বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-৫৯

CMG2022-03-04 19:25:47

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য বুলেটিন, সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা ‘ভাল থাকার আছে উপায়’।

#প্রতিবেদন

হার্টের চিকিৎসায় নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এক রোগীর শরীরে ‘মেকানিক্যাল হার্ট’ বসিয়েছেন চিকিৎসকরা। এই যন্ত্র দীর্ঘদিন হৃৎপিণ্ডকে কৃত্রিম উপায়ে সচল রাখতে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে হৃদরোগের চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা হলো।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ইউনাইটেড হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্টের বিষয়টি তুলে ধরেন হাসপাতালের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির।

গেল বুধবার ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও তার সহকর্মীরা প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হার্টমেইট-৩ নামের একটি মেকানিক্যাল হার্ট ৪২ বছর বয়স্ক এক নারীর হৃদপিণ্ডের বাম নিলয়ে স্থাপন করেন এবং এর মাধ্যমে তার পুরো হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন।

ওই রোগী দীর্ঘদিন ধরে শেষ পর্যায়ের বা তীব্র হার্ট ফেইলিওর নামক হৃদপিণ্ডের জটিলতায় ভুগছিলেন এবং দেশ-বিদেশে নানা চিকিৎসার পরও তার হৃদপিণ্ড বা হার্ট প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।

ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের বর্তমান উৎকর্ষে উন্নত বিশ্বে এর একমাত্র চিকিৎসা হলো আরেকটি সুস্থ হার্ট দিয়ে প্রায় অকার্যকর হার্টটি প্রতিস্থাপন। তবে যদি সুস্থ হার্ট না পাওয়া যায় কিংবা পেতে দেরি হয় এবং হার্টের অবস্থার যদি দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে তবে মেকানিক্যাল হার্ট স্থাপন করা হয়। - অভি/রহমান

#বুলেটিন

টিকা পাবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও: প্রধানমন্ত্রী

বারো বছরের কম বয়সীদের করোনার টিকার আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও টিকা পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বয়সের আওতা কমানোর লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আবেদন করা হয়েছে এবং শিগগিরই তা পাওয়া যাবে বলে বলে আশা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে এক কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

একদিনে করোনার টিকা পেলেন ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ

বাংলাদেশে ১ম ও ২য় ডোজ মিলে একদিনে রেকর্ড এক কোটি ২০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এরমধ্যে ১ম ডোজ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ। সবমিলিয়ে দেশের মোট জনসংখ্যার ৭৩ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান তিনি। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান।

করোনা নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে ২০টি শয্যা করোনার জন্য আলাদা করতে হয়েছে। ল্যাব, অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনসহ টেলিমেডিসিন সেবার ব্যবস্থা করতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।

দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় চার কোটি মানুষ

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছেন প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষ। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন ৮ কোটি ৪৮ লাখ মানুষ। এ হিসাবে টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছেন প্রায় ৪ কোটি মানুষ। এছাড়াও দেশে এখন পর্যন্ত দুই ডোজ টিকা দেওয়ার পর তৃতীয় ডোজ-বুস্টার টিকা নিয়েছেন আরও ৩৮ লাখ ৭৩ হাজার জন।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত টিকা বিষয়ক প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১ মার্চ পর্যন্ত করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৩ লাখ ৬১ হাজার ১১৪ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন ৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৩৬ জন। এছাড়াও এ সময়ে বুস্টার ডোজের টিকা নিয়েছেন ৭০ হাজার ১২৯ জন। সবমিলিয়ে গত এক দিনে ৯ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৯ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।

তামাকজনিত রোগে বছরে দেড় লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু

বাংলাদেশে প্রায় পৌনে চার কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাকজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করেন বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, দেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এ অবস্থায় তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ আয়োজনে এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। অভি/রহমান

## আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা আলোচনা করেছি এন্ডোমেট্রিওসিস বা মাসিকের সময় তলপেটে তীব্র ব্যাথা নিয়ে। এন্ডোমেট্রিওসিস নারীদের এমন এক বেদনাদায়ক সমস্যা, যাকে সমুদ্রে ডুবে থাকা বরফখণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এর যতখানি প্রকাশিত, তার চেয়ে বেশি থাকে লুকায়িত। জরায়ুর সবচেয়ে ভেতরের স্তরের নাম এন্ডোমেট্রিয়াম। এই এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ বা কলা যদি জরায়ুর বাইরে বাসা বাঁধে বা বর্ধিত হয়, তখন তাকে বলে এন্ডোমেট্রিওসিস। এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত হলে মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা হয়। অনেক সময় বছরের পর বছর এই সমস্যার কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে। মাসিকের সময় তলপেটজুড়ে তীব্র ব্যথা, অনেক সময় সি-সেকশন সেলাইয়ের দাগ বরাবর প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। মাসিকের দু-তিন দিন আগে থেকে শুরু হতে পারে ব্যথা, যা মাসিকের সময় তীব্র আকার ধারণ করে। মাসিক শেষ হওয়ার পরও কয়েক দিন ব্যথা থেকে যায়। মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও একটি লক্ষণ হতে পারে। ৪০-৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ রোগের কারণে বন্ধ্যত্ব বা সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে। এ রোগের নানা দিক নিয়ে কথা বলতে আমাদের সাথে যুক্ত হন অধ্যাপক ডাক্তার সামিনা চৌধুরী। তিনি দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ; ছিলেন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকলিজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)’র প্রেসিডেন্ট।

#ভালো_থাকার_আছে_উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্যকে উপেক্ষা করবেন না

কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে সবাই কম-বেশি পরিচিত। যখন কোনো ব্যক্তি সহজে বা নিয়মিত মলত্যাগ করতে পারেন না এবং মল শুষ্ক ও শক্ত হয়, সে অবস্থাকেই কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। চিকিৎসকদের মতে, যদি কেউ সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করেন, তবে তিনি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন। অনেকের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য ভয়ানক অবস্থা তৈরি করে। শরীর তো বটেই, মনের ওপরও এ সমস্যা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অবশ্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন পদ্ধতি দিয়ে অনায়াসে এ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্যকে প্রথম দিকে খুব সাধারণ সমস্যা মনে হতে পারে। তবে এ সমস্যা এড়িয়ে গেলে পরবর্তীতে এটি বড় ভোগান্তির কারণ হতে পারে। যে কোনও মানুষেরই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তবে বয়স্ক মানুষেরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগার হার বেশি লক্ষ্য করা যায়। এ ছাড়া যাঁদের ওজন বেশি এবং যারা অলস জীবনযাপন করেন, তাঁদেরও কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগার ঝুঁকি থাকে। গর্ভবতী অবস্থায় নারীদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। তবে কম আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খেলে যে কোনও মানুষেরই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকার উপায় সম্পর্কে:

আঁশসমৃদ্ধ যে কোনও খাবারই কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ ও প্রতিকারে প্রধান ভূমিকা পালন করে। আপেল, পেয়ারা, নাসপাতি, আঙুর, পাকা পেঁপে, বেল, অ্যালোভেরা জুস ইত্যাদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ওষুধের মতো কাজ করে। যেসব ফলের খোসা খাওয়া যায়, সেগুলো খোসাসহই খেতে হবে।

সব ধরনের শাক বেশি পরিমাণে খেতে হবে। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে পুঁইশাক, পালংশাক, লালশাক ও কচুশাক সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। সবজির মধ্যে ঢেঁড়স, পেঁপে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কুমড়ো, লাউ, পটল ও কচুর লতি বেশি উপকারী।

বৃহদন্ত্রে মলের চলাচল বাড়াতে হবে। সে জন্য দিনে দু-তিনবার তোকমাদানা, ইসবগুলের ভুসি বা চিয়া সিড অথবা অ্যালোভেরা খেলে বেশ উপকার পাওয়া যাবে।

ঘনঘন পানি পান করতে হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে কমপক্ষে ৩-৩.৫ লিটার পানি পান প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পানির চেয়ে গাঢ়, যেমন মধু, টকদই, বেলের শরবত, পেঁপের শরবত, অ্যালোভেরা জুস, আখের রস ইত্যাদির মতো তরল পান করতে হবে। এর ফলে বৃহদন্ত্রে অন্তঃঅভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মল শরীর থেকে পানি শোষণ করে নিজে নরম থাকবে।

ধূমপান ও মদ্যপানে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে। তাই এসব অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ভাজাপোড়া ও কাবাবের মতো ঝলসানো মাংস খাওয়াও বাদ দিতে হবে। ময়দার তৈরি খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। তার বদলে খই, ওটস খাওয়া যেতে পারে। - রহমান- রহমান

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn