‘বিজনেস টাইম’ পর্ব- ২৯
চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-উন্নয়নের হালচাল নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘বিজনেস টাইম’।
বিজনেস টাইম’ য়ের এই পর্বে থাকছে:
Ø চীন যুগে যুগে আফ্রিকার পাশে আছে এবং থাকবে
Ø চীন ও বাংলাদেশ কিভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে একসঙ্গে কাজ করতে পারে: সাক্ষাতকার
সারা বিশ্ব এখন কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নেযোগ্য জ্বালানিতে ঝুঁকছে। ইউএনইপি বা ইউনাইটেড নেশন ইনভার্নমেন্ট প্রোগ্রাম বলছে, ঘন্টায় ৫৮৪ দশমিক এক পাঁচ টেরাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে চীন আর এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৫৩ তম, দেশটি উৎপাদন করে ঘন্টায় শূন্য দশমিক চার দুই টেরাওয়াট। বাংলাদেশে নবায়নেযোগ্য জ্বালানির ক্ষেএ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। এই বিষয়ে চায়না আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ সোলার এন্ড রিনিউল এনার্জি এসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) প্রধান উপদেষ্টা দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া।
এই খাতের উন্নয়নে তিনটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে জানিয়েছেন তিনি।
১. এই সংক্রান্ত নীতি সংস্কার প্রয়োজন, ২. প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ৩. এই খাতে আরও বিনিয়োগ।
Ø যুগে যুগে আফ্রিকার পাশে আছে থাকবে চীন
মিসরের রাজধানী কায়রো থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পূর্বে মরুভূমির কেন্দ্রস্থলে গড়ে উঠেছে ৫ লাখ ৫ হাজার বর্গ মিটারের সুবিশাল সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট বা সিবিডি। ২০টি বাণিজ্যিক ও আবাসিক আকাশচুম্বী ভবন আছে এখানে। এর মধ্যে ৩৮৫ মিটার উঁচু আইকনিক টাওয়ারটি আফ্রিকার সবচেয়ে উঁচু ভবন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিএসসিইসি)। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এ এই প্রকল্প আফ্রিকার একটি ল্যান্ডমার্ক হয়ে আছে।
মিসরীয় সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আবদ আল রহমান আহমেদ বলেন,
‘৩৮৫ দশমিক ৮ মিটার-লম্বা আইকনিক টাওয়ারটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে নির্মিত। দক্ষ নির্মাণ পদ্ধতির কারণে মাত্র তিন বছরেই এটি আফ্রিকার সবচেয়ে উঁচু ভবন হয়েছে। আর এর হাত ধরে মানব স্থাপত্যের ইতিহাসে আবারও মাইলফলক তৈরি করলো মিসর।’
পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন এবং পরিবেশের সুরক্ষার জন্য এ প্রকল্পের নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও বণ্টন নিশ্চিত করেছে সিএসসিইসি। মিসরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে নতুন প্রাণশক্তির সঞ্চার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উগান্ডার উত্তরে নীল নদীর পাশে আছে দেশটির সর্বাধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশনের তৈরি কেন্দ্রটি উগান্ডার মোট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণকে প্রায় দেড়গুণ বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কারুমা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। এ বছর সম্পন্ন হয় এর নির্মাণকাজ।
খৌ চিবিন, বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক, সিনোহাইড্রো করপোরেশন
এটি উগান্ডার সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। আমরা যখন ২০১৩ সালে এসেছি, তখন আমরা সবাই বুঝতে পেরেছিলাম যে উগান্ডা একটি উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষ করে জলবিদ্যুৎ খাতে। এটি পুরোপুরি চালু হলে উগান্ডার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে প্রায় ৪০ শতাংশ।’
প্রায় ১৭০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ৮৫ শতাংশ অর্থায়ন করেছে চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক এবং ১৫ শতাংশ উগান্ডা সরকার।
এদিকে ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু দেশসহ আফ্রিকাজুড়ে সমুদ্রের নিচে কেবল সংযোগ স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না মোবাইল। টু-আফ্রিকা নামের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ৪৫ হাজার কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এ কেবলটি হবে সমুদ্রের তলদেশে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেবল কানেকশন। আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের উপকূলরেখা বরাবর স্থাপন করা হচ্ছে এই কেবল। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানালেন, এই কেবল সংযোগটি আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে মহাদেশটির অবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ বজায় রাখবে।
বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি আফ্রিকার তরুণদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রুয়ান্ডার তরুণদের ই-কমার্স বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে চীনের ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা। ২০১৯ সাল থেকেই চালু আছে এই ক্রস বর্ডার ই-কমার্স প্রোগ্রাম। এ বছরও প্রশিক্ষণ নিতে রুয়ান্ডা থেকে চীনে এসেছে ২২ তরুণ। আফ্রিকার অন্যান্য দেশের তরুণদের জন্যও একই ধরনের প্রশিক্ষণের সুযোগ আছে চীনে।
অন্যদিকে মাছ চাষের অত্যাধুনিক কৌশল শিখতেও চীনে আসছেন আফ্রিকানরা। পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের উসি শহরের একটি মাছ সংরক্ষণ কেন্দ্রে একুয়াকালচার প্রযুক্তির ওপর হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন আফ্রিকা থেকে আসা ১৩০ জনেরও বেশি মৎস্য গবেষক। চীন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা নিজেদের দেশের সমুদ্র
আর এভাবেই আফ্রিকার মতো একটি সুবিশাল মহাদেশে ধীরে ধীরে পরিবর্তনের হাওয়া লাগিয়েছে চীন।
।। প্রতিবেদন: ফয়সল আব্দুল্লাহ
।। সম্পাদনা: শাহানশাহ রাসেল
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: শাহানশাহ রাসেল
অডিও সম্পাদনা: নাজমুল হক রাইয়ান
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী