বাংলা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নগর--মিয়ানইয়াং

CMGPublished: 2024-02-10 17:27:42
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের সিছুয়ান প্রদেশের মিয়ানইয়াং শহরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। শহরটি চীনের প্রাচীন কালের বিখ্যাত রোমান্টিক কবি লি বাই'র জন্মস্থান। তা ছাড়া, এটি গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই চীনের 'সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নকেন্দ্র' এবং চীনের একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শহর। শহরটি সিছুয়ান প্রদেশের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক এলাকা। ২০২৩ সালে মিয়ানইয়াং'র অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮.২ শতাংশ।

মিয়ানইয়াং শহর চীনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শিল্প এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্পের কেন্দ্র। তবে সামরিক শিল্প মিয়ানইয়াংয়ের মৌলিক শিল্প। এই শিল্প শহরটির অর্থনীতির উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

১৯৭৮ সালে তেং সিয়াও পিং 'সামরিক ও বেসামরিক খাতকে সংযুক্ত করে সামরিক শিল্পের উন্নয়নপথ' প্রস্তাব করেন। ১৯৮২ সালে মিয়ানইয়াং শহরের সামরিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো 'সামরিক থেকে বেসামরিক উত্পাদনে পরিবর্তন' শীর্ষক সংস্কার-কার্যক্রম শুরু করে। ছাংহং ইলেকট্রিক কোম্পানি সামরিক শিল্পের প্রযুক্তিব্যবস্থার ভিত্তিতে, বেসামরিক টেলিভিশনের গবেষণা, উন্নয়ন ও উত্পাদন শুরু করে। এরপর কোম্পানিটির ছাংহং টেলিভিশন দ্রুত চীনের বিখ্যাত টেলিভিশন ব্রান্ডে পরিণত হয়। কোম্পানির বিক্রির পরিমাণ কয়েক কোটি থেকে কয়েক শো বিলিয়ন ইউয়ানে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে কোম্পানিটি সামরিক শিল্প, ভোক্তা ইলেকট্রনিক্স এবং কোর ডিভাইস গবেষণা ও উত্পাদন সমন্বিত করে, একটি অন্তঃদেশীয় গ্রুপে পরিণত হয়েছে। ছাংহং কোম্পানি উন্নয়নের প্রক্রিয়া হল মিয়ানইয়াংয়ের অনেক সামরিক শিল্প উন্নয়নের প্রতীক। বহু বছরের বৈজ্ঞানিক গবেষণা বেসামরিক উত্পাদনের ভিত্তি স্থাপন করেছে। পাশাপাশি বেসামরিক উত্পাদনের মাধ্যমে প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে।

চিউচৌ প্রতিরক্ষা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটি সিছুয়ান প্রদেশের ইউএভি কন্ট্রোল সিস্টেম গবেষণা ও বিক্রির প্রথম সামরিক ও বেসামরিক সংযুক্তি কোম্পানি। চিউচৌ ও ছাংহং উভয়ে চিউচৌ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। চিউচৌ কোম্পানি নতুন। তবে কোম্পানির গবেষক ও পরিচালকরা এ ধরণের গবেষণা করছেন প্রায় ২০ বছর ধরে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে ড্রোন শিল্পের চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বহু বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে চিউচৌ কোম্পানি নিজেদের সামরিক প্রযুক্তির সাফল্য বেসামরিক প্রযুক্তিতে প্রয়োগ করছে। কোম্পানির পণ্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের নিরাপত্তা সুরক্ষা, ছেংতু শহরের শুয়াংলিউ বিমানবন্দরের সুরক্ষা ও খুনমিংয়ে আয়োজিত চীন-দক্ষিণ এশিয়া মেলার নিরাপত্তা সুরক্ষায় ব্যবহৃত হয়।

চিউচৌ কোম্পানির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ইয়াং পো মনে করেন, সামরিক ও বেসামরিক প্রযুক্তি একে অপরকে পুষ্টি যোগায়। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির দু'টি উন্নয়নের দিক আছে। একদিকে আমরা সামরিক সরঞ্জাম উত্পাদন করি; এবং অন্যদিকে আমরা বেসামরিক পণ্যও উত্পাদন করি। এ ছাড়া, আমরা দেশি-বিদেশি বাজারে নিজেদের পণ্য বিক্রি করছি।’

চিউচৌ কোম্পানি'র সামরিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা আছে। বেসামরিক শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি সামরিক শিল্পে অর্থ সরবরাহ করা হয়। এর মাধ্যমে সামরিক ও বেসামরিক শিল্প ও প্রযুক্তি একে অপরকে পুষ্টি যোগায়।

মিয়ানইয়াং শহরের সিনোভিড জাতীয় উচ্চপ্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটি উচ্চপ্রযুক্তির যান্ত্রিক সরঞ্জাম উত্পাদন করে। কোম্পানি'র পণ্যের সম্পূর্ণ স্বাধীন মেধাস্বত্ব রয়েছে। কোম্পানির প্রযুক্তি উচ্চ মানসম্পন্ন। এ ধরণের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি বেসামরিক শিল্পে ব্যবহৃত হয়। কোম্পানির চেয়ারম্যান ইয়ান হুই বলেন, মিয়ানইয়াং শহরে সামরিক ও বেসামরিক শিল্প সংযুক্তি কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কার্যালয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সামরিক শিল্পে অংশ নেওয়াকে সমর্থন করে। এ সম্পর্কে মিস্টার ইয়ান বলেন,

‘বর্তমানে চীনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা-ব্যবস্থা আছে। মিয়ানইয়াং শহরে আমাদেরকে সহায়তা করার বিশেষ সংস্থা গড়ে উঠেছে।’

সিনোভিড কোম্পানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নবায়ন ও উদ্ভাবন প্রতিষ্ঠানও বটে। কোম্পানির ৬০ জনেরও বেশি কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত কর্মী। প্রযুক্তির নবায়ন ও উদ্ভাবন কোম্পানির জীবনীশক্তি। এ সম্পর্কে ইয়ান হুই বলেন, ‘মিয়ানইয়াং চীনের একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শহর। শহরটির সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা খুবই ভালো। শহরটির কোনো কোনো সামরিক ও বেসামরিক শিল্পকে সংযুক্ত করার বিশেষ নীতি আছে। এ ছাড়া, শহরটি চীনের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে প্রতিভাবান ব্যক্তিবর্গকে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়। সেজন্য আমরা মিয়ানইয়াংয়ে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি।’

কিন্তু সিনোভিড কোম্পানি প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে অনেক কঠিন সময় অতিক্রম করেছে। এ সম্পর্কে মিস্টার ইয়ান বলেন, ‘কোম্পানি প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরে আমাদের বেশি অর্থ ছিল না। কিন্তু স্থানীয় সরকার আমাদের কোম্পানির ওপর গুরুত্ব দিতে থাকে। স্থানীয় সরকার আমাদের তিন বছরের খাজনা মওকুফ করেছে।’

ইয়ান হুই বলেন, স্থানীয় সরকারের সমর্থন ও সহায়তা ছাড়া তাঁরা ভালোভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা করতে পারতেন না। স্থানীয় সরকার ছোট ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে সহায়তা দেয়।

মিয়ানইয়াং শহর প্রতিষ্ঠানগুলোকে নবায়ন ও উদ্ভাবনে উত্সাহ দিতে ৩৩টি নিয়ম প্রণয়ন করেছে এবং ৬ কোটি ইউয়ান আরএমবির তহবিল গড়ে তুলেছে।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn