মানুষ ও প্রকৃতি ১
১. চীনে বাড়ছে বনায়ন
২. প্রকৃতি সংবাদ
৩. প্রকৃতির সন্তান মিলু হরিণ
ইন্ট্রো:
নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।
সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।
বর্তমানে সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যার প্রভাব আগামীর দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।
একটি বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমাদের অনুষ্ঠান মানুষ ও প্রকৃতি।
চীনে বাড়ছে বনায়ন
ওসি: চীনে বনায়ন বাড়ছে, সবুজ হয়ে উঠছে আরও বেশি ভূমি। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে ২০২৩ সালে ৫৯.৯৭ মিলিয়ন মু বা ৩.৯৯৮ মিলিয়ন হেকটর জমিতে বনায়ন করা হয়েছে। চীনের এই বনায়ন নিয়ে শুনবো একটি প্রতিবেদন।
প্যাকেজ: চীনে সবুজায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে চলেছে। গত দুই দশকের চেষ্টায় বিশ্বের একচতুর্থাংশ সবুজ ভূমি সৃষ্টিতে অবদান রেখেছে চীন। এই অর্জনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রাথমিকভাবে মরুভূমি অঞ্চলে, উত্তরপশ্চিম চীনের শুষ্ক অঞ্চলে বড় আকারে সবুজায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে বন সৃষ্টির প্রচেষ্টা। স্থল সবুজায়নের জন্য সম্ভাব্য সকল জায়গায় বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ চীনের প্রতিশ্রুতি যা বিশ্বের সবুজায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
পর্বত, নদী, অরণ্য কৃষিক্ষেত্র, লেক, তৃণভূমি ও মরুভূমি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২০২৩ সালে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন অর্জন করেছে চীন।
চলতি বছর সবুজায়নের জন্য বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে চীন। জাতীয় পরিকল্পনা অনুসারে ১০০ মিলিয়ন মু(প্রায় ৬.৬৭ মিলিয়ন হেকটর) জমি সবুজ করে তুলবে তারা। এরমধ্যে ৫৪ মিলিয়ন মু বা ৩.৬ মিলিয়ন হেকটর ভূমিতে সৃষ্টি হবে অরণ্য।
চীনের ১৮তম কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)জাতীয় কংগ্রেস ২০১২ সাল থেকে সারা দেশে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়েছে, সফলভাবে মোট ১.৬৮ বিলিয়ন মু বা ১১২ মিলিয়ন হেকটর জমির সবুজায়ন সম্পন্ন করেছে। দেশের বনাঞ্চল এবং বনের ঘনত্বের পরিমাণ উভয়ই বহুবছর ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে। রোপিত বনের আয়তন ১.৩১৪ বিলিয়ন মু বা ৮৭.৬ মিলিয়ন হেক্টরে পৌছেছে, যা বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে।
জাতীয় বন ও তৃণভূমি প্রশাসনের তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ৭ মিলিয়ন মু (প্রায় ৪ লাখ ৬৭ হাজার হেকটর) জমিতে সবুজায়ন সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্বের পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে চীন।
প্রকৃতি সংবাদ
সুপ্রিয় শ্রোতা শুনছেন প্রাণ ও প্রকৃতি। এ পর্যায়ে এখন শুনবো প্রকৃতি সংবাদ। জানাচ্ছেন আফরিন মিম
চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের ছিছিহার এলাকায় চালং ন্যাশনাল নেচার রিসার্ভ বা প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও জলাভূমিতে এখন লাল-মুকুট সারসের প্রজনন শৌসুম চলছে। এখানে ডিম ফুটে বের হচ্ছে ছানা পাখি।
