বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি পর্ব ১১

CMG2024-08-25 16:34:41

কী রয়েছে এ পর্বে

১. লি চিয়াং নদীর তীরে

২. হাতি পরিবারে নতুন সদস্য

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।

লিচিয়াং নদীর তীরে

পাহাড়ি নদীর স্বচ্ছ জল বয়ে চলেছে । জলের বুকে ছায়া পড়েছে সবুজ গাছের। প্রকৃতির এক অনন্য সুন্দর ভূমি দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কুইলিন সিটির লিচিয়াং নদীর তীরবর্তি এলাকা। এখানে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। কেমন করে এমনটা হলো, চলুন শুনে নিই সেই গল্প।

নদী বয়ে চলেছে নিরবধি। কিন্তু নদীর ভাষা কি বুঝতে পারে মানুষ? অনেক সময় বিভিন্ন রকম দূষণের শিকার হয়ে কলুষিত হয়ে পড়ে নদীর জল। নদীর সেই কান্না যে বুঝতে পারে সে এগিয়ে আসে নদীকে বাঁচাতে। কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কুইলিন সিটির একটি পাহাড়ি নদী লি চিয়াং।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং যখন মাত্র ১৩ বছরের কিশোর তখন লি চিয়াং নদীর তীরে ভ্রমণে গিয়েছিলেন তার স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে। তারা সাঁতার কেটেছিলেন সেই নদীর নীল স্বচ্ছ জলে। সেখানে জেলেদের জালে উঠতো ঝাঁকে ঝাঁকে সোনালি মাছ। সে ছিল এক রূপকথার দেশ।

কিন্তু পরবর্তিকালে বিভিন্ন রকম দূষণের শিকার হয় নদী। অতিরিক্ত বালি খনন আর তীরের অসংখ্য রেস্টুরেন্টের কারণে দূষিত হয়ে পড়ে নদীর পানি, হারিয়ে যেতে থাকে এই এলাকার জীববৈচিত্র্য।

২০১২ সালে পাঁচবছর মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এই নদীকে দূষণমুক্ত করার। ১৮তম সিপিসি ন্যাশনাল কংগ্রেসে এই এলাকার অর্থনীতি, বাস্তুতন্ত্র পরিবেশ, সংস্কৃতিসহ সামগ্রিক উন্নতির দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়।

২০১২ থেকে এখন পর্যন্ত কুয়াংসি অঞ্চলে বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন প্রেসিডেন্ট সি। এখানকার পরিবেশগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে জোর দিয়েছেন। লি চিয়াং নদীর অববাহিকায় বাসরত ৩.৫ মিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র উন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ।

এখন আবার লি চিয়াং নদীর সেই নীল পরিষ্কার পানি আর জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। নদীর ভাষা এখন আনন্দের।

সম্প্রতি পালিত হয় চীনের দ্বিতীয় জাতীয় পরিবেশ দিবস। সেখানে পরিবেশের সুরক্ষায় চীনের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরা হয়।

২০১২ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিসির ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে, চীন ১০২ কোটি মু বা ৬ কোটি ৮০ লাখ হেক্টর জমিতে বনায়ন সম্পন্ন করেছে। একই সময়ে ১২৪ কোটি মু জমিতে বনায়নের হার ২১ দশমিক ৬৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ হয়েছে।

চীনে এখন কৃত্রিম সংরক্ষিত বন এলাকা ১৩১ কোটি মু’র বেশি। যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। এই সময়ে ঘাস বপনের মাধ্যমে প্রায় ৭০ কোটি মু পরিমাণ জমির মান উন্নত করা হয়েছে। চীন বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থাও তৈরি করছে, যাতে সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী প্রজাতির ৮০ শতাংশেরও বেশি নিরাপদে থাকছে।

চীন জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং দক্ষিণ চীন জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিপন্ন প্রজাতির জায়ান্ট পান্ডা এবং বেশ কিছু বিপন্ন বন্য উদ্ভিদের সংরক্ষণের প্রচেষ্টাও বাড়িয়েছে।

দেশ জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে অনেক জলাভূমি পার্ক।

মোট সাড়ে ৮৪ কোটি মু জলাভূমিতে তিন হাজার ৬০০টি সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প সম্পন্ন করেছে চীন। প্রকৃতি সংরক্ষণের বিচারে যা বিশ্বে চতুর্থ।

বন্যেরা বনে সুন্দর। আর মানবসভ্যতা যদি প্রকৃতির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ভাবে সহাবস্থান করতে পারে তাহলে সৃষ্টি হয় সুন্দর বিশ্ব।

প্রকৃতি সংবাদ

হাতি পরিবারে নতুন সদস্য

কয়েক বছর আগে ইয়ুননান প্রদেশে একপাল বন্য এশিয়ান হাতির যাত্রা পুরো বিশ্বে আলোড়ন তোলে। সেই হাতির পালে গত তিন বছরে নতুন শিশুদের জন্ম হয়েছে। হাতিদের এই সুখবর বিস্তারিত জানবো।

প্রকৃতিপ্রেমীদের নিশ্চয়ই মনে আছে ২০২০ সালের মার্চ মাসে ইয়ুননান প্রদেশের সিশুয়াংবান্না তাই স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ছেড়ে একদল হাতি ভ্রমণ শুরু করে। ২০২১ সালের জুন মাসে তারা প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রাদেশিক রাজধানী কুনমিংয়ে এসে পৌছায়। বেশ কিছুদিন কুনমিংয়ে ঘোরাঘুরির পর হাতির পাল আবার দক্ষিণে যাত্রা করে এবং ডিসেম্বরে তারা সিশুয়াংবান্নায় ম্যংইয়াং এলাকায় ফিরে আসে।

সম্প্রতি সিশুয়াংবান্নার এশিয়ান হাতি সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের প্রধান ওয়াং বিন জানিয়েছেন হাতিরা সুস্থ আছে এবং তাদের পরিবারে নতুন সদস্য যোগ হয়েছে। গত তিন বছরে চারটি নতুন শিশুর জন্ম হয়েছে। বাচ্চা হাতিগুলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। তাদের বেঁচে থাকার দক্ষতা বাড়ছে। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তারা বালি স্নান ও খাবার খুঁজে খাওয়ার মতো কৌশল শিখছে।

বর্তমানে বন্য হাতি পরিবার দুটি দলে বিভক্ত হয়েছে। ১৩টি হাতির একটি দল ম্যংইয়াং এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্য সাতটি হাতি চিংহোং সিটির দাদুকাং টাউনশিপে অন্য একটি হাতি পরিবারের ২৮ টি বন্য হাতির সঙ্গে বেশ মিলেমিশে ঘুরছে।

জাতীয় বন ও তৃণভূমি প্রশাসনের অধীনে এশিয়ান হাতি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ছেন ফেই জানান, বিচরণকারী পরিবারকে প্রতিনিধি হিসাবে গ্রহণ করা, নতুন বাচ্চার ঘন ঘন জন্ম এবং পালকে বিভক্ত করা এবং একত্রিত হওয়া সম্পূর্ণরূপে প্রমাণ করে যে স্থানীয় হাতি দলের মধ্যে ঘন ঘন যোগাযোগ রয়েছে এবং তারা স্বাস্থ্যকরভাবে প্রজনন করছে।

এশিয়ান হাতি, রেইনফরেস্ট ইকোসিস্টেমের একটি প্রধান প্রজাতি। চীনে প্রথম শ্রেণীর জাতীয় সুরক্ষার অধীনে রয়েছে এশিয়ান বুনো হাতি। ইয়ুননান প্রদেশের বনাঞ্চলে এদের দেখা পাওয়া যায়।

সুপ্রিয় শ্রোতা, অনুষ্ঠানের শেষে জেনে নিই বারান্দা বাগানের টিপস।

অনেকেই বারান্দায় বাগান করেন। এক্ষেত্রে আপনার বারান্দায় রোদ আসে কিনা সেটা একটা বড় বিষয়। যদি আপনার বারান্দায় রোদ আসে তাহলে টগর, গোলাপ, অপরাজিতা, জুই, দোলনচাঁপা, অর্কিড, বেলি, হাসনাহেনা ফুলের গাছ লাগাতে পারেন। এ গাছগুলো টবে বেশ ভালোই থাকে।

আসুন আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Close
Messenger Pinterest LinkedIn