বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি ৯

CMG2024-08-10 19:00:56

কী রয়েছে এ পর্বে

১. মানুষ ও বাঘের দ্বন্দ্ব কমছে চীনে

২. ট্রিপলেট পান্ডার জমকালো জন্মদিন

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।

মানুষ ও বাঘের দ্বন্দ্ব কমছে চীনে

আদিম পৃথিবীতে হিংস্র বাঘের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে মানুষকে। আধুনিক বিশ্বে চোরা শিকার, আবাসস্থল ধ্বংসসহ বিভিন্ন কারণে মানুষের সঙ্গে চলছে বাঘের দ্বন্দ্ব। বিপন্ন হয়ে পড়েছে বাঘ। কিন্তু চীনে বাঘ ও মানুষের এই দ্বন্দ্ব অনেক কমানো সম্ভব হয়েছে আর বাড়ানো হচ্ছে বাঘের সংখ্যা। কিভাবে ঘটছে এমন ঘটনা? শুনবো প্রতিবেদনে।

নিশ্চিন্ত মনে মায়ের সঙ্গে খেলা করছে বাঘের ছানা। রাজকীয় চালে হেঁটে যাচ্ছে সাইবেরিয়ান টাইগার। সে জানে এখানে তার ভয়ের কোন কারণ নেই। এটি অভয়ারণ্য। ইনফ্রারেড ক্যামেরাতেও দেখা যাচ্ছে তাদের গতিবিধি।

হেইলংচিয়াং ও চিলিন প্রদেশের সীমান্তবর্তি অরণ্য অঞ্চল। তুষারের উপর হেঁটে যাচ্ছে বাঘ। এমন ঘটনা ঘটছে উত্তর পূর্ব চীনের টাইগার অ্যান্ড লেপার্ড ন্যাশনাল পার্কে। এখানে ৭০টির মতো বন্য সাইবেরিয়ান টাইগার ৮০টি বন্য আমুর লেপার্ড রয়েছে। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পার্ক গড়ে তুলতে কাজ করছেন দশ হাজারের বেশি মানুষ।

১৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে স্থাপিত পার্কটি মানুষ ও বাঘের মধ্যে আবহমান কাল ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বও কমাতে পেরেছে। শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক বছর আগেই। বনায়ন হয়েছে নতুন করে। চলছে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে জন্ম নেয়া বাঘ শাবককেও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বন্য অবস্থায় টিকে থাকার জন্য।

রাশিয়ার দূর প্রাচ্য এবং উত্তর পশ্চিম চীনে মূলত বাস করে আমুর টাইগার ও লেপার্ড যারা বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। আমুর টাইগারের আরেক নাম সাইবেরিয়ান টাইগার।

শীতল সাইবেরিয়ান অরণ্যের ফ্ল্যাগশিপ স্পিসিস এই বাঘ। এখানকার অরণ্যের ইকোসিস্টেমের প্রধান সদস্যও সাইবেরিয়ান টাইগার। ১৯৯৮ সালে মাত্র ১২ থেকে ১৬টি বাঘ ছিল এই এলাকায়।

মানুষ ও বাঘের মধ্যে যে আবাস ভূমি ও অন্যান্য কারণে স্মরণাতীত কাল থেকে দ্বন্দ্ব চলছে তা কমিয়ে আনা হয়েছে চীনে। ফলে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে বাঘ ও চিতার সংখ্যা।

ন্যাশনাল ফরেস্ট্রি অ্যান্ড গ্রাসল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ফেলিন রিসার্চ সেন্টারের ডেপুটি ডিরেকটর এবং নর্থইস্ট ফরেস্ট্রি ইউনিভারসিটির অধ্যাপক চিয়াং কুয়াংশুন জানান, ২০০০ সালে চীনে মাত্র ১০টি সাইবেরিয়ান টাইগার ছিল। তারা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল এবং শুধুমাত্র চীন ও রাশিয়ার সীমান্তে ছিল। গত দুই দশকে অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। নর্থ ইস্ট চায়না টাইগার অ্যান্ড লেপার্ড ন্যাশনাল পার্কে মা বাঘ ও ছানাদের দেখা পাওয়া কোন বিরল ঘটনা নয়। অনেক বাঘ পরিবার এখানে রয়েছে। বিশেষ করে গত দুই বছরে অনেক মা এবং শাবকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে ।

সম্প্রতি ১৪তম বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হয়। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, বাঘের আবাসভূমি সংরক্ষণ, বাঘকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য গণ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

বিশ্বের ১৩টি দেশে বাঘ বাস করে। এর মধ্যে অন্যতম চীন। গত কয়েক দশক ধরে চীনে জীববৈচিত্র সংরক্ষণমূলক ও পরিবেশ উন্নয়নে কাজ চলছে। এর ফলে বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে নর্থইস্ট চায়না টাইগার অ্যান্ড লেপার্ড ন্যাশনাল পার্কে ২০টি সাইবেরিয়ান টাইগার এবং ১৫টি আমুর লেপার্ডের জন্ম হয়েছে।

অধ্যপক চিয়াং কুয়াংশুন আরও জানান ,"কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যালগরিদম প্রযুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে, ড্রোন প্রযুক্তি, ভাইব্রেশন ফাইবার অপটিক প্রযুক্তি এবং শব্দ শনাক্তকরণ প্রযুক্তিসহ কিছু অত্যন্ত উন্নত ডেটা সংগ্রহ এবং সংক্রমণ প্রযুক্তিরও প্রয়োজন। এর জন্য আন্তঃবিভাগীয় গবেষণা প্রয়োজন। বন্যপ্রাণী গবেষণার সাথে এই আন্তঃবিভাগীয় প্রযুক্তিগুলিকে একীভূত করা প্রয়োজন। সুরক্ষা, বিশেষ করে বাঘ সুরক্ষা, সংরক্ষণের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এটা দরকার।"

সবুজ পৃথিবীর রাজকীয় সন্তান বাঘকে রক্ষা করার জন্য চীনের প্রচেষ্টা প্রশংসিত হয়েছে বাঘ দিবসের বিভিন্ন আলোচনায়।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: আফরিন মিম

একটি বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমাদের অনুষ্ঠান মানুষ ও প্রকৃতি। অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে শুনবো প্রকৃতি সংবাদ

প্রকৃতি সংবাদ

বিশ্বের একমাত্র জীবিত ট্রিপলেট পান্ডার দশম জন্মদিন উদযাপিত

বিশ্বে একমাত্র জীবিত ট্রিপলেট পান্ডার দশম জন্মদিন সম্প্রতি উদযাপিত হয়েছে জমজমাটভাবে।

বিশ্বের একমাত্র জীবিত জায়ান্ট পান্ডা ট্রিপলেট ম্যং ম্যং, খু খু এবং শুয়াই শুয়াই তাদের দশম জন্মদিন উদযাপন করেছে। সম্প্রতি কুয়াংতোং প্রদেশের কুয়াংচৌ সিটির ছিমেলং সাফারি পার্কে জমজমাট আয়োজনে এই তিন পান্ডার জন্মদিন পালন করা হয়। পার্ক কর্তৃপক্ষ পান্ডাদের জন্য বিশেষ মুখরোচক খাবারের আয়োজন করে। জায়ান্ট পান্ডার যমজ শাবক জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। কিন্তু তাদের ট্রিপলেট বা তিন সন্তান একসঙ্গে জন্ম দেয়ার ঘটনা খুবই কম।

২০১৪ সালের অগাস্ট মাসে সারা বিশ্বে জায়ান্ট পান্ডার মাত্র তিনটি ট্রিপলেট জন্ম নেয়। ছিমেলং ট্রিপলেট হলো বিশ্বের একমাত্র জীবিত ট্রিপলেট।

এবারের জন্মদিনের পার্টিতে বড়ভাই শুই শুইকে একটি ঘূর্ণায়মান মঞ্চে দেখা যায়। ছোট ভাই খু খু একটি ট্রেনে চড়ে। ওই রাইডে তার খাবার দেয়া হয়েছিল।

বোন ম্যং ম্যং গত মাসে একটি শাবকের জন্ম দিয়েছে। তাকে আরামে ঘুমাতে দেখা যায়। ম্যং ম্যং এবং তার শাবক বেশ ভালোই আছে।

এই শাবকটি হলো চায়না কনজারভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার ফর জায়ান্ট পান্ডা প্রতিষ্ঠানে এ বছর জন্ম নেয়া প্রথম পান্ডা।

জন্মদিনের কেকটি সাজানো হয়েছিল মজাদার ফল ও বাঁশ দিয়ে। সেইসঙ্গে তাদের বিশেষ উপহারও দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদন : শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। আর নতুন বৃক্ষ রোপণ করি। আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Close
Messenger Pinterest LinkedIn