এই প্রাকৃতিক সংরক্ষিত জলাভূমি বনাঞ্চলকে বলা হয় এই প্রজাতির সারসের বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবাসভূমি। চীনে এই সংরক্ষিত বনাঞ্চল ‘হোম অব রেড ক্রাউনড ক্রেন’ বা লাল মুকুট সারসের বাসভূমি নামে পরিচিত।
চালং ন্যাশনাল রিজার্ভে এই প্রকৃতির সারসের প্রজনন এবং তাদের সংরক্ষণের উপর গবেষণা কার্যক্রমও চলছে। ক্যাপটিভ অবস্থায় জন্ম নেয়া পাখির ছানাদের বন্য প্রকৃতিতে টিকে থাকার উপযুক্ত বয়সে পৌছালে অবমুক্ত করা হয়। এখান থেকে ৩৮০টির বেশি রেড ক্রাউনড পাখিকে অবমুক্ত করা হয়েছে।
এখানে এই প্রজাতির পাখিদের বসবাসের সবচেয়ে উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে বলে পাখিরা প্রজনন মৌসুমে এখানে বসতি গাড়ে।
প্রকৃতির সন্তান মিলু হরিণ
ওসি: চীনের একটি বিপন্ন প্রজাতির হরিণ মিলু । একে পিয়েরে ডেভিড’স ডিয়ারও বলা হয়। একশ বছর আগে বিভিন্ন কারণে বিলুপ্ত হয়ে যায় এই হরিণ। কিন্তু বর্তমানে চীনের পরিবেশ সুরক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের সুবাদে বিলুপ্তি থেকে রক্ষা পেয়েছে এই হরিণ। সংখ্যাতেও বাড়ছে। বিস্তারিত রয়েছে প্রতিবেদনে।
প্যাকেজ:
মিলু হরিণ বা পিয়েরে ডেভিড হরিণ চীনের দেশীয় প্রজাতি। কিন্তু এক শ বছরের বেশি আগে যুদ্ধ, চোরা শিকার ও বিভিন্ন কারণে এই প্রজাতি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌছায়। পিয়েরে ডেভিড নামে একজন জীববিজ্ঞানী কয়েকটি হারিণকে ইউরোপে নিয়ে যান। ফ্রান্সে ও জার্মানিতে চিড়িয়াখানায় রাখা হয় হরিণগুলোকে। বিশ শতকের শুরুতে হারব্রান্ড রাসেল নামে একজন ব্রিটিশ অভিজাত তার নিজস্ব খামারে এই প্রজাতির হরিণ পালন করেন।
১৯৮৫ সালে যুক্তরাজ্য ২০টি মিলু হরিণ চীনকে ফেরত দেয়।
এরপর দীর্ঘ কয়েক দশকের পরিবেশ সংরক্ষণমূলক কাজ, গবেষণা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে এই বিপন্ন প্রজাতির হরিণকে রক্ষা করা এবং তাদের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
মিলু হরিণকে রক্ষার জন্য স্থাপন করা হয়েছে বেইজিং মিলু ইকোলজি রিসার্চ সেন্টার। ১৯৮৫ সালে যুক্তরাজ্য থেকে আনা হরিণদের এই কেন্দ্রে রাখা হয়। কৃত্রিমভাবে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য চলতে থাকে ব্যাপক গবেষণা। এখানে প্রথম আউটডোর ইকোলজিকাল মিউজিয়াম স্থাপন করা হয়। নাম দেয়া হয় হাইনানচি মিলু মিউজিয়াম। মিলু জলাভূমি এলাকার হরিণ। প্রাপ্তবয়স্ক মিলু হরিণ মাথাসহ দৈর্ঘ্যে ১.৯ থেকে ২.২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। ওজন ১৩৫ থেকে ২০০ কিলোগ্রাম হয়ে থাকে। তাদের শিং বেশ বড়। বছরে দুই জোড়া শিং হয়। গ্রীষ্মকালে মাথায় বড় শিং থাকে। শরতে সেগুলো পড়ে যায়। শীতকালে নতুন শিং গজায়। এই হরিণ ভালো সাঁতার কাটতে পারে। কাঁধ পর্যন্ত জলায় দাঁড়িয়ে থাকে। জলাভূমিতে জন্মানো ঘাস, এখানকার গাছ ও গাছের পাতা তাদের প্রধান খাদ্য।
বেইজিংয়ের মিল গবেষণা কেন্দ্রে সমন্বিত উপায়ে গবেষণার মাধ্যমে বন্য প্রজাতি আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। শিশোও, হুবেই, হুনানসহ বিভিন্ন স্থানে মিলু পার্ক প্রতিষ্ঠা করে বন্য প্রকৃতিতে আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে এই সুন্দর হরিণকে।
বর্তমানে চীনে তিনহাজারের বেশি মিলু হরিণ রয়েছে এবং এর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় হোক, ছাদে কিংবা ঘরের ছোট্ট ব্যালকনিতে, আসুন গড়ে তুলি নিজস্ব বাগান। অপ্রয়োজনে গাছ কাটা বন্ধ করি। নতুন বৃক্ষ রোপণ করি। আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।