বাংলা

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৩১

CMG2023-08-26 19:14:42

চীনের সংস্কৃতি-সপ্তাহ

সাংহাই বইমেলা ২০২৩

২২ আগস্ট শেষ হলো সপ্তাহব্যাপী সাংহাই বইমেলা ২০২৩। এবারের বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল শিশু-কিশোরদের বই।

মেলায় ৩৫০টিরও বেশি প্রকাশনা এবং ২০টি প্রকাশনা গোষ্ঠী থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার বই প্রদর্শন করা হয়। বইমেলায় চীনের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশকদের থিমযুক্ত প্রকাশনা প্রচারের জন্য প্রায় ৮৫০টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।

শহর জুড়ে পাবলিক লাইব্রেরি এবং বইয়ের দোকানগুলোতেও সাব-ভেন্যু স্থাপন করা হয়। অনলাইন ও অফলাইন দু’ভাবে চলে মেলাটি।

ই জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা

সিছুয়ানের ই জাতিগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক প্রদর্শন উপলক্ষ্যে হয়ে গেলো ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের লিয়াংশান ই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বার্ষিক মশাল উৎসব উদযাপনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

ঐতিহ্যবাহী এ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার নিজস্ব অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় একটি বিশেষ বিষয় চোখে পড়ে তা হলো প্রতিযোগিতায় সৌন্দর্য নির্বাচনে শ্যাম-বর্ণের ছেলে-মেয়েদের প্রাধান্য দেয়া হয়। গায়ের রঙ ফর্সা বা ট্রেন্ডি হালকা ত্বককে অজনপ্রিয় বা কম গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা চলাকালীন, পোশাক উপস্থাপন এবং প্রতিভা প্রদর্শনীতে প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যগত সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণরূপে প্রদর্শন করে।

তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী শোটন ফেস্টিভ্যাল

দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সিচাং বা তিব্বত শায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মানুষ উদযাপন করেছেন ঐতিহত্যবাহী শোটন ফেস্টিভাল। লিঙ্কা চড়ুইভাতি নামেও পরিচিত হাজার বছরের প্রাচীন এ উৎসবটি। পরবিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কোনো নির্ধারিত স্থানে সমবেত হয়ে একসঙ্গে খাওয়া এবং বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড এ উৎসবের অংশ।

তিব্বতের রাজধানী লাসার নরবুলিংকা গার্ডেন বরাবরের মতো এবারও ছিল শোটন ফেস্টিভ্যালের জনপ্রিয় স্থান। লিঙ্কা চড়ুইভাতিতে সামিল হতে দলে দলে মানুষ জড়ো হন সেখানে। প্রিয়জনদের সঙ্গে খাবার খান এবং আনন্দময় সময় কাটান তারা।

উৎসব চলাকালে তিব্বতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাসায় সমবেত তিব্বতি অপেরার শিল্পীরা নিজস্ব ধারার এ পরিবেশনা করেন। রাজাধানী লাসা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক আয়োজন, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার মাধ্যেম শোটন ফেস্টিভাল উদযাপন করেন তিব্বতের মানুষ।

২২ আগস্ট শেষ হয় সপ্তাহব্যাপী উৎসবটি।

একাদশ শতাব্দি থেকে তিব্বতের মানুষ উদযাপন করে আসছেন শোটন ফেস্টিভ্যাল বা লিঙ্কা চড়ুইভাতি উৎসব। ধ্যান শেষে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দই খাওয়ানোর রীতি থেকে এ উৎসবের সূচনা। এ জন্য এর আরেক নাম দই দান উৎসব।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

২. চীনে ছিসি উৎসব উদযাপন

চীনের অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব ছিসি ফেস্টিভ্যাল। দেশজুড়ে বর্ণিল আয়োজনে সম্প্রতি উদযাপিত হয়ে গেল চীনা ভালোবাসা দিবস বা ছিসি উৎসব। প্রতি বছর চীনা চান্দ্র ক্যালেন্ডারের সপ্তম চান্দ্র মাসের সপ্তম দিনে এই উৎসব উদযাপন করা হয়।

নেচে গেয়ে চলে উৎসব উদযাপন।

চাইনিজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ছিসি উৎসব উপলক্ষে দেশ জুড়ে রঙিন লোকশিল্প পরিবেশনাসহ বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনে মেতে ওঠেন চীনারা। ২২ আগস্ট উদযাপিত হওয়া এই উৎসবে বিভিন্ন শহরে ঐতিহ্যগত নানা কার্ক্রমের আয়োজন করা হয়।

চীনা ভালবাসা দিবসকে ঘিরে দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের চিংসি শহরে একটি হস্তশিল্প প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। হস্তশিল্প বা সূচিকর্মকে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রেম, সুখ এবং সৌন্দর্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়।

পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের ইয়াংচৌতে অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারীরা ঐতিহ্যগত কারুশিল্প প্রদর্শন করে পর্যটকদের মুগ্ধ করে। আধুনিক উপাদানের মিশেলে তাদের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতিতে বিমহিত হন তারা। আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে প্রেমপত্র লিখে নদীতে পদ্ম লণ্ঠন ভাসিয়ে আশীর্বাদ কামনা করেন স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকরাও।

এদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশে নেচে গেয়ে উদযাপন করা হয় ছিসি উৎসব।

একটি ঐতিহ্যবাহী বিয়ের পারফরম্যান্সও অনুষ্ঠিত হয়, যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এবং বর্ণিল বলে মনে হয়।

সুইনিং শহরে রঙিন পোশাকে ঐতিহ্যবাহী "ওয়াটার ড্রাগন" নাচ এবং আতশবাজি প্রদর্শিত হয়।

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী।

৩. ছিসি ফেস্টিভ্যালে সিএমজির গালা নাইট

ছিসি ফেস্টিভ্যালে সিএমজির গালা নাইট মানেই জমজমাট আয়োজন। আর দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণে এই গালা নাইটে ছিল চোখ ধাঁধানো সব আয়োজন। দুর্দান্ত এই গালা নাইট দর্শক মাতায়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন তরুণ তরুণী।

শুরুটাই হয় থ্রিডি অ্যানিমেশন দিয়ে।

গালায় মঞ্চ আলো করেন বিশিষ্ট চীনা শিল্পীরা। চীনের ঐতিহ্যবাহী লোকজ অপেরা এবং পপ মিউজিকের সমন্বিত পরিবেশনা দারুণ আনন্দ দেয় দর্শকদের। শুধু মঞ্চে নয়, শহরের বড় চত্বরেও অনুষ্ঠানের দৃশ্য ধারণ করা হয়। নাচে গানে মেতে ওঠেন শিল্পী ও দর্শকরা।

গালা অনুষ্ঠানটির বেশিরভাগ অংশের শুটিং হয় পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী সিনইয়ু সিটিতে। এই শহরকে বেছে নেয়ার রয়েছে বিশেষ কারণ। চায়নিজ ফোক লিটারেচার অ্যান্ড আর্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, এ শহরকে স্বর্গের্ জেড সম্রাটের সপ্তম কন্যার কিংবদন্তির জন্মস্থান’ বলা হয়। এখানে এই দুহাজার বছরের প্রাচীন লোককাহিনীর বেশ কিছু সাংস্কৃতিক নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।

গালা অনুষ্ঠানের একটা মজার দিক ছিল বিভিন্ন শহরের যুগলরা প্রাচীন সব গাছের নিচে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে তাদের ভালোবাসার কথা বলেন। এরমধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন গাছটি ছিল সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরনো।

অনুষ্ঠানে ভায়োলিন বাজনাও উপভোগ করেন বিদগ্ধ দর্শক শ্রোতা।

ছিসি উৎসবকে ২০০৬ সালে চীনের জাতীয় পর্যায়ের ঐতিহ্যবাহী অবৈষয়িক সংস্কৃতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ভালোবাসার এই চিরন্তন আয়োজনে চীনের নবীন প্রবীণ সকলেই মেতে ওঠেন উৎসবে। সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আবহ এবং ভালোবাসার আমেজ।

চীনাদের পৌরাণিক প্রথা অনুযায়ী, চীনের বিখ্যাত লোককাহিনী- চিনু আর নিউলাংয়ের অমর প্রেম। বয়নশিল্পী দেবকন্যা চিনু আর মর্ত্যমানব রাখাল ছেলে নিউলাং- তাদের প্রেমকাহিনীকে স্মরণ করেই তো ছিসি উৎসব। সারা বছর বিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য হলেও চায়নিজ লুনার ক্যালেন্ডারের সপ্তম চান্দ্র মাসের সপ্তম দিনে ম্যাঘপাই পাখিদের তৈরি আকাশের এক সেতুর উপরে মিলন ঘটে তাদের।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া।

---------------------------------------------------------------------------

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn