বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি ১০

CMG2024-08-18 16:33:52

কী রয়েছে এ পর্বে

১. বিরল প্রাণী রেড পান্ডা

২. ফিনলেজ পরপয়েস

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।

বিরল প্রাণী রেড পান্ডা

জায়ান্ট পান্ডার নাম আমরা সবাই জানি। কিন্তু রেড পান্ডা নামটি অনেকের অজানা। জায়ান্ট পান্ডার সঙ্গে চেহারা বা আকারে তেমন কোন মিল না থাকলেও একে রেড পান্ডা নামে ডাকা হয়। অত্যন্ত বিরল এই প্রাণী সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন।

পাহাড়ি অরণ্য। উঁচু উঁচু গাছ। এখানে গাছের ডালে পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ছোট্ট একটি প্রাণী। দেখতে অনেকটা র‌্যাকুনের মতো। লাল পশমে ঢাকা দেহ। কি প্রাণী এটা? এটা রেড পান্ডা। স্তন্যপায়ী প্রাণী। গোল মাথা । লালের উপর সাদা দাগ রয়েছে। লেজটা বেশ বড় ও উজ্জ্বল পশমে ঢাকা। এরা ৪২ ইঞ্চির মতো লম্বা হয়ে থাকে। ওজন পাঁচ থেকে আট কেজি হতে পারে।

রেড পান্ডার দুটি সাবস্পিসিস রয়েছে। ওয়েস্টার্ন রেড পান্ডা বসবাস করে পশ্চিম চীনে এবং নেপাল, উত্তর পূর্ব ভারত ও ভুটানে।

আরেক ধরনের রেড পান্ডাকে বলা হয় স্টাইয়ান’স রেড পান্ডা। এরা বসবাস করে চীনের ইয়ুননান প্রদেশের নুচিয়াং নদীর তীরে এবং সিছুয়ান প্রদেশের হ্যংতুয়ান পাহাড়ের নিবিড় অরণ্যে। মায়ানমারের অরণ্যেও এদের দেখা যায়। প্রাচীনকালে চীনের কুইচোও, ছিংহাই , কানসু এবং শানসি প্রদেশের অরণ্যে এদের দেখা মিলতো। কিন্তু রেড পান্ডার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো তার দেহের সুন্দর পশম এবং লেজ। এই পশম ও লেজের লোভে চোরা শিকারিরা এদের হত্যা করে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল।

তবে চীন সরকারের গত কয়েক দশকের পরিবেশ সংরক্ষণমূলক কাজের ফলে এদেরকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এখন ইয়ুননান , সিছুয়ান এবং সিছাংয়ের বনাঞ্চলে এদের দেখা যায়।

সিছুয়ান প্রদেশের ওয়েনছুয়ান কাউন্টির ছিয়ংলাই পর্বতমালার অরণ্য এলাকায় উলং ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভ পার্কে সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে এখন রেড পান্ডাদের দেখা মেলে। তাদের প্রজনন ও রক্ষণের মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য জীববিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে গবেষণা ও কাজ করে চলেছেন।

জায়ান্ট পান্ডার মতোই রেড পান্ডাও কিন্তু বাঁশ পাতা ও বাঁশের ডগা খেতে ভীষণ ভালোবাসে। তাদের দাঁতও খুব ধারালো। জায়ান্ট পান্ডার মতো রেড পান্ডারও হাতের থাবায় একটি অতিরিক্ত নখর রয়েছে যা দিয়ে সে সহজে বাঁশ ধরতে পারে। নিজের দেহের ওজনের ত্রিশ শতাংশ খাবার ওকে প্রতিদিন খেতে হয়। ফলে দিনের মধ্যে ১৩ ঘন্টাই সে খাওয়ায় ব্যস্ত থাকে। বাঁশ ছাড়াও রেড পান্ডা বেরি, পাখির ডিম, ফুল, পাতা, ছোট পাখি এমনকি কখনও কখনও মাশরুম, পোকামাকড় ও ছোট্ট স্তন্যপায়ী প্রাণীদেরও খেয়ে থাকে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৫০০০ ফুট থেকে ১৩ হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ি অরণ্যে এরা বাস করে। বাঁশ ঝোপ বা পাহাড়ি গাছের কোটরে থাকে ওরা। এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে চলে যায়।

ওরা মূলত নিশাচর প্রাণী। রাত ছাড়া, সন্ধ্যায় ও খুব ভোরে এদের দেখা যায়। থাবায় পশম থাকায় ওরা তুষারের উপরও হাঁটতে পারে।

ওরা কিন্তু বেশ লাজুক। একা একা থাকতেই বেশি ভালোবাসে। রেড পান্ডা চীনের বন্য প্রাণী সুরক্ষার তালিকায় প্রথম শ্রেণীতে রয়েছে। বন্য পরিবেশে এদের আবার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য চলছে নিরন্তর গবেষণা।

বর্তমানে সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যার প্রভাব আগামীর দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।

একটি বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমাদের অনুষ্ঠান মানুষ ও প্রকৃতি। অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে শুনবো প্রকৃতি সংবাদ

ফিনলেস পরপয়েসের শাবকটি বেড়ে উঠছে

চীনের ইয়াংজি নদীর ফিনলেস পরপয়েস বা ডানাহীন শুশুক একটি ক্রিটিকালি এনডেনজারড স্পিসিস। বিভিন্ন রকম নদী দূষণের ফলে এই প্রজাতি একসময় বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল। তবে দীর্ঘদিন ধরে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের ফলে এখন এই প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সম্প্রতি ফিনলেস পরপয়েসের একটি শাবক জন্ম নিয়েছে উহানের পাইচি পরপয়েস মিউজিয়ামে। সেই শাবকটির সাম্প্রতিক খবর ।

ইয়াংজি নদীর ফিনলেস পরপয়েস প্রজাতির ছেলে বাচ্চাটি বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যচীনের হুবেই প্রদেশের উহানের চাইনিজ একাডেমির ইন্সটিটিউট অব হাইড্রোবায়োলজির বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইয়াংজি নদীর ফিনলেস পরপয়েস ফুচিউ একটি মেয়ে শুশুক। উহান পাইচি পরপয়েস মিউজিয়ামে সম্প্রতি সে একটি ছেলে শাবকের জন্ম দেয়।

ইয়াংজি নদীর পরপয়েস একটি বিপন্ন প্রজাতির বা ক্রিটিকালি এনডেনজারড জলজ প্রাণী। তারা দুষ্টু হাসি ও বুদ্ধিমত্তার জন্য বিখ্যাত। ইয়াংজি নদীর ফিনলেস পরপয়েসের বুদ্ধি গোরিলার সমতুল্য।

বাচ্চা ছেলে শুশুকটি বেশ বড় হয়ে উঠেছে। তার মাকে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দেয়া হচ্ছে। বাচ্চাটি এখন মাতৃদুগ্ধের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারে অভ্যস্ত হচ্ছে।

জন্মের তিন মাস পর বাচ্চাটিকে ছোট মাছ দেয়া হবে। দেড় থেকে দুবছর বয়সে তাকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে ভিন্ন দলে রাখা হবে।

চীন সরকারের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষামূলক কার্যক্রমের ফলে ধীরে ধীরে ইয়াংজি নদীর ফিনলেস পরপয়েজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । চীনের প্রথম শ্রেণীর সুরক্ষার অধীনে রয়েছে এই শুশুক।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। আর নতুন বৃক্ষ রোপণ করি। আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Close
Messenger Pinterest LinkedIn