মানুষ ও প্রকৃতি ১৭
যা রয়েছে এবারের পর্বে
১. প্রকৃতির লীলাভূমি সানশা সিটি
২. বাংলাদেশে বিরল প্রজাপতি ব্ল্যাক ফরেস্টার
নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।
সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। এ পর্বে আপনাদের নিয়ে যাবো এক অপরূপ সামুদ্রিক দ্বীপে। আরও শুনবেন বিরল প্রজাপতির গল্প।
প্রকৃতির লীলাভূমি সানশা সিটি
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত এক দারুণ সুন্দর স্থান সানশা সিটি। দক্ষিণ চীনেরদ্বীপ প্রদেশ হাইনানের একটি উপকূলীয় শহর সানশা। সামুদ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দারুণ সফল হয়েছে এই শহর। চলুন ঘুরে আসি সানশা থেকে। উপভোগ করি নির্মল পরিবেশ এবং জেনে নিই তাদের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে একটি প্রতিবেদনে।
নীল সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। প্রবাল প্রাচীরে ঘেরা এক দ্বীপ। এ যেন প্রকৃতির এক স্বর্গভূমি। এখানে রয়েছে সামুদ্রিক কচ্ছপ অনেক প্রজাতির পাখি এবং বিভিন্ন প্রাণী। গ্রিন সি টারটল বা সবুজ সামুদ্রিক কচ্ছপ চীনে প্রথম শ্রেণীর সুরক্ষায় রয়েছে। গ্রিন সি টারটল সানশার আইকনিক সরীসৃপ। এদের প্রজনন ঋতু মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে । এরা সাগর তীরের বালিতে ডিম পাড়ে।
এ বছর সানশা সিটির সিশা দ্বীপপুঞ্জে ও প্রবাল প্রাচীরে কচ্ছপের ২০টি বাসা পাওয়া গেছে। প্রজনন ঋতু শুরু হওয়ার সাথে সাথে, সানশাতে স্থানীয় জেলেরা নবজাতক কচ্ছপ শাবকদের বেঁচে থাকার হার বাড়ানোর জন্য কচ্ছপের বাসা বাঁধার কার্যক্রমের উপর নজরদারি বাড়িয়েছে।
সানশা মেরিন রিজার্ভ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের একজন স্টাফ মেম্বার ইয়ু ইয়াংফেই। তিনি বলেন, ,"মনিটরিং সিস্টেমটি ডিম পাড়ার জন্য উপকূলে আসা কচ্ছপ সম্পর্কে রিয়েল-টাইম তথ্য ক্যাপচার করে এবং আমাদের মোবাইল ফোনে সতর্কতা বার্তা পাঠায়। আমরা সাধারণত পরের দিন সকালে জেলেদের সাথে সাইটটি পরিদর্শন করি, কচ্ছপগুলো সত্যিই ডিম দিয়েছে কিনা তা যাচাই করি।“
ছোট ছোট শিশু কচ্ছপগুলো যখন ডিম ফুটে বের হয়। যখন তারা বালির উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে সমুদ্রের পানির দিকে যায় তখন সুন্দর দৃশ্যের সূচনা ঘটে। প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে সুন্দর সম্পর্কের কারণে এখানে কচ্ছপদের রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। তাদের বিলুপ্তি থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
গত পাঁচ বছরে, সানশা দ্বীপ এবং প্রবাল প্রাচীরগুলোতে সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রাকৃতিক বাসা বাঁধার সংখ্যা ১৩শ’ ছাড়িয়ে গেছে। টহল কর্মীরা বলেছেন তারা যখন ছোট ছোট কচ্ছপকে সমুদ্রে প্রবেশ করতে দেখেন তখন মনে খুব তৃপ্তি ও গৌরব অনুভব করেন।
সানশা টারটল পেট্রল টিমের সদস্য হুয়াং ছ্যং বলেন, `যতবার আমরা টহল দিতে যাই এবং ছোট ছোট কচ্ছপগুলোকে বেরিয়ে আসতে দেখি, আমরা তাদের হামাগুড়ি দিয়ে চলার পথ দেখে খুব আনন্দিত হই। আমরা কচ্ছপের বাসা রক্ষা করি। যখন তারা সমুদ্রের দিকে চলে যায় তখন আমরা মনে করি সফল হয়েছি।‘
মিঠা পানির অভাবের মতো চ্যালেঞ্জের কারণে, দ্বীপ এবং প্রাচীরগুলোতে বনায়ন করা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের কাজ। তবে বছরের পর বছর ধরে কাজ করে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর, সানশা সিটিতে ৮৫ হাজারেরও বেশি চারাগাছ লালনপালন করা হয়েছে এবং সফলভাবে ৫৩ হাজারের বেশি চারা রোপণ করা হয়েছে। কিছু দ্বীপ ও প্রাচীরে সবুজের আচ্ছাদন ৯০ শতাংশের উপরে পৌছেছে। সবুজায়ন এখনও চলছে।
সানশা ম্যারিন অ্যান্ড ফিশারি ব্যুরোর ডেপুটি ডিরেক্টর চাং ছ্যংলং। তিনি বলেন, "আমরা আমাদের শহরের সামুদ্রিক পরিবেশকে যৌথভাবে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন বিভাগ এবং প্রাসঙ্গিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচেষ্টা চালাতে থাকব।"
এখন পর্যন্ত চীনের সমুদ্রে মোট ৭৮ প্রজাতির সামুদ্রিক পাখির নাম রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪০ টিরও বেশি প্রজাতি সানশা দ্বীপ এবং প্রাচীরে বাস করে।
ইয়ংসিং এবং ছিলিয়ানইয়ু দ্বীপপুঞ্জে প্রবাল প্রাচীর পুনরুদ্ধার প্রদর্শন এলাকা স্থাপন করা হয়েছে। খুব শিগগিরি আরও ২ লাখ ৬০ হাজার প্রবালের চারা রোপণ করা হবে।
মানুষের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এখানকার প্রাকৃতিক সামুদ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাচ্ছে। সানশা সিটি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
প্রকৃতি সংবাদ
বাংলাদেশে বিরল প্রজাপতি ব্ল্যাক ফরেস্টার
অত্যন্ত বিরল এবং সুন্দর প্রজাপতি ব্ল্যাক ফরেস্টার, যা প্রকৃতির এক অদ্ভুত নিদর্শন। এর গাঢ় বাদামি রঙের ডানা এবং জটিল নকশা একে অন্য প্রজাপতি থেকে আলাদা করে তুলেছে। এই প্রজাপতিটি সাধারণত গভীর জঙ্গলে বাস করে এবং খুব কম দেখা যায়, যার ফলে এটি প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এক রহস্যময় প্রাণী হিসেবে পরিচিত।
সংকটাপন্ন এ প্রজাপতির ইংরেজি নাম ব্ল্যাক ফরেস্টার। নিম্ফালিডি গোত্রের স্যাটিরিনি উপগোত্রের প্রজাপতিটির বৈজ্ঞানিক নাম লেথে ভিনদাইয়া। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারে দেখা যায়। ব্ল্যাক ফরেস্টার মাঝারি আকারের প্রজাপতি। প্রসারিত ডানার দৈর্ঘ্য ৬৫ থেকে ৭০ মিলিমিটার। নাম কালো হলেও দেহ ও ডানার রং কিন্তু কালো নয়, বরং গাঢ় বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। ডানার ওপর চোখের মতো দেখতে ফুটকিগুলো তুলনামূলকভাবে বড়। পেছনের ডানার ওপরের চোখগুলো ফ্যাকাসে বলয়যুক্ত।
এরা মিশ্র চিরসবুজ পাহাড়ি বনের গহীনে বাস করে। রৌদ্রোজ্জ্বল ও নীরব দিনে ছড়ার তীর ও বনপথে রোদ পোহাতে দেখা যায়। অন্য সময় বাঁশঝাড়ের ভেতরে বিশ্রাম করে। দ্রুত উড়তে পারে। বয়স্কগুলো ফুলের নির্যাস, গাছের রস, পচা ফল ও স্যাঁতসেঁতে মাটির রস চোষে।
বিভিন্ন ধরনের গাছপালা প্রজাপতির বংশবৃদ্ধি ও খাদ্যের উৎস। বন ধ্বংস, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং কীটনাশকের অপব্যবহারের ফলে এই প্রজাতিটির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ব্ল্যাক ফরেস্টারকে বাঁচাতে বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী। এজন্য বন সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং কীটনাশকের ব্যবহার কমানো প্রয়োজন।
প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
সুপ্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সুন্দর ভারসাম্য রক্ষা করে বিশ্বকে সবুজ করে তোলার আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