বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি ১৮

CMG2024-10-13 18:45:05

যা রয়েছে এবারের পর্বে

১. প্রকৃতির সাহসী সন্তান তুষার চিতা

২. বিপন্ন হর্সশু কাঁকড়ার সংরক্ষণে চীনে বিভিন্ন পদক্ষেপ

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। এ পর্বে আপনাদের বলবো প্রকৃতির এক সাহসী সুন্দর সন্তান তুষার চিতার গল্প। আরও বলবো বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হর্স শু কাঁকড়ার কথা।

প্রকৃতির সাহসী সন্তান তুষার চিতা

প্রকৃতির এক সাহসী সুন্দর সন্তান তুষার চিতা বা স্নো লেপার্ড। এরা যেমন হিংস্র তেমনি আবার আদুরে। চলুন শোনা যাক তুষার চিতার গল্প।

শ্বেত শুভ্র তুষার বিছিয়ে আছে পাহাড়ের ঢালে। এরই মধ্যে তুষারের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে রয়েছে এক সাহসী শিকারী। তার চোখে পড়েছে এক শিকার। নিঃশব্দে গুড়ি মেরে শিকারের দিকে এগিয়ে আসছে সে। ঝাঁপিয়ে পড়লো থাবা মেলে। এই দুর্দান্ত শিকারীর নাম তুষার চিতা বা স্নো লেপার্ড।

তুষার চিতা দেখতে দারুণ সুন্দর। সাদা অথবা ধূসর রঙের ঘন পশমে সারা দেহ ঢাকা। মাথা ও ঘাড়ে কালো ফোটা। লোমশ লম্বা লেজ। মাথাসহ দেহ ৭৫ থেকে ১৫০ সেন্টি মিটার দীর্ঘ হতে পারে। লেজের দৈর্ঘ্য হতে পারে ৮০ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার। পুরুষ চিতার ওজন ৪৫ থেকে ৫৫ কেজি । মেয়ে চিতা একটু ছোট। ৩৫ থেকে ৪৫ কেজি ওজন হয়ে থাকে। ফেলিডি পরিবারের এই প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম প্যান্থেরা ইউনসিয়া।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বন্য তুষার চিতা বাস করে চীনে। চীনের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এমন ৯ থেকে ১২টি দেশে তুষার চিতার বসবাস রয়েছে। মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার শীতল পাহাড়ি অরণ্যে এদের দেখা মেলে। সাইবেরিয়া, পামির মালভূমি, হেইলংচিয়াং ছিংহাই, সিচাংয়ের তিন নদীর অববাহিকা, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান , কিরগিজস্থান, উজবেকিস্তান, কারাকোরাম পর্বত, গোবি মরুভূমিসহ বিভিন্ন স্থানে এদের দেখা মেলে।

প্রাচীনকালে তুষার চিতা রাজা বাদশাদের প্রিয় পোষ্য ছিল। এরা শিকারে তাদের সাহায্য করতো। পোষা তুষারচিতা দারুণ আদুরে ভাবভঙ্গী করতে পারে।

চীনে এখন প্রায় সাড়ে চার হাজার বন্য তুষার চিতা রয়েছে যা বিশ্বের মোট তুষার চিতার ৬০ শতাংশ।এদের জন্য উত্তরে এবং ছিংহাইতে বিশেষ সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। এসব সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ওরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায়। তুষারের উপর মা ও শাবকদের খেলা জমে ওঠে। চীনের সিনচিয়াং, সিচাং, ছিংহাই, ইনার মঙ্গোলিয়াসহ চারটি প্রদেশ ও অঞ্চলে এরা বাস করলেও ৯০ শতাংশ বাস করে ছিংহাই-সিচাং মালভূমিতে। ছিলিয়ান মাউনটেন ন্যাশনাল পার্কের ছিংহাই প্রশাসনিক ব্যুরোর প্রধান মা সুনসিন জানান, ছিংহাইতে প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে একটি তুষারচিতা বিচরণ করে। এখানে আড়াইশোর বেশি তুষার চিতা আছে।

২০১৭ সাল থেকে ছিংহাই কর্তৃপক্ষ তুষার চিতা সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য ১১ মিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করেছেন। ২২টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করছে।

তুষার চিতা বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী। ওদের সুন্দর, নরম পশমের জন্য এবং অন্যান্য কারণে এক সময় চোরা শিকারীরা তাদের বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। তবে চীন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ওরা রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার অধীনে রয়েছে। ওদের শিকার করা কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

চীনের পরিবেশ সংরক্ষণমূলক দীর্ঘ প্রচেষ্টা ও কাজের ফলে এখন বন্য তুষার চিতার সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছিংহাই-সিচাং মালভূমির পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ইনফ্রা রেড ক্যামেরায় অনেক সময় তুষার চিতা চোখে পড়ে।

প্রকৃতির এই সাহসী সুন্দর সন্তান যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য কাজ করে চলেছেন অনেক নিবেদিত প্রাণ মানুষ।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

বর্তমানে সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যার প্রভাব আগামীর দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।

একটি বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমাদের অনুষ্ঠান মানুষ ও প্রকৃতি। অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে শুনবো প্রকৃতি সংবাদ

বিপন্ন হর্সশু কাঁকড়ার সংরক্ষণে চীনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ

চীনের একটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হর্স শু কাঁকড়া। এই কাঁকড়া সংরক্ষণে কিভাবে কাজ করছে চীন সে বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন শুভ আনোয়ার

চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উত্তর বাইবু উপসাগরের তীরে ক্রমহ্রাসমান চীনা হর্সশু কাঁকড়ার সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে পরিবেশবাদীরা। সামুদ্রিক এই প্রাণীর সংরক্ষণে ইতোমধ্যেই কৃত্রিম প্রজনন কর্মসূচী এবং আবাসস্থল রক্ষার মতো নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সম্প্রতি ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি ছোট হর্সশু কাঁকড়া হেপু তুকং জাতীয় প্রকৃতি সংরক্ষণাগারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কুয়াংনি ওশেন ইন্সটিটিউট গত এক দশকে একাধিকবার কয়েক লাখ কাঁকড়া ছেড়ে দিয়েছে।

উপকূলীয় পরিবেশ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই হর্সশু কাঁকড়া। এরা কাদামাটির ভিতরে থাকে। চীনা হর্সশু কাঁকড়া এবং ম্যানগ্রোভ হর্সশু কাঁকড়া দেশটির রাষ্ট্রীয় সুরক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণির সামুদ্রিক প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত। এটি পৃথিবীতে ৪০ কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকে আছে এবং এখনও তার মূল এবং প্রাচীন চেহারা বজায় রেখেছে।

যদিও সাম্প্রতিককালে মাত্রাতিরিক্ত মৎস্য আহরণ এবং আবাসস্থল ধ্বংস, দূষণ এবং অতিরিক্ত শিকারের ফলে হর্সশু কাঁকড়ার সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশবিদরা হর্সশু কাঁকড়ার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছেন।

বেইবু উপসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিজিইউ) মেরিন সায়েন্সেস কলেজের সহযোগী ডিন কুয়ান চিয়েয়াও জানান, জোয়ার কম থাকলে এবং পানির তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি থাকলে হর্সশু কাঁকড়া খাবারের জন্য বের হয়। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত চীনা হর্সশু কাঁকড়া সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে এবং বেশিরভাগ কাঁকড়া খাবারের জন্য বের হয়। কিন্তু বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে সামুদ্রিক এ সম্পদ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রজনন এবং ছেড়ে দেওয়া হর্সশু কাঁকড়ার সংখ্যা বৃদ্ধির সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।

এরই সাথে গবেষকরা চীনা হর্সশু কাঁকড়ার টিকে থাকার অবস্থা জানতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ জরিপ চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Close
Messenger Pinterest LinkedIn