বাংলা

‘ঘুরে বেড়াই’-১ম পর্ব

CMGPublished: 2023-01-17 18:50:56
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘ঘুরে বেড়াই’-১ম পর্ব

কী রয়েছে এই অনুষ্ঠানে

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর থেকে দু’পা ফেলিয়া’

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।

১। চীনের প্রাচীন শহর লিচিয়াং

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউননান প্রদেশের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য লিচিয়াং। আর এই স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টির একটি কেন্দ্রীয় শহর 'লিচিয়াং ওল্ড টাউন'। তুষারময় পর্বত, সতেজ বাতাস, স্বচ্ছ পানির স্রোত এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বাসিন্দাদের জন্য এ শহরকে বলা হয় রুপকথার রাজ্য।

৭ হাজার ৯৫৪ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই শহর। চীনের ৫৫ টি সংখ্যালঘু জাতি গোষ্ঠীর একটি নাসি জাতিগোষ্ঠী। আর এই নাসি জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত প্রধান শহর লিচিয়াং।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ মিটার উপরে অবস্থিত এই শহর। এ শহরের পশ্চিমে আছে গাছে আচ্ছাদিত সিংহ পর্বত, উত্তরে এলিফ্যান্ট ও গোল্ডেন রো পর্বত। আর দক্ষিণ-পূর্বে একদিকে বয়ে চলছে স্বচ্ছ পানির নদী এবং অন্যদিকে বিস্তীর্ণ উর্বর মাঠ।

থাং রাজবংশের সময়ে এই শহরে নির্মান করা হয় চা- ঘোড়া রাস্তা নামে পরিচিত প্রাচীন পথ । যা তিব্বত, সিচুয়ান ও ইউননান প্রদেশের বানিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীটিকে চাঙ্গা করতে পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

এ শহরে এখনো সুরক্ষিত আছে প্রাচীন বিভিন্ন ভবন। রয়েছে স্থানীয় জীবনধারা, স্থানীয় সংস্কৃতি। বহুজাতিক সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ও নাসি সংখ্যালঘু জাতির অগ্রগতির ফলে, এখানকার ভবনগুলো হান, বাই ও তিব্বতের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যে অন্তর্ভূক্ত করেছে সেরা নকশী শৈলীকে ।

এ শহরে রয়েছে অলি গলি রাস্তা। দুধারে প্রাচীন ধাঁচে ছোট ছোট ঘর। ঘরের দরজা ও জানালায় মানুষ ও প্রাণীর প্রাণবন্ত চিত্র খোদাই এখনো রয়েছে। প্রতিটি বাড়ির সামনের বাগান মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। এ শহরের দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ ফুটপাতে হস্তশিল্পের বিভিন্ন পণ্য ।

১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো থেকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয় প্রাচীন এই শহর।

২। চীন ভ্রমণকারী বাংলাদেশী নাট্যনির্মাতা শাহীন রিজভীর সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশী নাট্যনির্মাতা শাহীন রিজভী চীনে ভ্রমণ করেছেন বেশ কয়েকবার। তিনি তার ভাবনার বাইরে চীনকে আবিষ্কার করেছেন। ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে তিনি কুনমিং ও চীনের বেইজিং শহরের অভিজ্ঞতার কথা জানান ।

তিনি জানান, কুনমিং শহরের ফুলের মার্কেট ও কৃত্রিম জলপ্রপাত দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। শহরের ফুলের মার্কেটের নানা বাহারী ফুল এবং এই মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় তাকে চীন সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা দিয়েছে। তিনি এমন ফুলের বাজার আগে কখনো দেখেনি বলেও উল্লেখ করেন তার কোথায়।

শাহীন রিজভী, নাট্যনির্মাতা

কৃত্রিম জলপ্রপাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের তৈরি জলপ্রপাত এতো বড় এবং এমন দৃষ্টিনন্দন হতে পারে সেটা তার ধারণা ছিলো না।

নাট্যনির্মাতা চীনের খাবার সম্পর্কে বলেন, চীনের খাবার বিশ্বজুড়েই বিখ্যাত। সেখানকার ডাম্পলিং, স্যুপ, ফ্রাইড রাইস আমার বেশি ভালোলেগেছে”।

চীনের যারা ভ্রমণ করতে চান তাদের উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, “আমরা অনেকেই জানি ইসলামে বলা আছে জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে যাও। আর বলবো জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি ভ্রমণ করার জন্য চীন দেশে যাওয়া উচিত।চীন এতো সুন্দর তা সেই দেশে না যাওয়া পর্যন্ত বোঝা যাবে না। আমি মনে করি সবার একবার হলেও চীনে ঘুরতে যাওয়া উচিত”।

৩। অপরূপ সিনচিয়াংয়ের গল্প

চীনের উত্তর পশ্চিমের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত সিনচিয়াং তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পর্যটকদের বিমুগ্ধ করছে যুগ যুগ ধরে। সিনচিয়াংয়ে যেমন রয়েছে বিস্তৃত ভূমি তেমনি আছে তুষারঢাকা পর্বতমালা; আছে মরুভূমি, লেক, বনাঞ্চল। এখানে সুদূরপ্রসারী তৃণভূমিতে চড়ে বেড়ায় ভেড়া, ঘোড়া, উটের পাল। এখানকার মাঠজুড়ে রয়েছে তুলা ও টমেটোর ক্ষেত।

চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং। চীনের শিল্প, সাহিত্য চর্চায় অনকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে উইগুর মুসলিম অধ্যুষিত এই অঞ্চল।

উইগুর ছাড়াও কাজাখ, তাজিক, মোঙ্গল, আফগান, উজবেক, কিরগিজ, হুইসহ বিভিন্ন জাতির মানুষের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এই অঞ্চলের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ ।

মধ্যএশিয়ার সুপ্রাচীন সংস্কৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায় এখানকার কাশগড়, উরুমছিসহ বিভিন্ন শহরে। প্রাচীন সিল্ক রোডেরও একটি কেন্দ্র সিনচিয়াংয়ের উরুমছি ও কাশগড়।

সিনচিয়াংয়ের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল প্রদর্শনীর আয়োজন করে চীনের পর্যটন বিভাগ। সেখানে দর্শকরা মুগ্ধ হন এই স্থানের প্রকৃতির অনন্য রূপে।

সাংস্কৃতিক বৈচিত্রে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলের ইতিহাস মানুষের সামনে তুলে ধরতে সিনচিয়াংয়ের উরুমছিতে গড়ে তোলা হয় সিনচিয়াং জাদুঘর। উদ্বোধনের শুরু থেকেই দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই জাদুঘর। বাড়তে থাকে লোকসমাগম। এই জাদুঘরকে আরও সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে ঢেলে সাজানো হয় এর ভেতরের দৃশ্যপট।

চার বছর সময় নিয়ে নতুন করে সাজিয়ে তোলা এই জাদুঘরের আয়তন ১২ হাজার স্কয়ার মিটার থেকে বর্তমানে ৫০ হাজার স্কয়ার মিটারে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও সমৃদ্ধ করা হয় এই জাদুঘরকে।

২৪ হাজারেরও বেশি সাংস্কৃতিক নির্দশন যুক্ত করা হয়েছে এই জাদুঘরে। দ্বিতীয় দফায় সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শেষে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে এ জাদুঘর।

আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে আবারো কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সুস্থ থাকুন, শুভকামনা সবাইকে।

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn