের পিঠা তৈরি করেন চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা ও তেলের পিঠা । এসব পিঠার সাথে থাকে জিভে জল আনা মুখোরোচক সব ভর্তা ও চাটনি, যেমন ধনে পাতার ভর্তা, শুটকি ভর্তা, তেঁতুল চাটনি, সরিষা ভর্তা ইত্যাদি।
শাহেনার পিঠা তৈরির উপকরণ আটা-ময়দা, গুড়-চিনি, সরিষা ও অন্যান্য সব নিত্য পণ্যের দাম বাড়লেও তিনি নিম্ন আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে তার পিঠার দাম আগের মতো ১০ টাকাই রেখেছেন।
সারা বাংলাদেশে যেখানে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির আভাস পেতে না পেতেই ব্যবসায়ীরা মূল্য বৃদ্ধির এক অসাধু পায়াতাড়া করেন সেখানে শাহেনার মতো ক্ষুদ্র পরিসরের সৎ ব্যবসায়ীরা নিভৃতেই সংগ্রাম করে চলেছেন। তাদের জীবন সংগ্রাম যেন বাংলাদেশের অসংখ্য সাধারণ নারীর সৎভাবে বেঁচে থাকার নিরন্তর চেষ্টার এক আশা জাগানিয়া কাহিনী।
প্রতিবেদন ও ছবি: নাসরুল্লাহ মানসুর
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
কণ্ঠ : শুভ আনোয়ার
ইংরেজি বলায় দক্ষ সিয়ে হোংইং
চীনে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বচ্ছন্দ গতিতে ইংরেজি বলার দক্ষতা খুব বেশি দেখা যায় না। তবে দারুণভাবে ইংরেজি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসামান্য জনপ্রিয়তা পেয়েছেন সিয়ে হোংইং নামে একজন ফলবিক্রেতা নারী। কিভাবে তিনি ইংরেজি শিখলেন সে এক মজার গল্প।
প্যাকেজ: সিচুয়ান প্রদেশের ছেংতু শহরের এক নারী সিয়ে হোংইং। তিনি পথে পথে ফল বিক্রি করেন। বিদেশি পথচারী ক্রেতাদের সঙ্গে তিনি চোস্ত ইংরেজিতে কথা বলেন। সম্প্রতি তার এই চমৎকার ইংরেজি ভাষায় কথা বলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে এখন অনুসারীর সংখ্যা ৪৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
সিচুয়ান প্রদেশের চিয়ানইয়াংয়ের বাসিন্দা ৪৯ বছর বয়সী সিয়ে হোংইং গেল ছয় বছর ধরে রাজপথে ডুমুর ফল বিক্রি করছেন। তার লেখাপড়ার দৌড় মিডল স্কুল অবধি। কয়েক বছর আগে এক ক্রেতাকে তিনি কিছুতেই তার কথা বোঝাতে পারছিলেন না। এতে তার মনে হয় যে, ভিন্ন ভিন্ন আঞ্চলিক উচ্চারণ ও ভাষায় যোগাযোগের চেয়ে ইংরেজি আয়ত্ত করা সহজ হবে। তিনি একটি চীনা-ইংরেজি অভিধান কিনে ভাষা শেখা শুরু করেন। এরপর থেকে তার ইংরেজি ভাষা শেখা শুরু হয়। নিজের চেষ্টায় ইংরেজি ভাষা শেখেন তিনি। বিভিন্ন নেট চ্যানেল ঘেঁটে ইংরেজি বলার তালিম নেন নিজে নিজে। এরপর আর ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে অসুবিধায় পড়তে হয়নি তাকে।
ফল বিক্রেতার মুখে ইংরেজি ভাষার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তিনি বেশ পরিচিতি পান।
এখন তার জনপ্রিয়তা অনেক। দেশি বিদেশি অনেকেই তার কাছ থেকে ফল কেনেন। সিয়ে এখন ভাবছেন তার ফল বিক্রির ব্যবসাকে আরও বাড়াবেন। ভারী বোঝা বয়ে পথে পথে ফল বিক্রি করতে বেশ কষ্ট হয় তার। তাই আরেকটু ভালো থাকার আশায় তিনি ফলের গাড়ির কথা ভাবছেন।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: রহমান
কণ্ঠ: আফরিন মিম
সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল