দেহঘড়ি পর্ব-৫৬
‘দেহঘড়ি’র এ পর্বটি আমরা সাজিয়েছি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে। ‘আপনার ডাক্তার’ অংশে আজ রয়েছে একজন মনোরোজ বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার; ‘ভাল থাকার আছে উপায়’ অংশে মানসিক অবসাদ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আলোচনা আর আগে নিয়মিত অংশ হিসাবে যথারীতি রয়েছে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন ও হেলথ বুলেটিন।
#প্রতিবেদন
‘চিকিৎসা নেওয়া ৮২ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেল এক মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এমন রোগীদের ৮২ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। আর বাকি ১৮ শতাংশ আক্রান্ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ এই তথ্য তুলে ধরেন।তিনি জানান, গেল ৯ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি রোগী এবং বহির্বিভাগে আসা রোগীদের ৮২ শতাংশ ওমিক্রনে আক্রান্ত এবং ১৮ শতাংশ ডেল্টায় আক্রান্ত। ওই সময় ওমিক্রনের তিনটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট নজরে এসেছে গবেষকদের। সেগুলো হলো BA.1, BA.1.1, BA.2। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্যমতে BA.2 বেশি সংক্রামক।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য আরও জানান, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে অনেক বেশি সংক্রামক। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জেনোমে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার বেশির ভাগ ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে হয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে বেশির ভাগ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়ে থাকে। আর স্পাইক প্রোটিনের গঠনগত পরিবর্তনের জন্যই প্রচলিত ভ্যাকসিনেশনের পরেও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। - অভি/রহমান
#বুলেটিন
বাংলাদেশের ৮ বিভাগে তৈরি হচ্ছে ক্যান্সার হাসপাতাল
গ্রামের মানুষের ক্যান্সারের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের ৮ বিভাগে ৮টি ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কাজের অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ জাহিদ মালেক।
বৃহস্পতিবার জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনিস্টিটিউট ও হাসপাতালের অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মানুষের জীবনযাত্রা পরিবর্তন হওয়ার কারণে ক্যান্সার আক্রান্তের হার বাড়ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে ২০ লাখের মতো ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষ রয়েছে। প্রতিবছর দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত হলে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। তাই প্রথামিক পর্যায়ে যেন ক্যান্সার শনাক্ত হয় সেজন্য ক্যান্সার সেবার পরিধি বাড়নো হচ্ছে। ঢাকার হাসপাতালগুলোর উপর চাপ কমাতে স্বাস্থ্যসেবাকে বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে ৯ কোটি ৯৩ লাখ মানুষ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশজুড়ে টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সরকার। এ কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত ৯ কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৫৬ জন মানুষ প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে। এর মধ্যে টিকা গ্রহণকারী স্কুল শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার ৯৮০ জন। এগুলো দেওয়া হয়েছে অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকা, চীনের তৈরি সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক, ফাইজার ও মডার্নার টিকা। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো টিকা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, সোমবার সারাদেশে প্রথম ডোজ হিসাবে ২ লাখ ৫২ হাজার ৯১৮ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ হিসাবে ৬ লাখ ২১ হাজার ৪৭৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯২২ জনকে।
ছোট দেশগুলোর জন্য টিকা নিশ্চিত করতে আহ্বান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
ছোট ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তায় কোভিড টিকার আরও ভালো সুবিধা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কমনওয়েলথ। মহামারীর অবসান এবং ভ্যাকসিন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ডব্লিউএইচও’র প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসিস এবং কমনওয়েলথ প্রধান প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড সোমবার জেনিভায় জাতিসংঘ স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দফতরে মিলিত হন। সেখানে তারা এ আহ্বান জানান। এখন পর্যন্ত কমনয়েলথ দেশগুলোর ৪২ শতাংশ নাগরিককে পুরোপুরি টিকা দেওয়া হলেও আফ্রিকার সদস্য দেশগুলোতে মাত্র ২৩ শতাংশ টিকা দেওয়া হয়ে বলেও উল্লেখ করেন তারা। - তানজিদ/রহমান
## আপনার ডাক্তার
দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা আলোচনা করেছি মানসিক অবসাদ ও আত্মহননের প্রবণতা নিয়ে। বিশ্বে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণ যায় আত্মহত্যায়, যাদের বেশিরভাগ মানসিক অবসাদে ভুগছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব বলছে, বিশ্বের জনসংখ্যার প্রতি ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজারের মধ্যে একজন আত্মহত্যা করে প্রতিবছর। আরেক হিসাব বলছে, ১৯৯০ সালে যেখানে ৭ লাখ ৬২ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে সেখানে ২০১৬ সালে সে সংখ্যা পৌঁছায় ৮ লাখ ১৭ হাজারে। বাংলাদেশও এ প্রবণতার বাইরে নয়। এখানেও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের এবং আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে প্রতিবছর। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাঈম আকতার আব্বাসী। তিনি কর্মরত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে।
#ভালো_থাকার_আছে_উপায়
অবসাদের কাছে হার নয়
প্রতিটি মানুষই জীবনে কখনও না কখনও অবসাদে ভোগেন। কখনও কাজের চাপে, কখনও বেকারত্বের কারণে, কখনও বৈবাহিক জীবনে অশান্তির জন্য, কখনও অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়ার ভয় ও হতাশা থেকে কিংবা অন্য কোনও কারণে অবসাদ তৈরি হয়। অবসাদ কোনও নির্দিষ্ট বয়সের সমস্যা না; জীবনে যে কোনও পর্যায়ে যে কেউ অবসাদে আক্রান্ত হতে পারেন। কখনও এই অবসাদ চরম আকার ধারণ করে। দীর্ঘদিন অবসাদের মধ্যে থাকলে মানুষ অনেক সময় আত্মহত্যার মতো রাস্তাও বেছে নিতে পারে। তবে কয়েকটি জিনিস মেনে চললে কাটতে পারে অবসাদ। জানিয়ে দিচ্ছি এমন কিছু উপায়:
পুষ্টিকর খাবার খান: মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। তাই সময়মতো পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এতে শরীর ও মস্তিষ্কে জরুরি পুষ্টি পৌঁছাবে। ফলে অবসাদ সহজে কাবু করতে পারবে না আপনাকে।
ঘুমান পর্যাপ্ত পরিমাণ: দেহ-মনকে শান্ত ও শিথিল রাখতে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ প্রয়োজন। আর তার জন্য ভালো ঘুমের বিকল্প নেই। তাই যতটা ঘুমালে ভালো লাগে, প্রশান্তি বোধ হয় ততটা ঘুমিয়ে নিতে হবে এবং রাত জাগার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
নেতিবাচক কথা বন্ধ করুন: অবসাদে ভোগা মানুষ নিজের চারপাশে সবসময় হতাশা দেখেন। কথাবার্তায় ফুটে ওঠে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা। নিজের সম্পর্কে সংশয়ে ভোগেন এবং নিজেকে মূল্যহীন ভাবেন তারা। এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা অবসাদগ্রস্ত মানুষকে কোনওভাবে সাহায্য তো করেই না, বরং ঠেলে দেয় আরও গভীর অবসাদের দিকে। অবসাদ থেকে বাঁচতে এমন নেতিবাচক চিন্তা ও কথাবার্তা থেকে দূরে থাকতে হবে।
ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করুন: অপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ভাবা, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চিন্তা করা এবং ক্ষোভ পোষণ করা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এইসব ক্ষোভ ও চিন্তাই মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। এরাই অবসাদের গভীরে নিয়ে যায়। বই পড়ে সময় কাটালে অবসাদ থেকে দূরে থাকা যায়।
শরীরচর্চা করুন: অবসাদে ভুগলে মস্তিষ্কে কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ হয়। এই ‘স্ট্রেস হরমোন’ কমাতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন এবং নিজেকে সচল রাখুন। এতে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাবে; অবসাদ কমে যাবে অনেকটাই। এছাড়া শরীরচর্চার ফলে শরীর থেকে এনডোরফিন বেরিয়ে যায়। ফলে মন ভাল থাকে। শরীরচর্চা মন ভাল রাখার পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখা, রোগভোগ প্রতিরোধ করা এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রত্যেক সক্ষম মানুষের প্রতিদিন আধ ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করা উচিৎ।
ভ্রমণ করুন: অবসাদে ভুগলে মানুষ অনেক সময় নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। কিন্তু এই সময় একা থাকা একেবারে অনুচিত। অবসাদে ভুগলে নিজেকে ঘরে আটকে না রেখে বাইরে বেরিয়ে পড়ুন। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। কারো সঙ্গ ভালো না লাগলে একাই ঘুরে আসুন। অক্সিজেন ও সূর্যের আলো অবসাদকে দূরে রাখে।
গান শুনুন: অবসাদ কাটানোর একটি উত্তম উপায় গান শোনা। তবে দুঃখের গান নয়, এমন গান শুনতে হবে মনকে প্রশান্তি দেয়। ইতিবাচক গান চালালে চারপাশটাই পজিটিভ এনার্জিতে ভরে ওঠে। - রহমান
‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।