বাংলা

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৩৩

CMG2023-09-09 10:00:05

চীনের সংস্কৃতি-সপ্তাহ

ওয়াশিংটনে চাইনিজ কালচারাল ফেস্টিভ্যাল

২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে হয়ে গেলো চাইনিজ কালচারাল ফেস্টিভ্যাল। ওয়াশিংটন ডিসির কেন্দ্রস্থলে পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউতে হয় এবারের উৎসবটি। প্রায় ১০ হাজার মানুষ এতে যোগ দেন। উৎসবে ছিল ঐতিহ্যবাহী চীনা নাচ-গান এবং খ্যাদ্যের পসরা।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সিয়ে ফেং যোগ দেন। সভ্যতার মধ্যে পার্থক্য সংঘাতের কারণ হওয়া উচিত নয়, বরং অগ্রগতির প্রেরণা হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সিয়ে ফেং বলেন, ‘চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই বহু-জাতিগোষ্ঠী, বহু-সংস্কৃতির দেশ। উভয় জনগণই কঠোর পরিশ্রমী এবং প্রতিভাবান। আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমরা একই সাহস এবং দৃঢ়তা শেয়ার করি।

চীনা রাষ্ট্রদূত খোলা মনে একে অপরের সংস্কৃতির সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে, বাধাগুলো ভেঙে দিতে এবং দুদেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে দু’দেশের প্রতি আহ্বান জানান।

বার্ষিক চীনা সাংস্কৃতিক উৎসবটি চীন সম্পর্কে জানতে এবং চীনা ও আমেরিকানদের কাছাকাছি আনতে সহায়তা করেছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত সিয়ে ফেং।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শনিবার উৎসবে অভিনন্দনপত্র পাঠান।

২. বাংলাদেশে ‘টিভি পর্দায় চীন উৎসব’

চীনের দিন বদলের নানা গল্পের বর্ণিল উপস্থাপন হচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। গণমাধ্যমের উঠে আসা চীন বিষয়ক নানা আয়োজন নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় হয়ে গেল ‘টিভি পর্দায় চীন উৎসব’ বিষয়ক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।

চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ও দীপ্ত টিভির যৌথ উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে হয় এই উৎসব।

উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মুগ্ধতার কথা ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

চায়না মিডিয়া গ্রুপের বাংলা বিভাগের পরিচালক ইয়ু কুয়াং ইউয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইয়ান হুয়ালোং।

চীনা ভাষা শিখতে, পড়তে কিংবা কাজ করতে চীন যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের তরুণদের আহবান জানান তিনি।

‘সংস্কৃতি ও শিক্ষা দুটি দেশের জনগণের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক দুটি দেশকে আরও ঘনিষ্ঠ করতে পারে’।

গত মাসের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের কথা উল্লেখ করে হুয়ালোং বলেন, দুনেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করতে অবকাঠামো, কৃষি ও শিল্প খাতের পাশাপাশি সংস্কৃতি ও শিক্ষা খাতেও সহযোগিতা বাড়াতে একমত হন। সে লক্ষ্যে দুদেশ কাজ করছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে চীনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সিরিজের প্রচার নিয়ে আয়েজিত হয় 'টিভি পর্দায় চীন উৎসব'। বাংলাদেশি গণমাধ্যে প্রচারিত সিএমজি প্রযোজিত ও নির্মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয় চীনের বর্ণিল সংস্কৃতির নানা উপাদান, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম এবং এক অঞ্চল এক পথ উদ্যোগের আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচিতি। পাশাপাশি এতে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী চীনের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ওপরও আলোকপাত করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয় দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত চীনের ধারাবাহিক নাটক 'রহস্যময়ী'র পরিচিতি; পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় নাটকের অনুবাদ ও ডাবিং শিল্পীদের, যারা তাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে। বাংলায় ডাবিংকৃত এ নাটকটি বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে বলে জানান আয়োজকরা।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইয়াং হুই, দীপ্ত টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়াদ চৌধুরী, চায়না রেলওয়ে বাংলাদেশ প্রকল্পের প্রধান শি ইউয়ান, চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানির বাংলাদেশ প্রকল্পের প্রধান ফাং মিং এবং নিউ হোপ গ্রুপের বাংলাদেশ প্রকল্পের প্রধান হা ছুয়ান শুই।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন সিএমজির বাংলা বিভাগের পরিচালক ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দি। সবশেষে অতিথিদের নিয়ে আপন এন্টারটেইনমেন্ট নামে ইউটিউব চ্যানেলের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করে কেক কাটা হয়। বাংলায় ডাবিংকৃত চীনা নাটক, চলচ্চিত্র, কার্টুন চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র পাওয়া যাবে এই চ্যানেলে।

প্রতিবেদন: আফরিন মিম/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।

৩. চীনে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণে অগ্রগতি

গত এক দশকে চীনের সাংস্কৃতিক নিদর্শন সুরক্ষায় উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ উদ্যোগের কেন্দ্রে রয়েছে চীনা সংস্কৃতির উৎসমূলকে চিহ্নিত করা, এর সংরক্ষণ এবং প্রচার- যার মধ্য দিয়ে মহান পুনরুজ্জীবনের পথে এগিয়ে যাবে চীনা জাতি। প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের নির্দেশনা ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে কীভাবে দেশটি তার বিপুল সাংস্কৃতিক নিদর্শন সুরক্ষায় কাজ করছে- এ নিয়ে চীনের গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক- সিজিটিএন সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। এতে তুলে ধরা হয়েছে সাংস্কৃতি নিদর্শন সুরক্ষায় চীনা গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টার গল্প।

‘ক্ল্যাসিক কোটস বাই সি চিনপিং’-এর চতুর্থ পর্বে চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক-সিজিটিএনের হোস্ট তং হাইপিং ও ভাষ্যকার কনস্টান্টিন সেপিন চীনের সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি সংস্কার ও এর গুরুত্ব সম্পর্কে সরেজমিনে জানতে এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ মা ইয়ানরুর শরণাপন্ন হন।

৫৯ বছর বয়সী মা ২০০০ বছর আগে হান ডাইনেস্টির সময়কার একটি লোহার তরবারি সংস্কারে কঠোর পরিশ্রম করছেন।

ধাতু গলানো এবং ঢালাইয়ের কৌশল বিশ্বে প্রথম উদ্ভাবন করে চীন। খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দে হান ডাইনেস্টির সময়কাল থেকে চীন এ বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করে। হান আমলে তৈরি লোহার তরবারি তার উৎকৃষ্ট নিদর্শন। আর মাত্র ১০ বছর আগে ধাতব নিদর্শন পুনর্গঠন ও সংস্কারে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করে দেশটি। মা ইয়ারুন এ বিষয়ে অন্যতম একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন,

‘আমরা হান ডাইনেস্টির সময়কালের একটি লোহার তরবারি সংস্কারে কাজ করছি। আরও ঠিক করে বললে- আসলে তিনটি তরবারির একটি সেট নিয়ে কাজ করছি আমরা। ৪০-৫০ বছর আগে এগুলো আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এতদিন এগুলো তালাবদ্ধ ছিল। এখন এক্সরে ফ্ল ডিটেক্টর ব্যবহার করে আমরা এগুলোর কাঠামো নিশ্চিত হতে পেরেছি’।

মা জানান, তারা হান আমলের তরবারির বিষয়ে অনেক তথ্য বের করতে পেরেছেন-যার উচ্চ ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। কারণ হান-তরবারি প্রাচীন চীনের একটি অন্যতম ধাতব অস্ত্র।

এ অমূল্য সাংস্কৃতিক নিদর্শন সংস্কার ও সংরক্ষণ যে প্রকৃতপক্ষে চীনের সভ্যতার উৎসমূলের সংরক্ষণ সে বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন সাংস্কৃতি নিদর্শনের ডিজিটাল সংরক্ষণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চেন কাং। তিনি বলেন,

‘২০১৩ সালে সাধারণ সম্পাদক সি চিনপিং বলেছিলেন, আমাদের সাংস্কৃতিক নিদর্শনকে রাখতে হবে জাদুঘরে, প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে বড় এলাকায় আর আমাদের অমূল্য বাণী থাকবে বইয়ের পাতায়। সে অনুযায়ী আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও ব্যবহারের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে’।

প্রেসিডেন্ট সি’র নির্দেশনায় গত ১০ বছরে চীনের সাংস্কৃতিক নিদর্শন রক্ষায় বড় কাজ হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ চীন ১০৮ মিলিয়ন সেট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন স্থানান্তরযোগ্য সাংস্কৃতিক নিদর্শন মজুদ করেছে। এ ছাড়া ৭ লাখ ৬৭ হাজার স্থানান্তর অযোগ্য নিদর্শনও রয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় অধিকারে।

চীনের ৪২টি আইটেম এখন জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে- যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

---------------------------------------------------------------------------

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দি।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn