দেহঘড়ি পর্ব-৬৪
‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য বুলেটিন, সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবংস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচলিত ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা ‘ভুলের ভুবনে বাস’।
#প্রতিবেদন
নতুন কোষের সন্ধান পেয়েছে বিজ্ঞানীরা
মানবদেহে নতুন কোষের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মানুষের ফুসফুসের ভেতরে থাকা পাতলা ও খুব সূক্ষ্ম শাখায় এ কোষগুলো পাওয়া যায়। এর নাম দেওয়া হয়েছে রেসপিরেটরি এয়ারওয়ে সেক্রেটরি-আরএএস। প্রধান কাজ শ্বাসতন্ত্রকে সুস্থ রাখা।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এর সাহায্যে তারা মানুষকে ধূমপানজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে পারবেন। আরএসএস ফুসফুসের ভেতরের স্নায়ুর শাখা ব্রঙ্কিওলে বিরাজ করে। এটি রক্তের ভেতরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড বিনিময় করে।
এ কোষগুলো স্টেম সেলের মতো। এগুলোকে ফাঁকা ক্যানভাস কোষও বলা হয়, কারণ এগুলো শরীরের ভেতরে যে কোনও নতুন অঙ্গ বা কোষ শনাক্ত করে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত অ্যালভিওলি মেরামত করে এবং নতুন অ্যালভিওলি কোষ তৈরি করে, যাতে রক্তে গ্যাসের প্রবাহ ঠিক থাকে। গবেষকরা দেখেছেন, আরএএস কোষগুলো ফুসফুসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে।
বিজ্ঞানীরা একজন সুস্থ ব্যক্তির ফুসফুস থেকে টিস্যু নিয়ে প্রতিটি কোষের ভেতরে থাকা জিনগুলো বিশ্লেষণ করেন। তারপর আরএএস কোষগুলো শনাক্ত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এডওয়ার্ড মরিসি বলেন, এটা আগে থেকেই জানা ছিল যে, মানুষের ফুসফুসের শাখা-প্রশাখা অর্থাৎ বাতাস চলাচল ইঁদুরের ফুসফুস থেকে আলাদা। নতুন প্রযুক্তির বিকাশের ফলে এই নতুন কোষটি খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
এডওয়ার্ড মরিসি ও তার দল ফুসফুসে আরএএস কোষ খুঁজে পান। আরএএস কোষের মাত্র দুটি প্রধান কাজ রয়েছে— প্রথমত, এগুলো কণা নিঃসৃত করে, যা ব্রঙ্কিওলগুলোতে প্রবাহিত তরলগুলোর জন্য একটি আস্তরণ হিসেবে কাজ করে। এতে ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় যে কাজটি করে তা হলো এটি ক্ষতিগ্রস্ত অ্যালভিওলি মেরামত করার জন্য রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে। - অভি/রহমান
#বুলেটিন
বধির শিশুরা চিকিৎসা পাচ্ছে বিনামূল্যে
বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বধির শিশুরা ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেক বধির শিশুর জন্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের এই চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।
অটিজম সচেতনতা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান তিনি। উপাচার্য জানান, বেশ কিছু দিন আগেও দেশে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা অবহেলিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদের উদ্যোগে নানা রকম চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা।
উন্নত দেশগুলোর পরিবেশ দূষণে ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও
নিজেদের দূষণে নয়, বরং উন্নত দেশগুলোর অতিমাত্রিক দূষণের ফলে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে দেশের ২০ শতাংশ জমি পানির নিচে তলিয়ে যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। দেশে হঠাৎ ডায়রিয়া ও কলেরার প্রাদুর্ভাব বাড়ার পেছনে পানি ও পরিবেশ দূষণকে দায়ী করেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে । ঢাকায় দেড় কোটি লোক বসবাস করে। কিন্তু এত শব্দদূষণ, ধোয়া আর ধুলোবালির কারণে এ শহরে সংক্রামক, অসংক্রামক সব রোগই বাড়ছে। তিনি বলেন, পানিদূষণ রোধ করতে হবে এবং কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহার কমাতে হবে।
জমিতে বেশি কীটনাশক ব্যবহারের কারণে উৎপাদিত খাদ্যে মানুষের অসুস্থ হওয়ার হার বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডায়রিয়ায় বছরে দুই লাখ মৃত্যু বাংলাদেশে
বাংলাদেশে প্রতি বছর ডায়রিয়ায় প্রায় দুই লাখ মানুষ মারা যায়। এমন বাস্তবতায় চলতি বছর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। শুধু তাই নয়, জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ মানুষ দূষিত উৎস থেকে পানি পান করে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সেমিনারে একথা জানায় ‘ডক্টরস প্ল্যাটফরম ফর পিপলস হেলথ’ নামের একটি সংগঠন।
প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হিসেবে সংগঠনটি নিরাপদ পানির সংকট, অনিরাপদ খাদ্য, সংক্রামক ব্যাধি, পুষ্টিসমস্যা, পানি, বায়ু ও শব্দদূষণ, অদক্ষ বর্জ্যব্যবস্থাপনা এবং পয়-নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে দায়ী করেছে। - অভি/রহমান
## আপনার ডাক্তার
এ পর্বে আজ আমরা আলোচনা করেছি বাংলাদেশে দাঁতের রোগ, সেগুলোর চিকিৎসা অবকাঠামো ও অন্যান্য দিক নিয়ে। দাঁতের সমস্যা বাংলাদেশে ব্যাপক বিস্তৃত এক স্বাস্থ্য সমস্যা। ৮০ শতাংশের অধিক মানুষ কমপক্ষে এক বা একাধিক মুখ বা দাঁতের রোগে আক্রান্ত। সে তুলনায় চিকিৎসা অবকাঠামো ও চিকিৎসকের সংখ্যা কেমন?। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার হুমায়ুন কবীর বুলবুল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুর রহমান অভি।
#কী_খাবো_কী_খাবোনা
স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারে যা প্রয়োজন
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২০০০-২৫০০ ক্যালরি সমপরিমাণ খাবার গ্রহণ করতে হয়। তবে রমজানে ১০০০ থেকে ১৫০০ ক্যালরি সমপরিমাণ খাবার গ্রহণই যথেষ্ট। কারণ এসময়ে অল্প খাবার গ্রহণ করলে অটোফ্যাজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর কোষগুলো পরিষ্কার হয়।
তাই অন্যান্য সময় যে পরিমাণ খাবার খাওয়া যায়, রোজায় তার চেয়ে এক তৃতীয়াংশ কম খেতে হয়। এবার আসুন জেনে নিই ইফতারে কী খাবেন আর কী পরিহার করবেন। অন্তত ৬০০ ক্যালরি পাওয়া যায়, ইফতারে এমন সব খাবার খাওয়া যেতে পারে।
ইফতারে যা খাওয়া উচিৎ:
১। খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। খেজুরের মধ্যে শর্করা ছাড়াও প্রায় সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে। চারটি মাঝারি সাইজের খেজুরের মধ্যে প্রায় ১০০ ক্যালোরি থাকে। ইফতারে চার-পাঁচটি খেজুর খাওয়া যেতে পারে।
২। ইফতার মেন্যুতে রাখুন কলা। একটি কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি থাকে।
৩। ৫০ গ্রাম ছোলা-বুটে প্রায় ১৮০ ক্যালরি থাকে। ছোলা-বুট অল্প পরিমাণে খাওয়াই ভালো। কারণ এটি পরিপাক হতে দীর্ঘ সময় লাগে।
৪। একটি ডিম খাওয়া যেতে পারে। একটি ডিম থেকে পাওয়া যায় ৮০ ক্যালরি।
৫। ফলমূল যেমন, তরমুজ, আপেল, কমলা - এসব খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ডাবের পানি, ইসবগুল, লেবুরর শরবত খাওয়া যায়। এগুলো পানিশূন্যতা রোধ করে।
ইফতারে যা পরিহার করা উচিৎ:
১। ইফতারে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার কিংবা তেলে ডুবিয়ে যেসব খাবার তৈরি করা তা যত সম্ভব পরিহার করতে হবে। কারণ এ খাবারগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করে।
২। একসঙ্গে অনেক বেশি খাবার খাওয়া যাবে না।
৩। ঝাল খাবার পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই কাঁচা মরিচ কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করে চলতে হবে।
৪। গরম খাবার যেমন চা-কফি পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই রোজার সময় চা-কফি পরিহার করে চলা ভালো।
রোজার মাসে যেহেতু আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্যগ্রহণের সময়ে পরিবর্তন আসে তাই আমাদের উচিৎ স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া। আশা করা যায়, এসব পরামর্শ অনুসরণ করলে রোজার মাসে সুস্থ থাকা সম্ভব। - অভি/রহমান
‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।