মানুষ ও প্রকৃতি ২১
যা রয়েছে এবারের পর্বে
১. উড়ে এল শীতের পাখিরা
২. উড়ন্ত ব্যাঙয়ের গল্প
নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।
সুপ্রিয় শ্রোতা, মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠানে থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।
উড়ে এল শীতের পাখিরা
চীনের উত্তর অংশে বেশ শীত পড়ে গিয়েছে। তাই পরিযায়ী পাখিরা পাড়ি জমিয়েছে দক্ষিণে। রাশিয়ার সাইবেরিয়া, চীনের হেইলংচিয়াংসহ উত্তরের শীতল ভূমি থেকে পাখিরা দক্ষিণে তাদের দীর্ঘ যাত্রা শুরু করেছে। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে তারা বিভিন্ন স্থানে বিরতি নিচ্ছে। পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশে যাত্রা বিরতি করেছে অনেক পরিযায়ী পাখি । বিস্তারিত প্রতিবেদনে।
অসংখ্য ডানার ঝটপট শব্দ। উড়ে আসছে মৌসুমী অতিথিরা। সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, উত্তর চীনের হেইলংচিয়াং, ইনার মঙ্গোলিয়ায় শীত শুরু হয়ে গেছে। শীতল ভূমি ছেড়ে পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার সুদূর পথে পাড়ি জমিয়েছে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। উষ্ণভূমিতে যাত্রা পথে তাদের বিরতি নিতে হবে বেশ কয়েক বার।
পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ছুয়ানচৌ সিটির জলাভূমি এখন পাখির কলকাকলিতে মুখর। ওয়েইথোও উপসাগরে সেপ্টেম্বর মাস থেকেই পাখিরা আসা শুরু করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু বিরল প্রজাতির পাখি। কালো-ঠোঁট গাংচিল বা ব্ল্যাক বিলড গাল এবং ব্ল্যাকবিলড প্লোভার পাখিরা ওয়েইথোও উপসাগরে শীত কাটাবে। এই এলাকায় আরও দেখা গেছে স্পুন বিলড স্যান্ড পাইপার বা চামচ ঠোঁট কাঁদাখোচাদের। এরা চীনে প্রথম শ্রেণীর জাতীয় সুরক্ষার অধীনে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে চারটি স্পুনবিলড স্যান্ড পাইপারকে দেখা গেছে। ওদের দৈর্ঘ্য মাত্র ১৪ থেকে ১৬ সেন্টিমিটার। এই পাখিগুলো গত বছরের তুলনায় এবছর মাসখানেক আগেইএসে পড়েছে।
ওয়েইথোও বে এলাকায় বিভিন্ন রকম খাবার পাওয়া যায়। খাবারের সহজ লভ্যতা আর বৈচিত্র্যের কারণেই পাখিরা ঝাঁক বেঁধে এখানে আসে।
বিরল পরিযায়ী পাখিদের একটি নিরাপদ শীতকালীন পরিবেশ প্রদানের জন্য, স্থানীয় বন বিভাগ পারিযায়ী পাখিদের রুটে মানুষের কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরিযায়ী পাখিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থলের রিয়েল-টাইম পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন পরিচালনা করতে তারা স্যাটেলাইট রিমোট সেন্সিং এবং ড্রোনের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
সু চিয়ানলিন একজন ফরেস্ট্রি ইঞ্জিনিয়ার। তিনি চিনচিয়াং সিটি, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ল্যান্ডস্কেপিং ব্যুরোতে কাজ করছেন। সু জানালেন, ‘ছুয়ানচৌ বে এলাকায় পাঁচটি কাউন্টি এবং শহর জুড়ে হাই ডিফিনিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। এরমাধ্যমে পাখিদের পর্যবেক্ষণ ও চিহ্নিত করা হচ্ছে। এছাড়া, ব্লু বে এলাকাকে পাখির জন্য আরও উপযোগী করে গড়ে তুলতে তারা কাজ করছেন। এরফলে পাখিদের বৈচিত্র্যময় বিচরণ ক্ষেত্র দেয়া যাবে। এসঙ্গে সুন্দর পরিবেশ এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার দেয়া হচ্ছে পাখিদের জন্য ।‘
আশা করা হচ্ছে আগামি এক দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই উপসাগর এলাকায় শীতকালীন পরিযায়ী পাখিদের সর্বোচ্চ আগমন ঘটবে।
এখানকার সাগর সৈকত , জলাভূমি ও অরণ্য এলাকায় নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে পাখিরা। কারণ পুরো এলাকাটি পাখিদের জন্য নিরাপদ করে গড়ে তোলা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার পাখিদের জন্য শীতকালীন আশ্রয়কে উন্নত করতে বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা এবং পরিবেশ উন্নতকরণ চালু রেখেছে।
প্রকৃতি ও মানুষের সুষম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে এবং পরিবেশ কর্মীদের অক্লান্ত চেষ্টায় ফুচিয়ান হয়ে উঠছে পরিযায়ী পাখির স্বর্গভূমি।
প্রকৃতি সংবাদ
উড়ন্ত ব্যাঙয়ের গল্প
চীনের হাইনান প্রদেশে সম্প্রতি দেখা মিলেছে নতুন প্রজাতির উড়ন্ত ব্যাঙয়ের। চলুন শোনা যাক প্রকৃতির আজব প্রাণী উড়ন্ত ব্যাংঙ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন। বলবেন হোসনে মোবারক সৌরভ
দক্ষিণ চীনের দ্বীপ প্রদেশ হাইনান। এখানে সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ে উপকূলে। আর ট্রপিক্যাল অরণ্যে ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। স্যাতঁসেঁতে বৃষ্টি ভেজা অরণ্য। পাতায় পাতায় ঝরে পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা। এরই মধ্যে এক ঝোঁপ থেকে অন্য ঝোঁপে উড়ে যাচ্ছে ছোট্ট একটি উভচর প্রজাতির প্রাণী। এটি ছোট একটি ব্যাঙ। উড়ন্ত ব্যাঙ বা চাইনিজ ফ্লাইং ফ্রগ বিজ্ঞানীদের কাছে অনেক দিন ধরেই পরিচিত। তবে এরই আত্মীয় নতুন এক প্রজাতির উড়ন্ত ব্যাঙ সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। হাইনান ফ্লাইং ফ্রগ নামের এই প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম রাকোফোরাস কিয়োংইকা। এই প্রজাতির ব্যাঙ রাকোফোরিডি ফ্যামিলির।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এক মাঠজরীপ চলাকালে নতুন এই প্রজাতির দেখা পান গবেষকরা। জুসিসটেমেটিকস অ্যান্ড এভোলিউশন জার্নালে একে নতুন প্রজাতির স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর উচ্চতা ২ ইঞ্চির চেয়ে কম। গায়ের রঙ লাল। এর কাছাকাছি প্রজাতির উড়ন্ত ব্যাং কিছুটা বড়।
উড়ন্ত ব্যাঙ সাধারণত দক্ষিণ চীন , ভিয়েতনাম লাওস ও মায়ানমারে দেখা যায়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৮০ থেকে ১৫০০ মিটারের মধ্যে এরা বাস করে। গায়ের রঙ সবুজ, শ্যাওলা, ধূসর, মেটে, কমলা হতে পারে। তবে নতুন আবিষ্কৃত হাইনান ফ্লাইং ফ্রগের রঙ পুরোপুরি লাল।
নাম ফ্লাইং ফ্রগ হলেও ওদের কিন্তু ডানা নেই। তাহলে কেন এমন নাম। এর কারণ হলো ওরা এক গাছ থেকে অন্য গাছে এত জোরে ও দূরত্বে লাফিয়ে যেতে পারে এবং পাতলা চামড়ার কারণে হাওয়ায় ভেসে থাকতে পারে যে মনে হয় ওরা বুঝি উড়ে যাচ্ছে।
৫০ ফিট পর্যন্ত লাফিয়ে যেতে পারে এরা।
হাইনান ফ্লাইং ফ্রগসহ সব প্রজাতির উড়ন্ত ব্যাঙই কিন্তু লংজাম্পে এমনই দক্ষ। ওরা বৃষ্টিভেজা অরণ্যে বাস করতে ভালোবাসে। চীনের কুয়াংতোং, হংকং ম্যাকাও, গ্রেটার বে এরিয়ায় ওরা আইকনিক প্রাণী।
এদের সুরক্ষার জন্য চীন সরকার কাজ করছে।
ধানক্ষেত, পানিভরা গর্ত, পুকুর এবং জলাজঙ্গলেও বাস করে। পরিবেশ দূষণ, দাবানল বা বনের আগুন, ও আবাসভূমি ধ্বংসের কারণে উড়ন্ত ব্যাঙ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
তবে প্রকৃতির এই উভচর সন্তানকে রক্ষা করার জন্য কাজ করছেন পরিবেশ কর্মীরা।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। একটু উষ্ণতার খোঁজে শীতল ভূমি থেকে দক্ষিণে উড়ে আসা পারিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