বাংলা

নাট্যচর্চায় চট্টগ্রামের স্বকীয়তা রয়েছে: আহমেদ ইকবাল হায়দার

CMG2022-08-26 16:27:43

আপন আলোয় ৮৩: নিজের নির্দেশিত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রক্তকরবী নাটকে সহশিল্পীর সঙ্গে আহমেদ ইকবাল হায়দার

এক.

চট্টগ্রামে গ্রুপ থিয়েটারের কথা যদি বলি, গ্রুপ থিয়েটার মুক্তিযুদ্ধের পরে শুরু হয় ঢাকাতে বাহাত্তরে, আর চট্টগ্রামে তিয়াত্তরের ফেব্রুয়ারিতে।

ঢাকার সাথে চট্টগ্রামের একটা পার্থক্য ছিল। যারা ঢাকায় শুরু করেন, তাদের অধিকাংশের অভিজ্ঞতা ছিল- কলকাতা থেকে দেখে আসা। মুক্তিযুদ্ধ ফেরত আমাদের অনেক তরুণ যোদ্ধা ছিলেন, তারা দেখেছেন, জেনেছেন; ওগুলোকে মাথায় রেখে শুরু করেছেন।

কিন্তু চট্টগ্রামে সেটা ছিল না। মমতাজ উদ্দীন স্যার লিখছেন, তরুণ একটা ছেলে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে সে একটা নাটক লিখছে। নাটকের ক্ষেত্রে তারা অন্য জায়গায়। যেমন- ঢাকায় শুরু হলো বাকি ইতিহাস, বাদল সরকারের নাটক দিয়ে। আর চট্টগ্রামে শুরু হলো নিজেদের মধ্য দিয়ে শুরু করা- ফলাফল নিম্নচাপ- মানে মুক্তিযুদ্ধের পরে আমাদের তরুণরা কী হয়ে যাচ্ছে, এডিক্টেড হয়ে যাচ্ছে বা অস্ত্র নিয়ে অনেক কিছু করছে। এখান থেকে শুরু হলো চট্টগ্রামের নাটক।

তাহলে চট্টগ্রামে আলাদা একটা শুরু হলো- স্ক্রিপ্টের দিক থেকে, কনটেন্টের দিক থেকে। আবার অভিনেতাদের সেরকম প্রায়োগিক কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সে তার তারুণ্য দিয়ে করে যাচ্ছে। যার ফলে তারুণ্য নির্ভর ছিল চট্টগ্রামে গ্রুপ থিয়েটার চর্চা। যার ফলে চট্টগ্রাম এ জায়গায় একটা স্বকীয়তা রেখে দিয়েছে; ডিনাই করা- এখনো কিন্তু এটার প্রভাব আছে।

নিজের নির্দেশিত, মাইকেল মধুসূদন দত্তের বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ নাটকে

আহমেদ ইকবাল হায়দার

দুই.

চট্টগ্রামে আমাদের একটা সমস্যা হচ্ছে স্থায়ীত্বের। যারা তরুণ তাদের আস্তে আস্তে বয়স হয়, তারা চাকরি-বাকরি নিয়ে চলে যায়। আর আমাদের এখানে নাটক যেভাবে এগিয়েছিল সে রকম হল ছিল না। যার ফলে হল না পাওয়া, না করতে পারা- সব মিলিয়ে একটা বিক্ষিপ্ততা তৈরি হয়েছে। এখন সবকিছু ঢাকা নির্ভর, পুরো বাংলাদেশটাই রাজধানী নির্ভর হয়ে গেছে। আর নাট্যকর্মীদের টেলিভিশনে যাওয়া, প্রচারের মধ্যে চলে যাওয়ার বিষয়টাতো রয়েছেই। এ সবই চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐহিত্যে ভাটা পড়ার কারণ।

তিন.

কাজ যে একদম হচ্ছে না তা নয়। আমি আশা করি চট্টগ্রাম আবার দাঁড়াবে। আমরা এখন আইটিআই’র (ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট) সুবাদে দেখতে পাই যে, বাংলাদেশের থিয়েটার কিন্তু একটা ওয়ার্ল্ড প্রেক্ষাপটে একটা জায়গায় কিন্তু দাঁড়িয়েছে। আগে কিন্তু বাংলা নাটক বললে কলকাতার নাটকগুলোই আসতো। এখন কিন্তু বাংলাদেশের নাটকও আসে, আলাদাভাবে। আমরা এতটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। বাংলাদেশের নাটক একদিন অবশ্যই বড় জায়গায় যাবে।

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে চট্টগ্রামে স্বকীয় ধারার নাট্যচর্চা, বর্তমান সংকট ও সম্ভাবনা এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নাটকের অবস্থান নিয়ে বললেন চট্টগ্রামের তির্যক নাট্যদলের দলপ্রধান, একুশে পদক জয়ী নাট্যবক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার।

অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মাহমুদ হাশিম।

অডিও সম্পাদনা: তানজিদ বসুনিয়া।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn