বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৩১-China Radio International

cri2021-07-22 16:28:50

আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৩১

যা থাকছে এবারের অনুষ্ঠানে

১. চীনা-বাঙালির সংসারে ঈদ

২. মহামারীর ক্রান্তিকালে ঈদ

৩. চীনের মুসলিম নারীদের ঈদুল আজহা

৪. গান: শিল্পী সু ছিয়ান ইয়া। গানটির শিরোনাম: চলো ঘুরে আসি সিনচিয়াং

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। ঈদ মোবারক।

কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। ঈদের আমেজ, ঈদের আনন্দ এখন ছড়িয়ে আছে সারা দেশে। করোনা মহামারির এই ক্রান্তিকালেও ঈদের উৎসবে ও কোরবানির ত্যাগের মহিমায় প্রকাশ পাচ্ছে জীবনের উজ্জ্বলতা।

চীনা-বাঙালির সংসারে ঈদ

সাক্ষাৎকার

চীনে প্রবাসী বাঙালিরা যেমন ঈদ উদযাপন করেন তেমনি চীনা ও বাঙালির যৌথ সংসারেও ঈদ আসে উৎসবের বার্তা নিয়ে। কেমন তাদের ঈদ উদযাপন? চলুন শোনা যাক আমাদের সাক্ষাৎকার পর্বে। এ পর্বে আজ অতিথি হয়ে বেইজিং থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হচ্ছেন সিএমজি বাংলার সহকর্মী ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা।

সিএমজির বাংলা বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাঁর হাজবেন্ড একজন বাংলাদেশী। তাই তাদের সংসারে চীন ও বাংলাদেশের সংস্কৃতির সহঅবস্থান রয়েছে । স্বর্ণা জানালেন বেইজিংয়ে তার সংসারে বর্তমানে রয়েছেন স্বামী, দুই কন্যা এবং শাশুড়ি। তিনি ঘরোয়াভাবে ঈদ উদযাপন করেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। এদিন বিশেষ খাবার রান্না করা হয়। তিনি নিজে কিছু কিছু বাঙালি খাবার রান্না করতে পারেন। তবে তার শাশুড়ি খুব চমৎকার রান্না জানেন বলে মন্তব্য করলেন স্বর্ণা। শাশুড়ির কাছ থেকে বাঙালি সংস্কৃতির অনেক কিছু শিখেছেন তিনি। ঈদের দিনে যদি অফিস না থাকে তাহলে শাড়ি পরেন এবং ঘরোয়াভাবে একটু সাংস্কৃতিক আয়োজনও করেন বলে জানালেন তিনি। কিছুদিন আগে তারা কয়েক পরিবার মিলে মিলনমেলার আয়োজন করেছিলেন। এই পরিবারগুলোতে একজন স্পাউস চীনা অন্যজন বাঙালি। এদের সংসারে চীনা ও বাঙালি সংস্কৃতির সহাবস্থান রয়েছে।স্বর্ণা দীর্ঘদিন বাংলাদেশেও থেকেছেন। বাংলাদেশে তার অনেক বন্ধু রয়েছে। বললেন, ‘বাংলাদেশে সবাই আমার সঙ্গে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেছেন। আমাকে তারা পরিবারের সদস্যের মতো আপন করে নিয়েছেন। ‘

স্বর্ণার দুই মেয়ের একজন চার বছরের অন্যজন দুই বছরের। তারা অনেক বাংলা কথা শিখেছে। দুই সংস্কৃতির এই সংসারে সবমিলিয়ে সুখে আছেন তিনি। দর্শকদের জন্য বাংলায় একটু গান গেয়েও শোনালেন তিনি। সবাইকে বাংলাতেই জানালেন ঈদের শুভেচ্ছা।

বছর ঘুরে এসেছে মুসলিম বিশ্বের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। মহামারি করোনার এ দহনকালে কতোটুকু আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র এ উৎসব?

মহামারীর ক্রান্তিকালে ঈদ

ঈদ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে, খুশি নিয়ে। কিন্তু সবার জীবনেই কি আনন্দ নিয়ে আসে ঈদ? আর এ করোনা ক্রান্তিকালে কেমনই বা হতে পারে ঈদ? বলার অপেক্ষা রাখেনা যে ঈদের আনন্দ ম্লান করার জন্য এ মহামারীই যথেষ্ট। জীবন চলে জীবনের নিয়মে। তাই এতো নিরানন্দের মধ্যেও আনন্দ খুঁজে নিতে হয় প্রকৃতির নিয়মে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এবারে চতুর্থতম ঈদ উদযাপন করছে মুসলিম সম্প্রদায়। গেলবারের মতো এবারো অনেকটাই গৃহবন্দি হয়ে কাটাতে হবে ঈদ। তবে ঈদের আমেজ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে বিভিন্ন রকম। একটি বেসরকারি কোম্পানির মানব সম্পদ বিভাগে আছেন আমিনা মিলি। ঈদ উদযাপন নিয়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে তার অনুভূতি জানান তিনি। বলেন

মহামারীর কারণে প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে ঈদ করতে পারছেন না এটি একটি দুঃখ। আবার টিভি খুলেই যখন দেখেন মহামারীতে মৃত্যুর মিছিল তখন ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে যায় তার কাছে। করোনার থাবায় কোটি মানুষ আজ কর্মহীন। দু’মঠো খাবারের সন্ধানে পথে পথে হাটছে অগণিত মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ঈদ উৎসব শুধুই বিষণ্নতার এবং কষ্টের।বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত জনপদের মধ্যেও সাধ্যমত ঈদের উৎসব পালিত হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাস গেল বছর আর এবছরের ঈদের অনেকখানি আনন্দ যেনো কেড়ে নিয়ে গেছে। তবুও মানুষ বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। ঈদের মহিমায় উজ্জীবিত হয়। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে নিরলস পথচলে।

সারা বিশ্বের মুসলিমদের মতো একইভাবে চীনের মুসলিমরাও পালন করেন ঈদ। চীনের মুসলিম নারীদের ঈদ উদযাপন নিয়ে এখন রয়েছে একটি বিশেষ কথিকা।

চীনের মুসলিম নারীদের ঈদুল আজহা

চীনের ১০টি সংখ্যালঘু মুসলিম জাতির মানুষ ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ পালন করেন বিশ্ব মুসলিম উম্মার সঙ্গে একই দিনে। ঈদের নামাজ আদায় করতে মুসলিম পরিবারের নারীরা মসজিদে যান পুরুষদের মতোই। চীনের একটি মুসলিম জাতি হলো উইগুর যারা স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে বাস করেন।

উইগুর জাতির মানুষ ঈদের দিন নামাজের পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী গান ও নাচ পরিবেশন করেন তারা। এই অনুষ্ঠানে নারীরা অংশ নেন ঐতিহ্যবাহী ঝলমলে পোশাক পরে। উইগুর নারীদের ট্র্যাডিশনাল পোশাক খুবই সুন্দর। তারা উজ্জ্বল রঙের লম্বা কুর্তি ধরনের পোশাক পরেন। তাদের পোশাকে এইডেলিস নামে বিশেষ এক ধরনের রেশম ব্যবহার করা হয়। এই রেশমের কাপড় খুবই সুন্দর এবং বেশ দামি। মেয়েরা মাথায় ফুলের নকশা করা টুপি পরেন। তাদের অলংকারও খুব ঐতিহ্যবাহী। ঈদের দিনে তাদের সাজপোশাক হয় অত্যন্ত বাহারী। মূলত, তরুণীরা ঈদের দিনে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় আনন্দমুখর থাকলেও মধ্য বয়সী গৃহিণীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন রান্নার আয়োজনে।

হুই মুসলিম নারীরা ঈদের দিন মসজিদে জামাতে নামাজ পড়তে যান নতুন পোশাক পরে। ঈদে নতুন পোশাক নেয়ার রীতি রয়েছে তাদের। চীনের মুসলিমরা কোরবানি দেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুসলিমদের মতোই। তাই ঈদের দিনে বিশেষ করে কোরবানির পশুর মাংসের বিভিন্ন রকম আইটেম তৈরি করতে ব্যস্ত থাকেন গৃহিণীরা। শুধু ইউগুর নারী নন, হুই, সালার, তাতার, উজবেক, কিরগিজ, তাজিক ইত্যাদি বিভিন্ন জাতির মুসলিম নারীরা ঈদের দিনটিতে হরেক রকম আইটেম রান্না করেন। প্রতিটি জাতিরই রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খাবার। যেগুলো ঘরে মূলত নারীদের হাতেই তৈরি হয়। নাররিা ঈদের আনন্দ উদযাপন করেন পরিবারের সকলের সঙ্গে।

এখন শুনুন শিল্পী সু ছিয়ান ইয়ার কণ্ঠে উইগুর জাতির একটি গান। গানটির শিরোনাম হলো চলো ঘুরে আসি সিনচিয়াং।

প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

মহামারীর ক্রান্তিকালে ঈদ বিষয়ক প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

Close
Messenger Pinterest LinkedIn