বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-৪৫-China Radio International

cri2021-11-26 19:27:06

দেহঘড়ি পর্ব-৪৫

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য বুলেটিন, সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’, এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা ‘ভুলের ভুবনে বাস’।

## স্বাস্থ্য প্রতিবেদন

বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহার: ‘করোনাকালীন ৮০ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে অপ্রয়োজনে’

হাবিবুর রহমান অভি:

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহার হওয়া অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয়েছে অপ্রয়োজনে। রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, “মুগদা হাসপাতালে চলতি বছরের ১ মে থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, করোনা চিকিৎসায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া ওষুধের ৭০ শতাংশই ছিল অ্যান্টিবায়োটিক। আর আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার ছিল ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। এসব ওষুধের মধ্যে ‘অ্যাজিথ্রোমাইসিন’ ও ‘সেফ্টরিয়াক্সন’ ব্যবহার হয়েছে ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ।”

গবেষণা বলছে, হাসপাতালে ভর্তির আগে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই এসব ওষুধ ব্যবহার করেছেন ৩৩ শতাংশ রোগী।

অ্যান্টিবায়োটিকের এমন যথেচ্ছা ব্যবহার না কমলে করোনার মতো আরেকটি মহামারির আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা।

চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে রোগী ও চিকিৎসকসহ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

অভি/রহমান

##হেল্‌থ বুলেটিন

ঢাকার প্রতি ওয়ার্ডে ৩ দিন করে টিকাদান কার্যক্রম শুরু

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব ওয়ার্ডে তিন দিন করে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার। বিশেষ এই কর্মসূচিতে যাদের নিবন্ধন করা আছে, তাদের পাশাপাশি নিবন্ধন করেননি এমন ব্যক্তিদেরকেও টিকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুল হক।

সর্বাধিক করোনা আক্রান্ত দেশের তালিকায় একধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ

সংক্রমণের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশের তালিকায় আরও এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বে করোনা-আক্রান্ত দেশগুলোর তালিকায় ৩০ নম্বর থেকে বর্তমানে ৩১ নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। সর্বাধিক করোনা-আক্রান্ত দেশের তালিকায় এক, দুই ও তিন নম্বরে অবস্থান করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ব্রাজিল। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ৩১ লাখ। মরণঘাতি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৫২ লাখ মানুষের। আর করোনা থেকে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ২৩ কোটি ৫২ লাখ মানুষ।

কোভিড-১৯: শীত মৌসুমে ইউরোপজুড়ে ৭ লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা

চলতি শীত মৌসুমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অঞ্চলের কয়েকটি দেশে এরই মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করলো এ সংস্থা। এদিকে চলতি শীত মৌসুমে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে বিশেষ কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশেষ করে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো কোভিড আক্রান্তের ঝুঁকিতে আছে জানিয়ে অতিদ্রুত টিকাদান কর্মসূচি শেষ করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। করোনা সংক্রমণ ক্রমেই ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে বাড়ছে উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গেল সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যা গেল সেপ্টেম্বরের তুলনায় দ্বিগুণ।

ইউরোপের ৫৩টি দেশের মধ্যে ৪৯টি দেশেই কোভিড চিকিৎসার জন্য আইসিইউ সংকট দেখা দিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় সংস্থার পক্ষ থেকে। জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ মানুষ যদি মাস্ক ব্যবহার করে তবেই এই অঞ্চলের দেড় লাখ মানুষের জীবন বাচানো সম্ভব বলেও সাবধান করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

## আপনার ডাক্তার

এবার ‘আপনার ডাক্তার’। এ পর্বে আজ আমরা কথা বলবো শিশুদের শীতকালীন রোগব্যাধি নিয়ে। শীতকালে শুকনো আবহাওয়ার কারণে বায়ুবাহিত ও ফুসফুসের নানা রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে এ সময়। শীতকালে সর্দি-কাশি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত অ্যালার্জিক রোগ, শীতকালীন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া হতে পারে। এসব রোগ-ব্যাধির নানা দিক নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফারহানা আফরোজ সীমা। তিনি কর্মরত মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল; শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে।

## ভুলের ভুবনে বাস

সুপার ফুড গাজর

শীতের সবজির মধ্যে গাজর অন্যতম। পুষ্টিগুণের কারণে মূল জাতীয় ও আঁশসমৃদ্ধ এ সবজিকে বলা হয় সুপার ফুড। শীতকালীন সাধারণ রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে গাজর। এ সবজিতে আছে ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, ক্যারোটিনয়েড, আঁশ ও পটাশিয়াম যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। শরীরের নানা অঙ্গের জন্য গাজরের উপকারিতার শেষ নেই। আসুন জেনে নেই গাজরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে:

