হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করুন ইনহেলার ছাড়াই-China Radio International
সারাবিশ্বে ২০ কোটি মানুষ অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগে আক্রান্ত। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ হাঁপানি সমস্যা নিয়ে বসবাস করছে আর বাংলাদেশে এ সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। হাঁপানি ফুসফুসের এক সমস্যা, যেটা হলে ফুসফুসে বায়ুগমনের পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে, যার ফলে শ্বাস-প্রঃশাসের সময় সাঁ সাঁ শব্দ হয়, শ্বাসযন্ত্র দুর্বলভাবে কাজ করা এবং কখনও কখনও মৃত্যুও ঘটায়।
সামান্য কাশি, কিছুটা অস্বস্তি হিসেবে এটা শুরু হতে পারে এবং এটা বুঝে ওঠার আগেই আপনি শ্বাস নেওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকবেন, প্রতিটি শ্বাসে সাঁ সাঁ শব্দ শুনতে থাকবেন এবং আতঙ্কিত হতে শুরু করবেন।
প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা রীতি অনুযায়ী ফুসফুসের বায়ুগমনের পথে প্রদাহ বা তীব্র আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য রোগীদেরকে শ্বাস ও মুখে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে চিকিত্সা দেওয়া হয়। ঘন ঘন আক্রমণ এবং হাসপাতালে যাওয়া এড়াতে অনেক সময় এগুলোর প্রয়োজন হয়। তবে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এটাও বলে যে, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ এবং সমন্বিত চিকিত্সা শুধুমাত্র হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে না; বরং মারাত্মক আক্রমণ হ্রাস করতেও সহায়তা করতে পারে। আসুন জেনে নিই এমন কিছু পদ্ধতি:
আদা: বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত যে, সাধারণভাবে ব্যবহৃত হাঁপানির ওষুধ যখন গ্রহণ করা হয়, তখন তার সঙ্গে আদা গ্রহণ করলে শ্বাসনালি আরও ভালোভাবে প্রসারিত। এছাড়া ফুসফুসে বায়ুগমনের পথের মসৃণ পেশীগুলোর চিকিত্সায় আদার যৌগ ব্যবহার করলে, সেগুলো বায়ুগমনের পথের চারপাশের পেশীগুলোর সংকোচন হ্রাস করে। এর ফলে হাঁপানি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড: এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ব্যক্তি আহারে উচ্চমাত্রার ওমেগা-থ্রি গ্রহণ করেন, তারা রোগ নিরাময়কারী ওষুধের উপর অল্প নির্ভর করেই উন্নত জীবনযাপন করতে পারেন। আপনার খাদ্যে ওমেগা-থ্রি যুক্ত করার সহজ উপায়গুলোর অন্যতম হলো দ্রুত নাস্তার জন্য কারব চিপস ও কিসমিসের সাথে মিশ্রিত করে আখরোট গ্রহণ করা। এছাড়া স্যামন ও কুমড়োর বীজে ভালো ওমেগা-থ্রি পাওয়া যায়।
যোগব্যায়াম: যোগব্যায়াম থেকে আপনি অন্যান্য সুফল না পেয়েও থাকতে পারেন, তবে হাঁপানির ক্ষেত্রে সেটা অব্যর্থভাবেই পাবেন। গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে, যোগ ব্যায়ামে যে রকমভাবে করা হয়, সেরকমভাবে গভীর শ্বাসপ্রশাস গ্রহণ ও নির্গমণ করলে খুব দ্রুত ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া কমে। এর ফলে হাঁপানি রোগী সুফল পায় এবং হাঁপানির উপসর্গ কমে। এছাড়া নিয়মিত যোগব্যায়াম গভীর ও দীর্ঘায়িত শ্বাস-প্রঃশ্বাসে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করে, যা হাঁপানি আক্রমণের সময় শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হয়।
ভিটামিন-সি: যদি আপনি হাঁপানি রোগী হন, তাহলে গবেষণাগুলো ভিটামিন-সিসমৃদ্ধ অর্থাৎ সাইট্রাস ফলগুলোর সদ্ব্যবহারের জন্য আরেকটি সরস কারণ খুঁজে পেয়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, উচ্চ ভিটামিন-সিযুক্ত খাদ্য শিশুদের মধ্যে সাঁ সাঁ শব্দ করে শ্বাসগ্রহণ হ্রাস করে। যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এখনো আরও অনেক তথ্য-উপাত্তের প্রয়োজন রয়েছে, তবে অতিরিক্ত কিছু কমলা, আঙ্গুর লেবু বা কিউই ফলের টুকরো আপনার আহারে যুক্ত করলে তা ভালো উপকার করবে আপনার।
ভিটামিন বি-সিক্স: হাঁপানির রোগী, বিশেষ করে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধের ওপর যারা নির্ভরশীল, তাদের জন্য পাইরিডক্সিন নামে পরিচিত ভিটামিন বি-সিক্স বিশেষভাবে উপকারী। বি-সিক্স গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে সকালে শ্বাসগ্রহণ ভাল অবস্থায় থাকে। যে সব ব্যক্তির মধ্যে বি-সিক্সের উপস্থিতি কম, সম্পূরক ওষুধ তাদের শ্বাসপ্রশাসে কষ্ট কমায়। কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে অবশ্য তাত্পর্যপূর্ণ পার্থক্য দেখা যায়নি গবেষণায়। সুতরাং শুরু করার আগে নিজের চিকিত্সকের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করা উচিত।
কল্টফুটস (বাটারবার): এই ঔষধি গাছটি এশিয়া ও ইউরোপে বহু বছর ধরে হাঁপানির চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটা একদিকে শরীরে প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং অন্যদিকে শ্বাসনালির পেশীগুলোর সংকোচন কমায়। ফলে সাঁ সাঁ শব্দ করে শ্বাসগ্রহণ এবং তীব্র আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। - রহমান