বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি ৭

CMG2024-07-28 16:29:03

কী রয়েছে এ পর্বে

১. অরণ্যে ফিরে গেল জায়ান্ট পান্ডা

২. ক্রেস্টেড আইবিস পাখির জন্য প্রথম সংরক্ষণ গবেষণা কেন্দ্র

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।

অরণ্যে ফিরে গেল জায়ান্ট পান্ডা

দেখলেই মনে হয় কোনো সফট টয়েজ। আদুরে আদুরে ভাব। চলাফেরায় আলস্য। চীনের সবচেয়ে পরিচিত প্রাণী জায়ান্ট পান্ডা। একটি জায়ান্ট পান্ডা ফিরে যাচ্ছে অরণ্যে। সেকি বাঁচতে পারবে বুনো পরিবেশে? কেন তাকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে অরণ্যে? চলুন শোনা যাক সেই গল্প।

সিছুয়ান প্রদেশের অরণ্য। এই অরণ্যে পান্ডার পোশাক পরা দুজন কর্মী নিয়ে এসেছেন জায়ান্ট পান্ডা সিয়ান সিয়ানকে। ওকে ছোটবেলা থেকে লালন পালন করেছেন মু শিচিয়ে।

সিয়ান সিয়ানকে ছেড়ে দেয়া হলো অরণ্যের গভীরে। সে করুণ চোখে চেয়ে আছে তার পালক পিতা মু শিচিয়ের দিকে।

মু শিচিয়ে চিন্তিত। সিয়ান সিয়ান তো কখনও একা জঙ্গলে থাকেনি। একা একা জঙ্গলের বৈরী পরিবেশে কিভাবে টিকে থাকবে ও?

তবে ভাবনার কিছু নেই। সুরক্ষিত পরিবেশে ওর জন্ম হলেও তাকে কিন্তু জঙ্গলে নিজে নিজে টিকে থাকার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। সিছুয়ানের উলং ন্যাশনাল পার্কের হ্যথাওফিং পান্ডা বেইসে। থিয়ানথাই পাহাড়ের অরণ্যে জায়ান্ট পান্ডার প্রাকৃতিক বাসস্থান। সেখানে যেন বন্য পরিবেশ পান্ডা টিকে থাকতে পারে সেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

বিশ্বের বিরল প্রজাতির প্রাণীদের অন্যতম জায়ান্ট পান্ডাকে রক্ষা করার জন্য চীন সরকারের প্রচেষ্টার শেষ নেই। পান্ডাদের প্রজনন ও গবেষণার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সিছুয়ান প্রদেশের ছেংতু সিটিতে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত পান্ডা গবেষণা ও প্রজনন কেন্দ্র। সিছুয়ানে রয়েছে জায়ান্ট পান্ডা ন্যাশনাল পার্ক।

সফলভাবে পান্ডার প্রজনন ও সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পান্ডা এখন আর এনডেনজারড প্রজাতি নয়। তাদেরকে ভালনারেবল প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পান্ডার সংখ্যা বৃদ্ধি শুধু নয় বন্য প্রাকৃতিক পরিবেশে পান্ডাকে ফিরিয়ে দেয়ার কাজও চলছে।

২০০৩ সালে চায়না কনজারভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার ফর জায়ান্ট পান্ডা সিসি আর সি জি পি রিইন্ট্রোডাকশন প্রোগ্রাম শুরু করে। এই প্রকল্পের অধীনে পান্ডাকে বন্য পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত ১১টি পান্ডাকে বন্য পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে নয়টি পান্ডা বন্য পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছে।

জায়ান্ট পান্ডাকে অরণ্যে ফিরিয়ে দেয়ার কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে তাদের সুরক্ষিতভাবে বনে কিছুদিন রেখে বনের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তারপর সুরক্ষা ব্যবস্থা তুলে নেয়া হয়। তবে তাদের ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

