বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি ১২

CMG2024-09-01 18:46:47

যা রয়েছে এবারের পর্বে

১.মাদাগাস্কারের আইকন লেমুর

২. ইয়াংজি নদীতে বিপন্ন প্রজাতির স্টার্জন ফিশ

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।

মাদাগাস্কারের আইকন লেমুর

মাদাগাস্কারের অরণ্য। এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে যাচ্ছে লেমুর। মজার তাদের ভাবভঙ্গী। প্রাইমেট প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন হলো লেমুর। এই প্রাণীকে রক্ষা করতে মাদাগাস্কারে স্থাপন করা হয়েছে লেমুর পার্ক। চলুন ঘুরে আসি এই পার্ক থেকে ।

গভীর অরণ্য। এখানে উচুঁ উচুঁ গাছের ডালে দোল খায় লেমুর। এক গাছ থেকে লাফিয়ে যায় অন্য গাছে। উত্তর পশ্চিম মাদাগাস্কারে অবস্থিত লোকোবে প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অরণ্য পার্কে এসেছি আমরা। এখানে বাস করে কালো লেমুর, ওয়েসেল লেমুর এবং মাউস লেমুর।

লেমুর হলো মাদাগাস্কারের আইকনিক স্পিসিস। প্রাইমেট গোত্রভুক্ত কিছু প্রাণীর সমষ্টিগত নাম লেমুর। লেমুর শব্দের অর্থ ভুতের মতো। রাতের অন্ধকারে লেমুরের মুখে আলো ফেললে অনেকটা ভূতের মতো দেখায় বলে ওদের এই নাম।

প্রাইমেটদের মধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন গোষ্ঠী হিসেবে লেমুরকে গণ্য করা হয় এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) লেমুরকে লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

সংস্থাটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে বন উজাড় এবং অতিরিক্ত শিকারের কারণে পরবর্তী ২০ বছরে ৯৮ শতাংশেরও বেশি লেমুর বিলুপ্তির সম্মুখীন হবে।

তবে প্রকৃতির এই অমূল্য সন্তান যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা সক্রিয়ভাবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে এবং লেমুরদের রক্ষায় প্রকল্প চালু করেছে।

এরই ফলে স্থাপিত হয়েছে ডেডিকেটেড লেমুর পার্ক। এখানে পরিবেশবান্ধব অবস্থায় পর্যটকরা লেমুরদের দেখতে পাবেন।

প্রাকৃতিকভাবে লেমুর আফ্রিকা মহাদেশের মাদাগাস্কার দ্বীপেই পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে এরা মাদাগাস্কারে আবির্ভুত হয়। তখন থেকে এরা মাদাগাস্কারের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।

প্রায় দুই হাজার বছর আগে মাদাগাস্কার দ্বীপে মানুষের আগমন ঘটে। সেসময় পুর্ণ বয়স্ক গোরিলার আকারের লেমুর এখানে বাস করতো। পরে এরা বিলুপ্ত হয়ে যায়। এখন মাদাগাস্কারে প্রায় ১০০ প্রজাতির লেমুর রয়েছে।

বিভিন্ন প্রজাতির লেমুরের মধ্যে আচরণে পার্থক্য রয়েছে। বড় লেমুর দিনের বেলা ঘোরাফেরা করলেও ছোট আকারের লেমুর মূলত নিশাচর। ছোট লেমুররা কীট পতঙ্গ এবং ফল খায়। বড় লেমুররা গাছপালা, লতাপাতা, ফল খেয়ে থাকে। মূলত তৃণভোজী এরা। তবে কোন কোন প্রজাতির লেমুর সর্বভুক।

লেমুররা শারিরীক অঙ্গভঙ্গী, ঘ্রাণ ও বিভিন্ন প্রকার শব্দের মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরা দল বেঁধে বাস করে। অনেক সময় মুখের আকারও পরিবর্তন করে।

অবৈধ শিকার ও বাণিজ্য প্রতিরোধ করে এখন লেমুরদের রক্ষার জন্য জোরালো প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। প্রকৃতির এই সন্তান যেন হারিয়ে না যায় মায়ের কোল থেকে।

বর্তমানে সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যার প্রভাব আগামীর দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।

একটি বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমাদের অনুষ্ঠান মানুষ ও প্রকৃতি। অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে শুনবো প্রকৃতি সংবাদ

ইয়াংজি নদীতে বিপন্ন প্রজাতির স্টার্জন ফিশ

চীনের ইয়াংজি নদীর জীববৈচিত্র্যের রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। অতীতে ইয়াংজি নদীতে ছিল বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী। একসময় দূষণের কারণে এই জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যেতে থাকে। তবে পরিবেশ সংরক্ষণমূলক কাজ, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মাছধরায় নিষেধাজ্ঞা এবং দূষণ মুক্ত করার পক্রিয়ার ফলে এখন ইয়াংজি নদীর জীববৈচিত্র্য ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। সম্প্রতি এই নদীতে বিরল প্রজাতির ইয়াংজি স্টার্জন ফিশের দেখা মিলেছে।

বিপন্ন প্রজাতির ইয়াংজি-স্টার্জন ফিশের দেখা মিলেছে ইয়াংজি নদীতে। এই প্রজাতির মাছ চীনে প্রথম শ্রেণীর জাতীয় সুরক্ষার অধীনে রয়েছে। দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশের ইয়াংজি নদীর উপরের স্রোতধারায় মাছটি দৃষ্টি গোচর হয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি কর্তৃপক্ষ।

আলোকচিত্রীরা এই বিপন্ন প্রজাতির মাছের ছবি তুলেছেন বিপুল উৎসাহে। শুইফু শহরের মাছধরা স্টেশনের প্রধান লুও সিংকুয়ো বলেন, ‘এই ভিডিওর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে এখানকার অন্য মাছের প্রজাতির সঙ্গে ইয়াংজি-স্টার্জন ফিশ সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। তার মানে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা নিয়ম ইতিবাচক ফলাফল বয়ে এনেছে।’

লু জানান, এ শহর সংলগ্ন নদীর স্রোতে ২০২৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬২ প্রজাতির মাছ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে যার মধ্যে বেশ কিছু বিরল প্রজাতির মাছ রয়েছে। এই অঞ্চলে বিরল এবং স্থানীয় মাছের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ইয়াংজি-স্টার্জন ডাব্রি’স স্টার্জন নামেও পরিচিত । এই প্রজাতি বিশ্বের প্রাচীনতম মেরুদণ্ডী প্রাণীর অন্যতম।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সুপ্রিয় শ্রোতা

জেনে নিই ব্যালকনি বাগানের টিপস:

বারান্দায় টবের গাছে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি দিলে শিকড় পচে যেতে পারে।

বৃষ্টির মধ্যে বারান্দার বাগানে পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই। পানি দেয়ার আগে পরীক্ষা করে দেখবেন টবের মাটি ভেজা না শুকনো। তবে গাছে যখন ফুল আসে তখন পানির চাহিদা বেড়ে যায়। ফুল ধরেছে এমন গাছে প্রতিদিনই পানি দেয়া প্রয়োজন।

সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। আর নতুন বৃক্ষ রোপণ করি। আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Close
Messenger Pinterest LinkedIn