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: গাজর কি অন্ধকারে দেখতে সাহায্য করতে পারে? এর উত্তর হ্যাঁ। ভিটামিন এ’র অভাবে জেরোফথালমিয় বা রাতকানা রোগ হয়। কিন্তু গাজরে থাকা ভিটামিন এ এই রোগ প্রতিরোধ করে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের (ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ) সম্পূরক খাদ্য বিষয়ক অফিসের (অফিস অব ডায়েটরি সাপ্লিমেন্ট) তথ্য অনুসারে, ভিটামিন এ’র অভাব প্রতিরোধযোগ্য শিশুঅন্ধত্বের অন্যতম কারণ। তাই পরিমিত পরিমাণে গাজর খেলে সেটা অন্ধকারে দেখতে সাহায্য করে। এছাড়া গাজরে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লুটেইন ও জেক্সানথিন এবং এ দুটির সংমিশ্রণ ম্যাকুলার ক্ষয়জনিত দৃষ্টি হারানো রোধ করতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার সোর্সের তথ্য অনুসারে, শরীরের অনেকগুলি ফ্রি র‌্যাডিকেল বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গাজর ও অন্যান্য সবজিতে থাকা ক্যারোটিনয়েড অর্থাৎ হলুদ, কমলা ও লাল জৈব রঞ্জক এই ঝুঁকি কমায়। লুটেইন ও জিয়াজানথিন এ ধরনের দুটি ভালো ক্যারোটিনয়েড। আমেরিকানদের জন্য ২০১৫-২০২০ সালের খাদ্য-নির্দেশিকা অনুসারে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন কমপক্ষে ৭০০ এমসিজি আরপিএই ভিটামিন এ এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য দরকার কমপক্ষে ৯০০ এমসিজি আরপিএই ভিটামিন এ।

২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে ক্যারোটিনয়েডসমৃদ্ধ খাবার খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। ২০১১ সালের আরেক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, গাজরের রসের নির্যাসের পুষ্টি লিউকেমিয়ার কোষগুলিকে মেরে ফেলতে পারে। একই বছরের অন্য এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এ উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, গাজরের রস পান ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষতি কমাতে পারে।

পরিপাকীয় স্বাস্থ্য উন্নত করে: ২০১৪ সালে ৮৯৩ ব্যক্তির ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি ক্যারোটিনয়েডসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। এর পরের বছর প্রকাশিত এক জরিপের ফলে দেখা যায়, যারা অল্প আঁশ গ্রহণ করে তাদের চেয়ে বেশি আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণকারীদের কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কম। একটি মাঝারি আকারের গাজরে ১ দশমিক ৭ গ্রাম আঁশ থাকে যা একজন ব্যক্তির দৈনিক চাহিদার ৫ থেকে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ পূরণ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: একটি গাজরের ১০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, যার প্রায় অর্ধেক শর্করা। এই কার্বোহাইড্রেটের ৩০ শতাংশ আবার আঁশ। একটি মাঝারি আকারের গাজরে সাধারণত ২৫ ক্যালোরি থাকে। এ কারণে গাজর একটি কম-ক্যালোরি, উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার ও তুলনামূলকভাবে কম চিনিযুক্ত খাবার। তাই গ্লাইসেমিক সূচকে (জিআই) গাজরের স্কোর কম। আর এ সূচকে স্কোর কম মানে ডায়াবেটিসের জন্য এটা নিরাপদ।

২০১৮ সালের এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এই উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার টাইপ-২ ডায়াবেটিসের বিকাশকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এ খাবার টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

রক্তচাপ কমায়: গাজরে থাকা আঁশ ও পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন কম লবণ খেতে কিন্তু গাজরের মতো পটাসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে উৎসাহিত করে মানুষদের। পটাসিয়াম রক্তনালীগুলোকে শিথিল করতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি কমায়। একটি মাঝারি আকারের গাজর থেকে একজন ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পটাসিয়ামের প্রায় ৪ শতাংশ পাওয়া যায়।

২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করে তাদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে যারা অল্প ফাইবার খায় তাদের তুলনায়। বেশি পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া রক্তে কম-ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন বা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: গাজরের আরেকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি, যা কোলাজেন উৎপাদনে অবদান রাখে। কোলাজেন সংযোগ টিস্যুর একটি মূল উপাদান এবং ক্ষত নিরাময় ও শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন সি ইমিউন কোষেও উপস্থিত থাকে, যা শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করলে ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: গাজরে ভিটামিন কে এবং অল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে। এগুলো হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখে এবং অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে। - রহমান

দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Close
Messenger Pinterest LinkedIn