জায়ান্ট পান্ডা বন্য প্রাণী সুরক্ষা তালিকায় প্রথম শ্রেণীতে রয়েছে। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বন্য অবস্থায় পান্ডার সংখ্যা এক হাজার ৯শর বেশি। যেখানে ১৯৮০ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১১শ। পান্ডাসহ সকলপ্রকার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে চীনের ভূমিকা ও কার্যক্রম বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।

বন্যেরা বনে সুন্দর এই কথাকে অনুসরণ করে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে প্রকৃতির কোলে।

বর্তমানে সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যার প্রভাব আগামীর দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।

একটি বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমাদের অনুষ্ঠান মানুষ ও প্রকৃতি। অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে শুনবো প্রকৃতি সংবাদ

প্রকৃতি সংবাদ

ক্রেস্টেড আইবিস পাখির জন্য প্রথম সংরক্ষণ গবেষণা কেন্দ্র

পূর্ব এশিয়ার লোকজ সংস্কৃতিতে ক্রেস্টেড আইবিসের রয়েছে অনন্য অবস্থান। একে বলা হয় ওরিয়েন্টাল জেম বা প্রাচ্যের রত্ন। চীন, জাপান, কোরিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নে এক সময় এই পাখি দেখা যেত। তবে ১৯৬৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৯৭৫ সালে কোরিয়া উপদ্বীপ এবং আশির দশকে জাপান থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এখন শুধুমাত্র চীনে এই পাখি বন্য অবস্থায় টিকে আছে। এই পাখির জন্য প্রথম সংরক্ষণ গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে শায়ানসিতে।

বিপন্ন প্রজাতির পাখি ক্রেস্টেড আইবিসের জন্য প্রথম সংরক্ষণ গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে চীন। শায়ানসি প্রদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে হানচোং শহরে এই সংরক্ষণ গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

কেন্দ্রটি যৌথভাবে স্থাপন করবে ন্যাশনাল ফরেস্ট্রি অ্যান্ড গ্রাসল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং শায়ানসি প্রদেশের সরকার। এই কেন্দ্রে ক্রেস্টেড আইবিস পাখি বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, উদ্ধার, প্রজননসহ বিভিন্ন দিকে কাজ করা হবে।

সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

ক্রেস্টড আইবিস পাখি চীনের প্রথম শ্রেণীর বন্যপ্রাণী রাষ্টী্রয় সুরক্ষার অধীনে রয়েছে। একসময় পূর্ব এশিয়ায় এই পাখির ব্যাপক বিচরণ ছিল। চীনের সংস্কৃতিতেও ক্রেস্টেড আইবিস পাখির অনেক প্রভাব রয়েছে।

যাইহোক, ২০ শতকের পর থেকে, কোরিয়ান উপদ্বীপে এবং জাপানে বন্য ক্রেস্টেড আইবিস বিলুপ্ত হতে শুরু করে।

১৯৮১ সালে, বিশেষজ্ঞরা চীনের শায়ানসি প্রদেশের হানচোংয়ে সাতটি বন্য ক্রেস্টেড আইবিস খুঁজে পান। এই সাতটি বন্য ক্রেস্টেড আইবিস থেকে কৃত্রিম উপায়ে প্রজনন করে তাদের সংখ্যা বাড়ানো হতে থাকে।

৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ এবং প্রজনন প্রচেষ্টার পর বর্তমানে বিশ্বে ক্রেস্টেড আইবিসের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শায়ানসি প্রদেশেই আছে ৭ হাজার সাতশ ক্রেস্টেড আইবিস পাখি।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্রাহ

সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। গ্রামে কিংবা শহরে যেখানেই আমরা থাকি না কেন, আমাদের আশপাশের জীবজন্তু ও পাখিদের রক্ষায় ভূমিকা পালন করি। ঘরের অনেক ফেলে দেয়া খাবার দিয়েও পশুপাখির প্রতি সদয় ব্যবহার করা সম্ভব। পথের বিড়াল কুকুর, ব্যালকনিতে উড়ে আসা পাখিদের খাবার দিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে পারি। আর নতুন বৃক্ষ রোপণ করি। আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Close
Messenger Pinterest LinkedIn