চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৩২
চীনের সংস্কৃতি-সপ্তাহ
১৮তম ছাংছুন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
‘নিউ এরা, নিউ ক্রেডাল, নিউ পাওয়ার, নিউ ব্রেকথ্রও’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১৮তম ছাংছুন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। উত্তর পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশের ছাংছুন সিটিতে ২৮ আগস্ট শুরু হওয়া উৎসবটির পর্দা নামে ২ সেপ্টেম্বর।
উৎসবে সেরা চলচ্চিত্র, পরিচালক, অভিনেতা ও অভিনেত্রী এবং সেরা চিত্রনাট্য সহ দশটি বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়। সেরা চলচ্চিত্রের সম্মাননা গোল্ডেন ডিয়ারের জন্য ১৫টি চলচ্চিত্র চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়।
ফিল্ম স্ক্রিনিং অংশে "দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইং"সহ আটটি ক্ল্যাসিক রাশিয়ান চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।
১৮তম ছাংছুন চলচ্চিত্র উৎসব চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজি, চিলিন প্রাদেশিক সরকার এবং ছাংছুন পৌর সরকারের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৯২সাল থেকে, সিসিএফএফ চীনের চারটি প্রধান চলচ্চিত্র উৎসবের একটি। এটি একটি দ্বিবার্ষিক ইভেন্ট থেকে ২০২১ সালে একটি বার্ষিক অনুষ্ঠানে পরিবর্তিত হয়েছে।
গোল্ডেন পান্ডা অ্যাওয়ার্ড
টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, অ্যানিমেশন এবং ডকুমেন্টারিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সেরা গল্পকারদের সম্মান জানাতে গোল্ডেন পান্ডা পুরস্কার চালু করা হয়েছে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানান, চীন ফেডারেশন অব লিটারারি অ্যান্ড আর্ট সার্কেল এবং সিচুয়ান প্রাদেশিক সরকার যৌথ উদ্যোগে পুরস্কারটি দিবে। এরই মধ্যে জুরি প্যানেলে বিশ্বের সেরা পেশাদারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চীনের প্রখ্যাত পরিচালক ছাং ইমৌ জুরির সভাপতি হবেন বলেও জানানো হয়।
এ সময় তারা বলেন, এ বছর ১০৪টি দেশ ও অঞ্চল থেকে মোট ৯০টি কাজ মনোনীত হয়েছে, যার মধ্যে ৫০টির বেশি বিদেশ থেকে এসেছে।
সম্মেলন থেকে আরও জানা যায়, গোল্ডেন পান্ডা পুরষ্কারের প্রথম পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি ১৯ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর সিচুয়ানের প্রাদেশিক রাজধানী ছেংতুতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইভেন্টে অতিথিদের জন্য একটি স্বাগত সংবর্ধনা, একটি ফোরাম এবং একটি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান এই তিনটি প্রধান কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা হয়।
২. সিএমজির মধ্য-শরৎ উৎসব গালা
চীনের ঐতিহ্যবাহী মধ্য-শরৎ উৎসব এবার উদযাপিত হবে ২৯ সেপ্টেম্বর। চীনা চান্দ্রবর্ষের অষ্টম মাসের ১৫তম দিনে হয়ে থাকে চীনাদের প্রিয় এ উৎসবটি। পরিবার পরিজনের সাথে শরতের পূর্ণ চাঁদের আলো উপভোগ, মুনকেক খাওয়া আর লণ্ঠন প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে চীনারা এ উৎসব পালন করে থাকেন।
এবার চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজির মিড-অটাম গালা ধারন করা হচ্ছে চীনের ১৪ বছরের প্রাচীন শহর লিচুয়াংয়ে। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের ইপিন সিটির ছোট শহর লিচুয়াংয়ের ঐতিহাসিক ভবন, অপূর্ব প্রাচীন সড়ক সাজানো হয়েছে উৎসবের রঙে। আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে রাতের লিচুয়াং!
লিচুয়াংয়ের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ইয়াংজি নদী। এর তীরে অবস্থিত কোনো কোনো বাড়ির প্রাচীন মিং ও ছিং ডাইনেস্টির সময়কালে নির্মিত।
সিএমজি গালার রেকর্ডিংয়ে অংশ নিতে আসা শিল্পীরাও অভিভূত লিচুয়াংয়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে।
গালা দর্শকদের চীনের প্রাচীন সময়ের কিছুটা আবহ দিতে স্থানীয় শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী চীনা পোশাক পরে গালায় অংশ নেবেন।
সিএমজির ধারনকৃত এ গালা উৎসব অনুষ্ঠান মধ্য-শরৎ উৎসবের সন্ধ্যায় প্রচারিত হবে। আর এ জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন গোটা চীনের মানুষ।
প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।
৩. চিরায়ত চীনা সাহিত্য
ছাং চিয়ান: প্রকৃতি প্রেমিক কবি
ছাং চিয়ান ছিলেন থাং রাজবংশের সময়কার একজন কবি। তার জন্ম ৭০৮ খ্রিস্টাব্দে এবং মৃত্যু ৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে। অষ্টম শতাব্দির প্রথম যুগে তিনি কবিতা লিখেছেন। বিখ্যাত থাং কবিতার সংকলন তিনশ থাং কবিতায় তার দুটি কবিতা পাওয়া যায়।
তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু সেখানে সাফল্য পাননি। সেনাবাহিনীতেও তিনি কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি। ছাং চিয়ান ছিলেন মূলত প্রকৃতি প্রেমিক কবি। তিনি কয়েক বছর বিভিন্ন স্থান পর্যটন করেন এবং সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করেন। শেষ জীবনে তিনি প্রকৃতির নির্জনতার মধ্যে শান্তি খুঁজে পান এবং নির্জন স্থানেই বাকি জীবন অতিবাহিত করেন।
তার যে দুটি কবিতা তিনশ থাং কবিতার সংকলনে স্থান পেয়েছে সে দুটিই মূলত বিখ্যাত। তার সৃষ্টিকর্মের খুব কম সংখ্যক কবিতাই কালের করাল গ্রাস এড়িয়ে বর্তমান যুগ পর্যন্ত পৌছাতে পেরেছে। যুদ্ধের দুর্গ বিষয়ে তিনি বেশ কিছু কবিতা লিখেছিলেন। সেই সময়ে তিনি পর্বত এবং মন্দিরের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন। তিনি একটি বিশেষ রীতির কবিতা লেখার জন্য খ্যাতি পান। সেটি হলো পাঁচ ক্যারেকটার বা পাঁচ শব্দের কবিতা। এক্ষেত্রে প্রতি লাইনে পাঁচটি করে ক্যারেকটার থাকে।
তার যে দুটি কবিতা বিখ্যাত সে দুটি হলো, ‘ওয়াং ছাংলিয়ের ফিরে আসা ’ এবং ‘ ভগ্ন পার্বত্য মন্দিরে একজন বৌদ্ধেরফিরে আসা’। প্রথম কবিতাটিতে আরেকজন বিখ্যাত থাং কবি ওয়াং ছাংলিংয়ের কথা বলা হয়েছে। কবি ওয়াং ছাংলিং ছিলেন কবি ছাং চিয়ানের বিশেষ বন্ধু।
দ্বিতীয় কবিতাটিতে একটি পার্বত্য বৌদ্ধ-মন্দিরের বর্ণনা রয়েছে।
‘ ভগ্ন পার্বত্য মন্দিরে একজন বৌদ্ধের ফিরে আসা’
দিবসের প্রথম আলোয় আমি এসেছি এক প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরে
সকালে সূর্যের আলো তখন সবেমাত্র পৌঁছেছে দীঘল বৃক্ষের শিখরে
বাতাস বয়ে যাওয়া পায়ে চলা পথ চলে গেছে গভীর আশ্রয়ে
মঠ-সন্ন্যাসীর কক্ষ ভরে আছে ফুলের নিবিড় সৌরভে
পর্বতের আলোর আভায় উড়ন্ত পাখির ডানায় কত না শান্তির আভাস
ছায়া ঢাকা দীঘির জলে মন খোঁজে প্রশান্তির বিলাস
জগতের সব কোলাহল এখানে নীরব নিস্তব্ধ জানি
আমি শুধু শুনি মন্দিরের সুমধুর ঘন্টার ধ্বনি।
এই কবিতায় এক শান্তিময় জীবনের ছবি আঁকা হয়েছে যা প্রকৃতির সান্নিধ্য-ধন্য। ছাং চিয়ান চীনের সাধারণ মানুষের চিরকালীন শান্তির সবুজ জীবনের আকাংখাকে তার কবিতায় তুলে ধরেছেন। তিনি এমন এক শান্তিময় জীবনের ছবি একেঁছেন কোন যুদ্ধের ঘনঘটা, সংগ্রামের তীব্রতা, উন্নতির কঠোর প্রতিযোগিতা নেই।
সম্প্রতি চীনে কবি ছাং চিয়ানের জীবনের উপর ভিত্তি করে ‘চাং আন’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।
কবি ছাং চিয়ান চিরায়ত চীনা সাহিত্যে একজন প্রকৃতি প্রেমিক ও শান্তিময় জীবনের রূপকার হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া।
---------------------------------------------------------------------------
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।