বাংলা

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৫৪

CMG2024-02-03 18:28:56

১. সংস্কৃতি সপ্তাহ

বসন্ত উৎসবের আমেজ চীনজুড়ে

দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত উৎসব। এটি চীনের সবচেয়ে বড় উৎসব। এই উৎসবের মধ্য দিয়েই শুরু হয় চীনা নববর্ষ। তাই চীনের চান্দ্র নববর্ষ আর বসন্ত উৎসব মিলেমিশে হয়ে যায় একাকার।

চীনা চান্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব উদযাপিত হবে চীনজুড়ে। তাই সারা দেশে চলছে সাজ সাজ রব।

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সবাই।

মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশ, পূর্ব চীনের চেচিয়াং ও শানতুং, উত্তর চীনের শানসি, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুইচৌ, উত্তর-পশ্চিম চীনের কানসুসহ গোটা চীন ঝলমল করছে রঙিন কাগজ আর লণ্ঠনের সাজসজ্জায়।

এবারের বছরটা ড্রাগনবর্ষ। তাই ড্রাগনের প্রতিকৃতি শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। নববর্ষের সাজসজ্জার উপকরণের পসরা বসেছে চীনের বিভিন্ন স্থানে।

ড্রোন লাইট শো’তে ‘মনোমুগ্ধকর হংকং’

চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে দেখা গেল উড়ন্ত ড্রাগন, ফিনিক্স, উজ্জ্বল নিয়ন আলো এবং ভিক্টোরিয়া হারবারের আইকনিক স্কাইলাইন। সম্প্রতি ‘মনোমুগ্ধকর হংকং’ নামে অনুষ্ঠিত হয় ড্রোন লাইট শো’র এই ইভেন্ট।

প্রযুক্তি, সংস্কৃতি এবং শিল্পের সমন্বয়ে দুর্দান্ত এক ভিজ্যুয়াল কার্নিভাল উপভোগ করতে স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিদেশি পর্যটকরা হংকংয়ের ওয়ানছাই হারবারফ্রন্টে জড়ো হন।

হাজার হাজার ড্রোন আকাশে উড়ে রাতের আকাশে তৈরি করেছে নানা অবয়ব। এক পর্যায়ে, ড্রোনগুলো সুচারুভাবে একত্র হয় ওশান পার্কে।

সিনচিয়াংয়ে বার্ষিক ঘোড়দৌড়

উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের সিনচিয়াংয়ে নববর্ষের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগেই শুরু হয়ে গেছে উদযাপন।

সিনচিয়াংয়ের উরুমছি শহরের তুষারময় থিয়াশান পর্বতমালার পাদদেশে একটি বার্ষিক ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় কাজাক জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী রাইডিং দক্ষতা এবং কার্যকলাপ দর্শনার্থীদের ভীষণ মুগ্ধ করে।

আরেক অংশে দেখা গেল ছেলে জকিদের তাড়া করছে মেয়ে জকিরা। বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির এ মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনে বিমোহিত হয়েছেন দর্শকরা। এতে অংশ নেন প্রায় শতাধিক স্থানীয় খামারি।

চীনের শহরগুলোতে সাংস্কৃতিক প্রাণোচ্ছ্বলতা

উৎসবের হাত ধরে চীন জুড়ে অনেক শহর দারুণ গতিতে ফিরে পেতে শুরু করেছে তাদের সংস্কৃতির প্রাণোচ্ছ্বলতা।

২০২৪ সালের শুরু থেকেই প্রদর্শনীর জন্য নিবন্ধন করেছে রেকর্ড সংখ্যক প্রদর্শনী এবং বাণিজ্যিক পারফরম্যান্স। সম্প্রতি বেইজিং মিউনিসিপ্যাল ব্যুরো অফ কালচার অ্যান্ড ট্যুরিজম জানাল এ তথ্য।

স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল গালাকে ঘিরে সিএমজির সৃজনশীল পণ্য

স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল গালা থিমকে ঘিরে কিছু সৃজনশীল পণ্য নিয়ে আসে সিএমজি। এই ব্র্যান্ডের অধীনে থাকা পণ্যগুলোর কপিরাইট সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছে গ্রুপটি।

অনুষ্ঠানের মাস্কট "লুং ছেনছেন"কেও দেখেছেন অতিথিরা। ২০২৩ সাল থেকেই, সিএমজি এ ধরনের ব্র্যান্ড ও কপিরাইট বিষয়ক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।

২. মা হাইলুনের প্রেরণা উরুমছি

চীনের সাংস্কৃতিক মানচিত্রে সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমছির স্থান সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। বহু আগে থেকেই এ শহরে বাস করে আসছেন চীনের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের, বিশেষ করে এখনকার তরুণ প্রজন্মের এমন সম্প্রীতিময় সহাবস্থান বৈশিষ্ট্যময় করেছে উরুমছিকে।

এই শহরের প্রতিভাবান, উঠতি আলোকচিত্রি মা হাইলুন তার বৈশিষ্ট্যময় কাজের মাধ্যমে স্থানীয়দের নজর কেড়েছেন। উরুমছির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, জীবনযাপন, বৈশিষ্ট্যময় ফ্যাশন স্টাইল নিজের আলোকচিত্রে তুলে ধরছেন মা।

কাজের সুবাদে তার জানাশোনা হয় ফরাসি আলোচিত্রি নিকো ডি রুজের সঙ্গে। চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক-সিজিটিএনের ডকুমেন্টারি সিরিজ ‘ওয়ার্ল্ডস আল্টিমেট ফ্রন্টিয়ারে’ নিকো অতিথি হয়েছেন মার চলমান বিশেষ প্রদর্শনী উরুকলিন প্রজেক্ট ও রুফটপ ফটোশ্যুটে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে ৮ বছর পড়াশোনা করে নিজ হোমটাউন উরুমছিতে ফিরে আসা মা, উরুমছি আর ব্রুকলিনের সাংস্কৃতিক মিলকে তুলে ধরতে দুটোর সমন্বয়ে তার উরুকলিন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন। এর মধ্য দিয়ে আসলে তিনি সিনচিয়াংয়ের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকেই তুলে ধরছেন।

মা’য়ের কাজের ধরন ও নিষ্ঠার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ফরাসি আলোকচিত্রি নিকো ডি রুজ।

মা হাইলুনের চলমান উরুকলিন প্রজেক্ট প্রদর্শনীটি ব্রুকলিনে তার দীর্ঘ ৮ বছরের শিক্ষা এবং তার হোমটাউন উরুমছির অভিজ্ঞতায় পুষ্ট বলে জানালেন রুজ!

‘নিজের উরুকলিন প্রজেক্ট নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত মা।

‘উরুকলিন প্রজেক্টটি আমি হাতে নিয়েছি কারণ, আমি দেখেছি ব্রুকলিন এবং উরুমছির মানুষের জীবনধারায় মিল আছে। বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ মিলেমিশেই তো প্রতিবেশি। আমরা পাঁচটি সেট বানিয়েছি এবং মানুষজনকে বলছি, আপনারা আসুন এবং নিজেদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরুন।’

ফটোশ্যুটে অংশ নেয়া স্থানীয় বাসিন্দারাও মা’র বৈশিষ্ট্যময় কাজের প্রশংসা করেন। আর মা ঋণ স্বীকার করেন নিজ হোমটাউনের প্রতি।

‘উরুমছিতে আমি জন্মেছি এবং বড় হয়েছি। যদিও আমি ফ্যাশন ফটোগ্রাফিতে পড়েছি, কিন্তু ফ্যাশনের বিষয়টি আমি ঠিক বুজে উঠতে পারছিলাম না। আমি অনুপ্রেরণার জন্য বিদেশের দিকে তাকিয়েছি। কিন্তু যখনই আমি বিদেশ গেলাম, তখনই বুঝতে পারি আমার অনুপ্রেরণা আমার ভিতরেই আছে, সেটি আমার হোমটাউন উরুমছি।’

আগামীতেও তার কাজে উরুমছিই অনুপ্রেরণা হবে বলে জানালেন আলোচিত আলোকচিত্রি মা হাইলিন।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

----------------------------------------------------------------------

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn